যৌন আবেদন গিমি্ক হতে পারে না, পিকাসোর ছবি যা বলে
পাবলো পিকাসোর জন্ম ১৮৮১ সালে স্পেনের আন্দালুসিয়ার মালাগায়। তাঁর বাবা, গোঁড়া ক্যাথলিক, সেখানে ছিলেন আর্টের শিক্ষক এবং প্রতি রবিবার নিয়ম করে বন্ধুদের সঙ্গে গির্জায় মাস-ভজনে অংশ নিয়ে সোজা চলে যেতেন স্থানীয় বেশ্যালয়ে। উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের প্রথম দিকে, দক্ষিণ স্পেন এবং ফ্রান্সে এই ধরণের যৌন আচরণ পারিবারিকস্তরে এবং সামাজিকভাবে স্বীকৃত ছিল।
মালাগায় যৌনকর্মীদের সমাজ বহির্ভূত মনে করা হতো না, বরং তা স্পেনের বুলফাইটের মতনই সংস্কৃতির অংশ ছিল। বেশ্যালয় থেকে ফিরে সান্ধ্যমদের আড্ডায়, পাবলো পিকাসোর সামনেই, তাঁর বাবা ও বাবার বন্ধুরা কোন যৌনকর্মী নতুন এসেছে, কার স্তন বেশ বড়ো আর যোনি কেমন ইত্যাদি আলোচনা করতেন। ফলে যৌনতার প্রগাঢ় ছাপ কিশোর পাবলোর মনে ও চরিত্রে এমনই পড়েছিল যে বুড়ো বয়সেও তিনি নতুন-নতুন নারী সঙ্গমের অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। বাবার বন্ধু এক ডাক্তার পিকাসোর ছবি আঁকার প্রতিভা দেখে উপদেশ দিয়েছিল, ‘সারাজীবন যদি ভালো আঁকতে চাও তাহলে অবারিত নারীসংসর্গ করো আর রেড ওয়াইন খাও’। পিকাসো সারাজীবন তাই করে গেছেন। তিনি মনে করতেন, ছবি আঁকা হল ডায়রি লেখার আরেক উপায়।
মাদ্রিদে আর্ট স্কুলে পড়ার পর ১৯০০ সালে তিনি দুই স্প্যানিশ চিত্রকর বন্ধুর সঙ্গে প্যারি শহরে চলে যান, তখন তাঁর উনিশ বছর বয়স। বন্ধুদের একজন কারলোস কাসাগেমাস, জারমেইন নামে এক যুবতীর প্রেমে পড়েন, কিন্তু তার লিঙ্গ দাঁড়াত না বলে সম্পর্কে ভাঙন ধরল। তখন পিকাসো বন্ধুর সঙ্গিনীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়ে সঙ্গম সারলেন। তাঁর বন্ধু দুঃখে আর পরাজয়বোধে আত্মহত্যা করেন। এই ট্র্যাজেডির পর পিকাসোর ‘ব্লু পিরিয়ড’ আরম্ভ হয়। বন্ধুর বিদায় তাঁর ক্যানভাসে মনোভঙ্গ, দৌর্মনস্য আর বিষণœতা নিয়ে ফুটে ওঠে। এই সময়ের ছবিগুলোতে দেখা যায় বেশ্যা, ভিখারি, গরিব বৃদ্ধ আর মাতালদের। সেসময়ে ছবিগুলো বিক্রি হয়নি; পরে অবশ্য এই ছবিগুলোর দাম প্রচুর হয়ে গেছে। কিছু সময়ের জন্য পিকাসো প্যারি, মাদ্রিদ আর বারসেলোনায় আনাগোনা বজায় রাখেন। বার্সেলোনায় তিনি একজন স্ট্রিপটিজ যুবতীর প্রতি আকৃষ্ট হন, আর তাকে নিয়ে অনেকগুলো কৃশতনু
কমনীয় অথচ সুস্পষ্ট নগ্নিকার ড্রইং আঁকেন, যেগুলো বহুকাল পর্যন্ত কোনও প্রদর্শনীতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়নি।
১৯০৪ সালে তিনি পাকাপাকিভাবে প্যারিতে থাকা আরম্ভ করেন। নদীর ধারে একটা ভাঙাচোরা স্টুডিও ভাড়া নেন। এখানে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হলো ফারনান্দে অলিভিয়ার নামে একজন চিত্রকর ও মডেলের সঙ্গে, যার প্রধান আকর্ষণ ছিল তার বড়ো বড়ো স্তন, আগুনরঙা চুল আর ফিকে-সবুজ চোখ। মেয়েটি যেমন সুন্দরী ছিলেন, তেমনই উদারমনা আধুনিকা। ফারনান্দে ছিলেন মায়ের অবৈধ সন্তান আর বড়ো হয়েছিলেন মাসিমার বাড়িতে, যিনি ওনাকে একজনের সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইছিলেন। ফারনান্দে পালিয়ে প্যারি চলে গেলেন আর সেখানে একজনকে বিয়ে করলেন যে তাঁকে খুবই যাতনা দিত। তাকে ডিভোর্স না দিয়ে তিনি নাম পালটে গিয়ম অ্যাপলিনেয়ারের চিত্রকর গোষ্ঠীর মডেল হয়ে গেলেন। তার আগে তাঁর নাম ছিল অ্যামেলি লাঙ।
প্যারিতে বসবাসের আগে পিকাসো যুবতীদের দেখেছেন বেশ্যালয়ে কিংবা স্প্যানিশ ক্যাথলিক সমাজের সতীসাধ্বীদের। দুজনে পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হতে সময় লাগল না; ফারনান্দে পিকাসোর ভাঙাচোরা স্টুডিওতেই আশ্রয় নিলেন। এই ঘটনাটির ফলে পিকাসোর ‘ব্লু পিরিয়ডের’ সমাপ্তি ঘটল এবং আরম্ভ হল ‘রোজ পিরিয়ড’। ১৯০৪ থেকে ১৯০৬ পর্যন্ত ছিল তাঁর ‘রোজ পিরিয়ড’। এই সময়ে তিনি আঁকলেন ক্লাউন, কার্নিভালের যুবতী, মুক অভিনেতাদের। তারপর ১৯০৭ সালে আরম্ভ হয় তাঁর ‘আফ্রিকান পিরিয়ড’, এবং তিনি আঁকেন তাঁর বিখ্যাত পেইনটিং ‘অ্যাভিনিয়ো পাড়ার যুবতীরা’। ১৯০৫ সাল থেকে আমেরিকান চিত্র সংগ্রাহক গারট্রুড স্টিন এবং তার ভাই লিও, এবং ক্ল্যারিবেল কোন ও তাঁর বোন এটা কোন পিকাসোর কাজ নিয়মিত কেনা আরম্ভ করেন। তাঁদের প্রচারের দরুণ পিকাসোর বাজার প্রসারিত যায়। পিকাসো বলতেন, আমি প্রচুর টাকাকড়ির মালিক হয়ে গরিবের মতন থাকতে চাই।
১৯০৯ সালে ভাঙাচোরা স্টুডিও ছেড়ে পিকাসো একটি ভালো স্টুডিও নিলেন। ফারনান্দের সৌন্দর্যের কারণে পিকাসো যুবতীটিকে সবসময় আগলে রাখতেন, যাতে অন্য কোনো চিত্রকর তাঁকে ছিনিয়ে না নেয়। দুজনেই ছিলেন পজেসিভ, যার ফলে তাঁদের সম্পর্কে প্রায়ই ঝড় উঠতো। পরস্পরের প্যাশনও ছিল বাঁধভাঙা, আর তা কামড়া-কামড়ি খামচা-খামচিতেও পৌঁছে যেত। ফারনান্দে স্থানীয় অনাথ আশ্রম থেকে তেরো বছরের রেমন্দে নামে একটি মেয়েকে পোষ্য করে এনেছিলেন। কিন্তু তিনি দেখতে পেলেন পিকাসো রেমন্দের বেশ কিছু নগ্নিকা এঁকেছেন। আধুনিকা ফারনান্দে অমন দখলদারি চাপ সহ্য করতে না পেরে ১৯১২ সালে পিকাসোকে ছেড়ে চলে যান একজন ইতালীয় চিত্রকরের সান্নিধ্যে। পিকাসো প্রতিশোধ নিলেন ফারনান্দের নিকট বান্ধবী মার্শেল হামবার্টকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে; পিকাসো মেয়েটিকে ডাকতেন ইভা বলে। প্রেম প্রগাঢ় হয়ে উঠলেও পিকাসো সুযোগ পেলেই অন্যান্য নারীর সঙ্গেও শুচ্ছিলেন। ১৯১৫ সালে ইভা যক্ষ্মারোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯১৬ সালে মারা গেল। ইভার শুশ্র“ষা যতœ নিয়ে করতেন পিকাসো; তবে তাঁর রোগের দরুণ তিনি গ্যাবি নামে এক যুবতীর সঙ্গে শোয়া আরম্ভ করেন, যাকে দেখা যায় তাঁর এই সময়ের পেইনটিং আর স্কেচগুলোয়। পিকাসোর কাছ থেকে কোনো সাহায্য দাবি করতে পারেননি ফারনান্দে, কেননা আইনত তিনি আগেই আরেকজনের স্ত্রী ছিলেন। তাঁর আর্থিক অবস্থা সুধরোয় বহুকাল পরে, যখন তিনি পিকাসোর সঙ্গে তাঁর দিনগুলো নিয়ে ১৯৩০ সালে লেখেন ‘পিকাসো অ্যাণ্ড হিজ ফ্রেণ্ডস’। পিকাসো তখন চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, প্রিন্টমেকার, মৃৎশিল্পী, মঞ্চ-নকশাকারী, কবি ও নাট্যকার, এবং কোলাজ -উদ্ভাবক হিসাবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। তিনি বলতেন, যাকিছু তুমি চিন্তা করো, তাই-ই বাস্তব।
সেই সময়ে কবি জাঁ ককতো পিকাসোকে ডাক দিলেন রোমে রাশিয়ান ব্যালের জন্য দৃশ্য আঁকতে, পোশাক ডিজাইন করতে এবং সেট তৈরি করতে। পিকাসো ওলগা কোখলোভা নামে এক ব্যালেরিনার প্রেমে পড়লেন। তাকে রাজি করাবার জন্য প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল পিকাসোকে; কোখলোভা ছিলেন রাশিয়ান এবং তার মা চাননি যে তার মেয়ে একজন বিদেশিকে বিয়ে করুক। কোখলোভার মাকে মানিয়ে নেবার জন্য পিকাসো কোখলোভার একটি পেইনটিং এঁকে তাঁর মাকে উপহার দেন। শেষে ১৯১৮ সালে ওলগা কোখলোভা প্রথমে তাঁর লিভইন সঙ্গিনী হন আর তারপর রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চে পিকাসোকে বিয়ে করেন, যদিও পিকাসো ঈশ্বরে বিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। তাঁদের বিয়েতে সাক্ষী ছিলেন জাঁ ককতো এবং ম্যাক্স জেকব।
প্রথমদিকে তাঁদের সম্পর্ক ভালোই ছিল, ক্রমে দুজনের আভিজাত্যের পার্থক্য থেকে অবনিবনা। ওলগা কোখলোভা ছিলেন বুর্জোয়া এবং ঈর্ষাকাতর; আর পিকাসো ছিলেন মালাগার সাধারণ ক্যাথলিক পরিবারে লালিত। পওলো নামে তাঁদের ছেলে হল, যাকে পিকাসো ভালোবাসতেন। ছেলের জন্ম ছিল তাঁর আঁকায় বাঁকবদল, এই সময় তিনি শিশুদের নিয়ে যে ছবিগুলো এঁকেছিলেন তা ‘মেটারনিটি’ সিরিজের। কোখলোভার দেহকাঠামো অনাকার্ষক হয়ে যাওয়ায় তাঁর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে থাকেন পিকাসো। ক্যারিয়ার আর দেহের কাঠামো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মনমরা ওলগা পিকাসোর এক বন্ধুকে বলেছিলেন, ‘এখন আমার জীবনে কেবল একটাই উদ্দেশ্য, আমার স্বামীর জীবনকে নরক করে দেয়া।’ অন্য যুবতীদের সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক তাঁর কানে প্রায় প্রতিদিনই আসতো। ক্রমে ওলগা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পিকাসোর আঁকায় দেখা দিতে লাগল বিদকুটে কুৎসিত ভাঙাচোরা নারী, তাঁর প্রথম বিবাহিত স্ত্রী।
ওলগা কোখলোভার নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরোবার সুযোগ পিকাসো পেয়ে গেলেন ১৯২৭ সালে। প্যারির রাস্তায় সতেরো বছরের ফর্সা সুন্দরী এক তরুণীকে দেখে তার হাত ধরে পিকাসো বললেন ‘আমার নাম পিকাসো, আমি তোমাকে চাই’। মেয়েটির নাম মারি তেরেসা ওয়ালটার এবং সে আগে পিকাসোর নাম শোনেনি। পিকাসোর বয়স তখন ছেচল্লিশ। পিকাসো মেয়েটির হাতে একটা ছোট্ট সোনার মূর্তি দিলেন, যার লিঙ্গ ওই মূর্তিরই মাপের। অন্য যুবতীদের সঙ্গে পিকাসোর শোবার সাধ মিটিয়ে দিল মেয়েটি। বহুকাল পরে পিকাসোর বিছানায় অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মারি তেরাসা সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তা ছিল ‘আতঙ্কজনক আর ধামসানির চূড়ান্ত।’ স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করা অসম্ভব হয়ে উঠলে ছেলেকে নিয়ে ওলগা পিকাসোর বাড়ি ছেড়ে দক্ষিণ ফ্রান্সে চলে যান এবং ডিভোর্সের মামলা করেন। পিকাসো ডিভোর্স ডিতে চাননি, তার কারণ ফরাসি আইন অনুযায়ী, বিবাহবিচ্ছেদ হলে স্ত্রীকে অর্ধেক সম্পত্তি দিতে হয়। প্রভূত বিত্তের মালিক তখন পিকাসো; তিনি ডিভোর্স দিলেন না। ওলাগার ছেলেকে পিকাসো নিজের গাড়ির ড্রাইভার হিসাবে ব্যবহার করতেন।
১৯৩৫ সালে মারি তেরেসা আর পিকাসোর একটি মেয়ে হয়, যার নাম তিনি রাখেন মায়া। মেয়ে হওয়ায় পিকাসো অত্যন্ত আনন্দিত হলেন, কিন্তু আরেকজন যুবতীর দিকে ঝাঁপিয়া পড়া থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না। ২৯ বছর বয়সী ডোরা মার-এর প্রতি আকর্ষিত হলেন, আর তার জন্য একটা আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করলেন। ডোরা মার সেসময়ে ছিলেন জাঁ রেনোয়ারের ফিল্মের স্থিরচিত্র ফোটোগ্রাফার। পিকাসোর সঙ্গে ডোরা মার-এর পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন কবি পল এলুয়ার। ডোরা মার পিকাসোর জীবনে আসার পর পিকাসো চেষ্টা করে গেলেন যাতে দুজনের কেউই জানতে না পারেন তাঁর জীবনে আরেকজনের উপস্থিতি। একদিন তাঁর স্টুডিওয় দেখা হয়ে গেল দুজনেরই। পিকাসো বললেন, দুজনের কে থাকবে আর কে যাবে, তা নিজেরা ঠিক করে নাও। দুজন যুবতীর চুলোচুলি মারামারি আরম্ভ হল তাঁর স্টুডিওয়। এই মারামারি পিকাসো ধরে রেখেছেন তাঁর ‘বার্ডস ইন এ কেজ’ পেইনটিঙে। ছবিটিতে একটি কালো পায়রা (ডোরা মার) লড়ছে শাদা পায়রার (মারি তেরেসা) সঙ্গে। কালো পায়রা জিতে গিয়েছিল। পিকাসো মারি তেরাসা আর মেয়ে মায়ার জন্য একটা আলাদা এবং ডোরা মারের জন্য আরেকটি ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিলেন।
‘গুয়েরনিকা’ এবং আরও অন্যান্য পেইনটিঙের ক্রমবিকাশের ছবি ডোরা মার তুলেছিলেন। গুয়েরনিকার যৎসামান্য অংশ এঁকেও ছিলেন তিনি। পিকাসোর পক্ষে বেশিদিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল না। তাঁর আঁকার বিষয়বস্তু একঘেয়ে হয়ে গেলেই তিনি প্যারির পথে যুবতীদের দিকে তাকিয়ে বেড়াতেন। ১৯৪৩ সালে তিনি দুজন সুশ্রী তরুণীকে দেখতে পেয়ে তাদের আহ্বান করলেন তাঁর স্টুডিওতে। এদের মধ্যে একুশ বছর বয়সী ফ্রাঁসোয়া জিলো নিজেও পেইনটার হতে চাইছিলেন, পিকাসোর খ্যাতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় ছিল। পিকাসো কয়েক মাস ধরে মেয়েটিকে জপাতে চাইছিলেন এবং শেষপর্যন্ত সফল হন। মেয়েটি তার আগে কারোর সঙ্গে শোয়নি। ডোরা মারের কানে যুবতীটির কথা যাবার পর তিনি ভেঙে পড়েন; ১৯৪৫ সালে ডোরা মারের মানসিক গোলমাল ধরা পড়ে। মনোবিদ জাক লাকাঁ তাঁর চিকিৎসা করেছিলেন। ডোরা মার আর কারোর সঙ্গ করেননি পিকাসোর পর, এবং বলেছিলেন, ‘পিকাসোর পর কেবল ঈশ্বর’।
ফ্রাঁসোয়াকে নিয়ে পিকাসো সময় কাটাতে চলে গেলেন ভূমধ্যসাগরীয় রিসর্ট অ্যানটিবায়। কিন্তু প্রায়ই ওলগা উপস্থিত হতেন অ্যানটিবায়। দুজন যুবতীর চুলোচুলি খামচাখামচি উপভোগ করতেন পিকাসো। ফ্রাঁসোয়া আর পিকাসোর ক্লদ নামে একটি ছেলে আর পালোমা নামে একটি মেয়ে হয়। পিকাসোর শুয়ে বেড়ানো ফ্রাঁসোয়ারও অসহ্য লাগত আর তার ফলে সারাদিন মনখারাপ থাকত। ফ্রাঁসোয়ার দুঃখিত চেহারা দেখে পিকাসো তাঁকে বলেছিলেন, ‘নারী হল দুর্দশা ভোগ করার যন্ত্র’। ফ্রাঁসোয়া কেবল তাঁর প্রেমিকা ছিলেন না, ছিলেন তাঁর সন্তানের মা, সংগঠক। পিকাসোর সঙ্গে কেউ কথা বলতে চাইলে তিনি বক্তব্য সুস্পষ্ট করে দিতেন, ছিলেন গৃহকর্ত্রী, আঁকিয়ে এবং শিল্প সমালোচক। ১৯৪৪ থেকে ১৯৫৩ পর্যন্ত তিনি পিকাসোর সঙ্গে ছিলেন; পরে বিয়ে করেন আমেরিকা ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ জোনাস সাল্ককে।
ফ্রাঁসোয়া জিলোর বুদ্ধিমত্বা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়ছিল পিকাসোর পক্ষে, কেননা তিনি চিরকাল আলিঙ্গনে পেতে চেয়েছেন তাঁর প্রতি আত্মনিবেদিত বশ্যতার অধীন নারী। ছাড়া পাবার সুযোগ পেয়ে গেলেন ১৯৫১ সালে জেনেভিয়েভ লাপোরতে নামে চব্বিশ বছরের এক যুবতী কবির সঙ্গে পরিচয়ে; পিকাসোর বয়স তখন সত্তর। বহুকাল আগে জেনেভিয়েভ যখন স্কুলে পড়ত তখন তার সাথে পিকাসোর পরিচয় হয়েছিল। খ্যাতিমান পিকাসোর বশ্যতা স্বীকার করতে সময় লাগল না জেনেভিয়েভের। কিন্তু খ্যাতির কারণেই জেনেভিয়েভকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখলেন তিনি, যাতে ট্যাবলয়েডগুলো তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে কেচ্ছাকাহিনি না ছাপে। তা সত্ত্বেও জেনেভিয়েভ ১৯৫৩ সালে তাকে ছেড়ে চলে গেলেন; সম্ভবত যতগুলো ছবি জেনেভিয়েভকে নিয়ে এঁকে ছিলেন তাতে জেনেভিয়েভের উদ্দেশ্যপূরণ হয়ে গিয়েছিল। ওই বছরেই জনৈক গ্রিক প্রেমিকের সঙ্গে পিকাসোর আস্তানা ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ফ্রাঁসোয়া জিলো। ১৯৫৪ সালে ক্যানসারে মারা গেলেন ওলগা। তাঁর মৃত্যুর দরুণ পিকাসো নতুন কাউকে বিয়ে করার জন্য মুক্ত বোধ করতে লাগলেন।
যৌনচাহিদার আঁশ তখনও পর্যন্ত মেটেনি পিকাসোর। ১৯৫৩ সালে তিনি তার প্রিয় মডেল জ্যাকলিন রোককে প্রেমিকা হিসাবে পেলেন। জ্যাকলিন ছিল সাতাশ বছরের। জ্যাকলিনকে ফুসলাবার জন্য তিনি তাঁর বাড়ির দেয়ালে একটা পায়রা এঁকে দিয়েছিলেন এবং জ্যাকলিন রাজি না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন তাকে একটি গোলাপ উপহার দিতেন। শেষপর্যন্ত জ্যাকলিন রাজি হলেন আর পিকাসোকে ১৯৬১ সালে বিয়ে করলেন। জ্যাকলিনের প্রায় চারশো পেইনটিং এঁকেছিলেন পিকাসো।
জ্যাকলিন যখন দুই বছরের তখন তার বাবা তার মাকে ছেড়ে চলে যান। শঁজে লিজের কাছে একটা ছোট্টো ঘরে থাকতে বাধ্য হন। কোনোরকমে সংসার চলত। জ্যাকলিনের যখন আঠারো বছর বয়স তখন তার মা মারা যান। ১৯৪৬ সালে আঁদ্রে হুতিন নামে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে বিয়ে করে তার সঙ্গে আফ্রিকা চলে যান জ্যাকলিন, কিন্তু চার বছর পর ফ্রান্সে ফিরে আসেন আর আত্মীয়ের পটারি কারখানায় চাকরি নেন। সেখানেই পিকাসোর সঙ্গে তার দেখা হয়।
জ্যাকলিন ছিলেন বেশ পজেসিভ; ফ্রাঁসোয়া জিলোর ছেলেমেয়ে আর নাতিদের বাড়িতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে পিকাসোর প্রোস্টেট ধরা পড়ল এবং লিঙ্গ দাঁড়ালেও, ওষুধের কারণে তাঁর বীর্য নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেল, সেই সঙ্গে তাঁর যৌনজীবন এবং আঁকবার দানবীয় শক্তি ফুরিয়ে যেতে লাগল। শেষ জীবনে, যৌনতাহীন, তিনি হয়ে গিয়েছিলেন প্রায় নির্জনবাসী, একা।
১৯৭৩ সালে নব্বুই বছরে মারা যান পাবলো পিকাসো। জ্যাকলিন ছিলেন তাঁর পাশে। নাতি পাবলিতো, অর্থাৎ ওলগা কোখলোভার ছেলেকে, শবানুগমনে আর দাদুকে শ্রদ্ধা জানাবার অনুমতি দেননি জ্যাকলিন; বিমর্ষ পাবলিতো এক বোতল ব্লিচ খেয়ে আত্মহত্যা করেন। পিকাসোর কবরের ওপর মারি-তেরেসার একটি মূর্তি রাখা হয়। মারি আর মেয়ে মায়াকে আর্থিক সাহায্য করতেন পিকাসো, তবু মারিকে তিনি বিয়ে করেননি। ১৯৭৭ সালে আত্মহত্যা করেন মারি। মারির নাতি, অর্থাৎ মায়ার ছেলে অলিভিয়ার উইডমায়ার পিকাসো ২০০৪ সালে তার বিখ্যাত দাদুর একটি জীবনী লেখেন, ‘পিকাসো: দি রিয়্যাল ফ্যামিলি স্টোরি’ নামে। ১৯৮৬ সালে নিজেকে গুলি মেরে আত্মহত্যা করেন জ্যাকলিন। মারি তেরেসাকে নিয়ে আঁকা তাঁর ‘নিউড ইন ব্ল্যাক আর্মচেয়ার’ ১৯৯৯ সালে পঁয়তাল্লিশ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি হয়েছে।
নারী ছাড়া জীবন কাটানো পিকাসোর পক্ষে অসম্ভব হলেও, তাঁর নারীদের আদর, যতœ, ভালোবাসা এবং ক্যানভাসে অমরত্ব দেয়া সত্ত্বেও, পিকাসো যে নারীকেই ভালোবেসেছেন তাঁর জীবনে এনেছেন যৎপরোনাস্তি দুঃখ আর দুর্দশা। পিকাসো বলতেন নারীর যোনি থেকে জন্ম দেবার ক্ষমতার মতনই শিল্পী তার ব্রাশের লিঙ্গ দিয়ে ক্যানভাসে ছবি সৃষ্টি করে। ডোরা মার একবার পিকাসোকে বলেছিলেন, ‘শিল্পী হিসাবে তুমি অপ্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারো, কিন্তু যদি নৈতিকতার কথা বলা হয়, তাহলে তুমি অত্যন্ত বাজে মানুষ’। পিকাসোর শিল্পী বন্ধুরা বলতেন যে পিকাসো ছিলেন ভ্যাম্পায়ারের মতন; তাঁর সঙ্গে সারাটা দিন আনন্দে কেটে যায়, কিন্তু দিনের শেষে বিদায় নেবার সময় নিজেকে ক্লান্ত নিঃশেষিত মনে হয়। অন্যের যৌবশক্তি সংগ্রহ করে তিনি আঁকায় নিয়োজিত থাকতেন। জন রিচার্ডসন বলেছেন, ডোরা মার পিকাসোর প্রেমিকা হবার আগে ছিলেন দার্শনিক গেয়র্গে বাতায়ের প্রেমিকা। অন্যান্য সুররিয়ালিস্ট নারীদের মতন তিনি জানতেন পিকাসোর সঙ্গ কেমনতর হতে পারে, তা সত্ত্বেও আকৃষ্ট হন, হয়তো তাঁর ক্যানভাসে অমর হবার আশায়।
স্ত্রী এবং লিভইন মিলিয়ে সাতজন নারী তাঁর জীবনসঙ্গিনী হয়ে বিভিন্ন সময়ে থাকলেও, তিনি তার মাঝেই অন্যান্য নারীর সঙ্গে একদিনের বা কয়েকদিনের যৌনসম্পর্ক পাতিয়েছেন। যখন কাউকে পাননি তখন বেশ্যালয়ে ঢুঁ মেরেছেন। খ্যাতির পর যখন তিনি বৈভবশালী, তখন যুবতীদের আকৃষ্ট করার জন্য তাদের সঙ্গে পরিচয়ের মুহূর্তে একটি ছোট্টো সোনার মূর্তি উপহার দিতেন, যার লিঙ্গের মাপ বেশ বড়ো। অমন একটা মূর্তি তাঁর পকেটে প্রায় সবসময়েই থাকতো। দ্বিতীয় স্ত্রী জ্যাকেলিনের চোখের সামনেই তিনি আরেকটি যুবতীকে সিডিউস করার বেপরোয়া প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতেন। জ্যাকেলিন সে যুবতীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেও পিকাসো নতুন কাউকে আকৃষ্ট করার প্রয়াস করতেন। যুবতীটির চোখে চোখ মেলে তিনি বলতেন ‘আমার নাম পিকাসো’। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘নারীরা হলো ঈশ্বরী নতুবা পাপোষ’। আরেকবার বলেছিলেন ‘যা পবিত্র তা শিল্পবস্তু নয়’। সত্তর বছর বয়সেও তাঁর আসক্তি ছিল অদম্য এবং যৌনক্ষমতা ছিল বুলফাইটারের শক্তির মতন।
তাঁর জীবনী লেখক প্যাট্রিক ও ব্রায়ান জানিয়েছেন যে নারীর প্রতি পিকাসোর বিশ্বস্ততা বা আনুগত্যবোধ প্রায় ছিল না, এবং এই বৈশিষ্ট্য তিনি পেয়েছিলেন মালাগায় তাঁর বাবা আর বাবার বন্ধুদের থেকে। তাঁকে ক্যাথলিক হিসাবে শৈশবে ব্যাপটাইজ করা হয়েছিল, কিন্তু ঈশ্বরবিশ্বাসে আনুগত্য আর বিশ্বস্ততার প্রয়োজন হবে মনে করে তিনি অনীশ্বরবাদী হয়ে যান। খ্রিস্টধর্মের ‘অরিজিনাল সিন’ থেকে মুক্তি পাওয়া তাঁর যৌন জীবনের জন্য জরুরি ছিল। ব্রায়ান বলেছেন যে সারারাত জেগে ছবি আঁকার জন্য যে অমানুষিক পরিশ্রম পাবলো পিকাসো করতেন, তার কর্মশক্তি ও তেজোময়তা তিনি আহরণ করতেন নারীসঙ্গ থেকে; যুবতীদের নিংড়ে তিনি নিজের ছবিকে জীবন দিতেন। শিল্পকাজের ব্যাপারে পিকাসো ছিলেন বেপরোয়া, যেমন আঙ্গিকে ইচ্ছা, যে রঙে ইচ্ছা আঁকতেন বা ভাস্কর্য গড়তেন; কেউ সুরুচি-কুরুচির প্রশ্ন তুললে বলতেন, ‘আহ সুরুচি! কী যে এক ভয়াবহ অভিব্যক্তি! রুচি হল সৃষ্টিকর্মের শত্র“।’ বলতেন, শিল্প হল মিথ্যা যার মাধ্যমে সত্যকে পাওয়া যায়।
তেরো বছর বয়সে তাঁর বাবা ভালো চাকরি পেয়ে বারসেলোনায় থিতু হলে, পাবলোকে আর্ট স্কুলে ভর্তি করা হয়, আর এই সময় থেকেই পিকাসো বারসেলোনার বেশ্যালয়ে নিয়মিত যাতায়াত আরম্ভ করেন। তাঁর বাবার বন্ধুদের মতনই, তিনিও, নারীদেহের বৈভিন্নে আকৃষ্ট হতেন। তাঁর আলোড়ন-ফেলা প্রথম পেইনটিং, পাঁচজন নগ্ন যৌনকর্মীর অঙ্গভঙ্গী, ‘অ্যাভিনয়ো পাড়ার যুবতীরা’ বারসেলোনার যৌনকর্মীদের অভিজ্ঞতা থেকে আঁকা। তিনি নিজে ছবিটির নামকরণ করেছিলেন ‘অ্যাভিনয়ো পাড়ার বেশ্যারা’, কিন্তু শুভার্থিদের পরামর্শে নামটা পালটে দেন।
তিনি প্রায় ৫০,০০০ কাজ, বিভিন্ন মাধ্যমে, করে গেছেন সারা জীবনে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা সেই কাজের কেন্দ্রে। তাঁর ধারণা ছিল যদি কাজ করতে না থাকেন, তাহলে বুড়ো হয়ে যাবেন। আর যাতে দেহ বুড়ো হয়ে না যায়, সেকারণেই নারীর প্রয়োজন। পুরুষরা যখনই দেখা দিয়েছে, তারা তাঁর আত্মপ্রতিকৃতি, জোয়ান বা বুড়ো, দাড়িসুদ্ধু বা কামানো গাল, চিত্রশিল্পী বা সাধারণ মানুষ, শিল্পের ছাত্র বা গুরু। বহু ছবিতে তিনি উলঙ্গ, বয়সের অনুপাতে লিঙ্গের মাপ বড়ো। আয়নার সামনে উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে নিজের লিঙ্গকে খুঁটিয়ে দেখে তারপর আঁকতেন। তবে নিজেকে মাইন্যাটর রূপে ভাবতে আনন্দ পেতেন; মাইন্যাটর ছিল রূপকথায় বর্ণিত ক্রিট দেশের গোলকধাঁধার প্রহরায় নিযুক্ত ষাঁড়ের মাথা আর মানুষের দেহযুক্ত দানব, যাকে শান্ত করার জন্য কুমারী যুবতীদের উপহার দেয়া হতো। পিকাসো মনে করতেন তাঁর শিল্পকর্মের জন্য নারীকৌমার্যের প্রয়োজন, কেননা ‘যৌনতা আর শিল্পে পার্থক্য নেই’, তাঁর নিজের লিঙ্গের মতনই তাঁর ব্রাশটাও শাদা ক্যানভাসের ওপর লিঙ্গের কাজ করে। তিনি বলতেন যে আমরা বুড়ো হই না, আমরা পরিণত হই। তাঁর প্রচুর কাজ, আর নারীসঙ্গর জন্য প্যারির একটা মহল যে তাঁকে হিংসে করে তা জানতেন, তাই বলতেন, নিজেকে প্রিয়পাত্র করে তোলার চেয়ে ঘৃণার পাত্র করে তোলে অত্যন্ত কঠিন।
২০০১ সালে মনট্রিয়ল মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টে তাঁর তিনশো পঞ্চাশটি কাজ নিয়ে ‘পিকাসো ইরটিক’ প্রদর্শনী দেখার পর চিত্র সমালোচক পিটার শেলদাহল ‘দি আর্ট ওয়র্ল্ড’ পত্রিকায় ‘পিকাসোজ লাস্ট’ শিরোনামে আলোচনায় লিখেছিলেন যে, ‘তাঁর প্রতিটি ছবিই নোংরা, তাদের মূল লালসায় প্রোথিত এবং ছবিগুলো সেই আহ্লাদের উৎসব; তাতে প্রেমের কোনো উপস্থিতি নেই, রোমান্সের তো একেবারেই নেই।
যে ছবিগুলোয় তিনি সূক্ষ্ম, তাতেও তাঁর দক্ষিণ স্পেনিয় ইশারা বাদ যায়নি। সঙ্গিনীদের সঙ্গে তাঁর যৌনসম্পর্ক প্রভাব ফেলেছে তাঁর ছবিগুলোয়; একই রমণীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক আলগা হয়ে গেলে, তার শরীর ঢলে গেলে, কথাবার্তা কটু হয়ে উঠলে, পিকাসো তাকে দানবীর মতন চিত্রিত করেছেন। তাঁর যৌনতার শোষণশক্তি এতো প্রখর ছিল যে সাতজন সঙ্গিনীর মধ্যে দুজনের মাথা খারাপ হয়ে যায় আর দুজন আত্মহত্যা করেন। তিনি ছিলেন পরস্পরবিরোধী আচরণের মানুষ। কখনও তিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল আবার কখনও স্বার্থপর, পীড়নকারী আর উদ্ধত। প্যাট্রিক ও ব্রায়ান লিখেছেন যে নারীর সঙ্গে তার ব্যবহার দোল খেয়েছে দুই বিপরীত ধরণের আচরণে, কখনও ঘৃণা করেছেন, আবার কখনও গভীরভাবে ভালোবেসেছেন। কিন্তু ভালোবাসার সময়গুলো সাময়িক। তার কারণ অন্য নারীর প্রতি তাঁর আকর্ষণ। নারীসঙ্গ, অনেক সময়ে
একাধিক, ছাড়া তিনি দিনেরবেলা সময় কাটাতে পারতেন না।
সঙ্গিনী হবার শর্তও ছিল তাঁর। যুবতীটিকে হতে হবে তাঁর চেয়ে বেঁটে এবং অনুগত। আর অমন যুবতী পাওয়া কঠিন ছিল, কেননা পিকাসোর উচ্চতা ছিল পাঁচ ফিট চার ইঞ্চি। নারীর দাপট তিনি সহ্য করতে পারতেন না, এমনকি সঙ্গমের সময়েও নয়। বিছানায় নারী দাপুটে হলে, তিনি হয়ে উঠতেন প্রায় নির্দয়। মালাগায় থাকাকালীন তাঁর চরিত্রে এই জেকিল-হাইড বৈশিষ্ট্য সেঁদিয়ে গিয়েছিল। নারীরা যে কেবল সুবিধাদান এবং আনন্দের জন্য-এই ধারণা তাঁর জীবনযাপনে তো বটেই, তাঁর শিল্পকর্মেও প্রতিনিয়ত কাজ করে যেত। শৈশবের দারিদ্র্যের আতঙ্কও বয়সকাল পর্যন্ত ঘিরে থাকত তাঁকে এবং বিভিন্ন নারীর কোলে মায়ের আশ্রয় খুঁজে ফিরতেন। তাঁর বাবার পদবি রুইজ, কিন্তু তিনি তাঁর মায়ের নাম পিকাসো গ্রহণ করেছিলেন।
ধনী হবার পর অন্যদের সাহায্য করতেন। বাড়িতে একটা ট্রাঙ্কে কাঁচা ব্যাংকনোট ঠাশা থাকত। কিন্তু যদি মনে হতো তাঁর টাকাকড়িতে কেউ নজর দিচ্ছে, তাহলে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলতেন, আর সে যদি যুবতী হতো তাহলে তাকে কুৎসিতভাবে তাঁর ক্যানভাসে মেলে ধরতেন। তাঁর ক্যানভাসে নারীর যোনিকে এতরকমভাবে তিনি এঁকেছেন যা তাঁর আগে কোনও শিল্পী করেননি বলেই মনে করেন তাঁর জীবনীকাররা। সুররিয়ালিস্টরাও যোনিকে পেলব সুন্দর রঙিন করে উপস্থাপন করেছেন। পিকাসো তাঁর কোনো কোনো ক্যানভাসে যোনিকে চুলসহ ফাঁক করা আহ্বানমূলক ভাবে তুলে ধরেছেন।
Post a Comment