সিয়েরা লিওন: আফ্রিকার যে দেশে বাংলা ভাষায় কথা বলা হয়!


Odd বাংলা ডেস্ক: ওশেনিয়ার ছোট একটি দেশ পাপুয়া নিউগিনি । জনসংখ্যা কিংবা আয়তন, কোনোদিক থেকেই দেশটি ভারতের সমান বা কাছাকাছি নয়। মাত্র ৭.৬ মিলিয়ন বাসিন্দা নিয়েও এখানে ব্যবহৃত হয় ৮৫০টি ভাষা। পুরো বিশ্বে ভাষার ক্ষেত্রে এরকম বৈচিত্র্যের দেখা মেলে শুধুমাত্র এই দেশটিতেই। পাপুয়া নিউগিনিতে কীভাবে আসলো এত ভাষার সমাহার? সেই দেশের বাসিন্দারাই বা কীভাবে এত বিচিত্র ভাষা আয়ত্ত করলো? তবে পাপুয়া নিউ গিনির ভাষাগুলি সেখানকার লোকায়ত ভাষা। তবে এরই আর একটু দূরে আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশ সিয়েরা লিওন। আর এই দেশে কথা বলা হয় বাংলা ভাষাতে। অবাক লাগলেও এটা সত্যি।


আয়তন ৭১ হাজার ৭৪০ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা প্রায় ৬৯ লাখ। দেশটিতে বাস করে ১৬টি ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, যাদের সবার নিজস্ব ভাষা ও সাংস্কৃতিক রীতিনীতি আছে। সাধারণভাবে অধিকাংশ মানুষ নিজেদের মধ্যে ইংরেজির সঙ্গে স্থানীয় ভাষাগুলোর সম্মিলনে সৃষ্ট ক্রিও নামের একটি সংকর ভাষায় ভাবের আদান-প্রদান করে থাকে। সরকারি ভাষা ও শিক্ষার মাধ্যম বাংলা এবং ইংরেজি। ভাবতেও অবাক লাগে তাই না। পশ্চিমবঙ্গ বা বাংলাদেশের থেকে হাজার মাইল দূরে আফ্রিকা একটি মহাদেশের মানুষ অনবরত বাংলা ভাষাতে কথা বলে চলেছে।
সিয়েরা লিওনের কয়েকটি মেয়ে রবীন্দ্র সংগীত গাইছে, Image Source: Google


কীভাবে সিয়েরা লিওনের সরকারি ভাষা বাংলা হলো সেটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ঠিক ১৯৬১ সালে। সেবছর দেশটি স্বাধীনতা অর্জন করে। স্বাধীনতা লাভের পর বেশ ভালোভাবেই দিন পার করছিল দেশের মানুষগুলো। কিন্তু ভয়াবহ পরিস্থিতি শুরু হয় তার প্রায় ৩০ বছর পর। অশান্ত পরিস্থিতি থেকে আস্তে আস্তে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত হয় দেশটি। মূলত, তৎকালীন সরকারের দুর্নীতি ও প্রাকৃতিক সম্পদের অব্যবস্থাপনার ফলে সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধ বাধে। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশটিতে ধংসযজ্ঞ চলে।
 

পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো সিয়েরা লিওনের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হলে ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ সিয়েরা লিওনে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে যোগ দেয়। বাংলাদেশ থেকে ৭৭৫ জন সেনার প্রথম দলটি সিয়েরা লিওনের দক্ষিণ অঞ্চলে লুঙ্গি নামক স্থানে দায়িত্ব নেয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে আরো সেনা সিয়েরা লিওন যান এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে বাংলাদেশের প্রায় পাঁচ হাজার ৩০০ জন সেনা একত্রে দেশটিতে কর্মরত ছিলেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার পর বাংলাদেশ দল ২০০৫ সালে ফিরে আসে। সর্বমোট প্রায় ১২ হাজার সেনা সিয়েরা লিওনে দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সেনাদল তাদের নিয়মিত সামরিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরিয়ে আনার জন্য বিদ্যমান বিভিন্ন জাতির মধ্যে আস্থা ও নিরাপত্তাবোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সাধারণ সেনারা ইংরেজী ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও ব্যবহার করতে থাকেন। বাংলা ভাষা স্থানীয় লোকজনের অপরিচিত হওয়ায় তাদের ধৈর্যের সঙ্গে তা শেখাতে শুরু করেন। সাধারণ মানুষ বাংলা ভাষাকে গ্রহণ করে খুব আগ্রহের সঙ্গে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে তারা বাঙালী সংস্কৃতির পরিচিত হতে থাকে।
 
সিয়েরা লিওনের ছাত্রছাত্রীরা গাইছে "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো", Video Source: Youtube

ব্যাস আর কি। বাঙালি যেখানেই যায় সেখানে গিয়ে আরও বাঙালি তৈরি করে ফেলে। অবাক লাগলেও এটা সত্যি। ২০০২ সালের মধ্যে দেশটির যে জায়গাগুলোতে বাংলাদেশি সেনাদল ছিল, সেখানেই স্থানীয়রা বিশেষত তরুণ-তরুণীরা বাংলায় কথা বলতে পারছে। বিভিন্ন সভায় স্থানীয়রা বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে শুরু করে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয়দের বাঙালী নাচ ও গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ সেনাদলের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষা জনপ্রিয়তা পায়। স্থানীয়রা কাজ চালানোর মতো বাংলা ভাষা শিখে নেয়ার ফলে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং দেশ পুনর্গঠনে বাংলাদেশ সেনাদল অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যায়।

বাংলা হচ্ছে সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় দাপ্তরিক ভাষা।  একজন বাঙালি হিসেবে আমাদের অন্তত এই বিষয়ে গর্ব অনুভব করা উচিত।


[এরকম আরও নানান ও অজানা তথ্যের সন্ধান পেতে পড়ুন oddbangla.com] 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.