১০০০ টাকার বিনিময়ে মিলছে শিশু কৃতদাস, মার ও যৌন নির্যাতন যাদের নিত্য সঙ্গী
হাত দুটো কেটে গেলেও জাল ছাড়াতে হচ্ছে এই শিশুকে, Image Source: Google |
দাসত্ব বড়োই ভয়ংকর, দাসত্বের কোপে পড়ে অনেক মানুষেরই জীবন বিপন্ন পর্যন্ত হয়। ভারত থেকে যাঁরা দুবাই যাত্রা করেন তারাও এক প্রকার দাসত্বই পালন করে থাকেন। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ভল্টা লেকের জলরাশি শিশুদের কলকাকলিত মুখরিত হয়ে ওঠে। তবে এই কলকাকলি আনন্দের নয়, বিষাদের। শিশুদের মধ্যে একজনের নাম আদম। সে একজন দলনেতাও বটে। আদম ও তার সাথে আরও পাঁচ শিশু লেকের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর ঘানার মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত ভল্টা লেকের সবুজ ঘাসগুলো তাদের দীর্ঘদিনের দুঃখ গাঁথার সঙ্গী। এই ছয় শিশু ঘানার বিভিন্ন শহর থেকে, বিভিন্ন সময় এখানে এসেছে। কিন্তু একটি বিষয়ে তাদের সবার মিল রয়েছে। আর তা হলো, তারা সকলেই এক মুনিবের অধীনে এমন আরও অনেক শিশু এই লেকের বুকে বেড়ে উঠছে। সারাদিন মাছ ধরা তাদের কাজ। দু’বেলা খাবারের বাইরে তাদের কোনো পারিশ্রমিক নেই। অর্থাৎ তারা সকলে ‘শিশু ক্রিতদাস’। বয়স সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আদম কিছুই বলতে পারে না, তবে তার চেহারা দেখে অনুমান করা যায়, তার বর্তমান বয়স ১২ এর কাছাকাছি। আদম প্রায় ৩ বছর যাবত স্যামুয়েল নামক এক মৎস্য ব্যবসায়ীর নৌকায় কাজ করছে। তারা সবাই তাকে ‘মুনিব’ বলে সম্বোধন করেন। এই দাস জীবন অনেক অনেক কষ্টের। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, এই ভল্টা লেকে আদমের মতো আরও প্রায় ২০,০০০ শিশু মাছ আহরণের কাজে নিয়োজিত আছে এবং তারা সকলে কোনো না কোনো মনিবের অধীনে দাসত্বের জীবন অতিবাহিত করছে।
বিরাট জলরাশির মাঝেই ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরছে এই শিশুরা, Image Source: CNN |
অধিকাংশ শিশু কয়েকশ মাইল দূর থেকে পাচারের শিকার হয়ে এখানে এসেছেন। যাদের জন্ম অত্যন্ত গরীব পরিবারে। স্বল্প কিছু টাকার লোভে পিতা-মাতা তার সন্তানকে পাচারকারীদের হাতে তুলে দেন। পাচারকারীরা গড়ে ২৫০ ডলারে এসব শিশুদের ক্রয় করে; যা এসব অঞ্চলের একটি গাভীর দামের সমান।
এই সংবাদ পেয়ে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আদম ও তার পাঁচ সহযোগীর দৈনন্দিন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের পিছু নেয়। এতে দেখা যায়, সকাল হওয়ার আগেই তাদের কাজ শুরু হয়। কাঠের তৈরি একটি নৌকায় করে তারা মাছ ধরতে যায়। একজন যুবক নাবিকের ভূমিকা পালন করে। সে নৌকার ইঞ্জিনে স্টার্ট দেয়; জলে দুলতে দুলতে ক্রমান্বয়ে নৌকাটি লেকের নির্দিষ্ট স্থানের দিকে এগিয়ে যায়।
পৃথিবী জুড়ে আজ আমরা সভ্যতার ধ্বজা বয়ে নিয়ে বেরাচ্ছি। কিন্তু সভ্যতার প্রদীপের নিচটাই যে অন্ধকার। এই শিশুগুলি কাল যদি আপনাকে বা আমাকে বলে, তাদের জীবনকে এভাবে শেষ করার জন্য দায়ি আমরাই তখন কী উত্তর দেবেন। ভল্টা লেকের ওই শিশুদের অবিলম্বে দরকার আন্তর্জাতিক মহল থেকে সাহায্যের। ওদেরও যে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে।
Post a Comment