মসুল: ইসলামিক স্টেটের চরম ধ্বংসলীলা, মৃতদেহগুলিকে মজুত রাখতো গুদাম ঘরে
[এই আর্টিকালে ব্যবহৃত বেশ কিছু ছবি সংবেদনশীল। পাঠক নিজ দায়িত্বে পড়বেন।]
Odd বাংলা ডেস্ক: ইরাকের মসুলে নিজেদের খেলাফত ঘোষণা করেছিলো চরমপন্থী সংগঠন ইসলামিক স্টেট। দীর্ঘ প্রায় ন’মাস ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ২০১৭ সালের ৯ জুলাই তাদেরকে সেখান থেকে হঠাতে সক্ষম হয় ইরাকি বাহিনী। টিভির সামনে বসে এ সংক্রান্ত খবরগুলো দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলো মসুল থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে থাকা অনেকেই। কারন তাদের সেই বাড়ি, তাদের বাসস্থান সবই খোয়াতে হচ্ছিল এই ইসলামিক স্টেটের হাতে পড়ে। মৃত্যুর সেখানে কোনো কারন দরকার হতো না। মায়ের চোখের সামনেই তাঁর সন্তানকে গুলি করে মেরে ফেলা পর্যন্ত হতো। সেই কয়েক বছর ইসলামিক স্টেটের ক্ষমতার মধ্যে তাঁরা সব সময় আতঙ্কে থাকতেন। ইরাকি বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ততা আছে এমন পরিবারগুলোর সাথে আইসিসের সদস্যরা কেমন আচরণ করছে, তা তাদের অজানা ছিলো না। বিশেষত নারীদের ধর্ষণ ও জোর করে বিয়ে করার খবরগুলো তাদের আরো বেশি মাত্রায় শঙ্কিত করে তুলেছিলো।
এককালে ইরাকে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর হার ছিলো বেশ আশাব্যাঞ্জক। ২০১৩ সালে ইউনিসেফের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, দেশটিতে তখন শিক্ষিত তরুণ জনগোষ্ঠীর হার ছিলো শতকরা ৮২ ভাগ! শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলগুলোতে সুযোগ-সুবিধার কোনো কমতি ছিলো না। শহরাঞ্চলের অর্ধেকের বেশি ছেলে-মেয়ে সেকেন্ডারি স্কুলে পড়াশোনা করতো। তাদের অনেকেরই স্বপ্ন ছিলো মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বিখ্যাত মসুল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবার, যেখানে তখন প্রায় ৩২,০০০ শিক্ষার্থী ও ৪,২০০ জন ফ্যাকাল্টি মেম্বার ছিলেন।
যুদ্ধ বিদ্ধস্ত মুসলের ছবি, Image Source: Vice |
আজ সেই ক্যাম্পাস দেখে চেনার উপায় নেই। জায়গায় জায়গায় নানা ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে আইসিসের কৃতকর্মের সাক্ষী হয়ে। টানা ৩২ মাসের দখলে তারা আস্তে আস্তে ক্যাম্পাস বন্ধ করার আয়োজন করে। শুরুতে শিক্ষকদের তারা বাধ্য করতো বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে। কেউ আসতে অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে শিরশ্ছেদ কিংবা গাড়ি চাপা দিয়ে মেরে ফেলতো। আস্তে আস্তে রাজনীতি ও দর্শনশাস্ত্রের মতো কোর্সগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে নিজেদের স্বার্থেই মেডিসিন, ডেন্টিস্ট্রি ও ফার্মেসি বিভাগগুলো চালু রেখেছিলো তারা। ২০১৫ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারগুলো আইসিস ব্যবহার করতে শুরু করে বিভিন্ন রাসায়নিক বোম ও সুইসাইড ভেস্ট তৈরির উদ্দেশ্যে। যদি কোনো নারী মেডিসিনে কোর্স না নিতো, তাহলে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতেও বাধা দেয়া হতো।
পঁচে যাওয়া একটি মৃত দেহ, Image Source: Vice |
সবচেয়ে সাংঘাতিক ছিল ইসলামিক স্টেটের মেম্বাররা কাউকে মারার পর তার সঙ্গে যেটা করতো। তাঁর মৃতদেহের সঠিক শেষ কৃত্য পর্যন্ত হতে দিত না তারা। কবরের কোনো বালাই ছিল না। একটু মাটি নসিব পর্যন্ত হয়নি অনেকের। একটা ঘরে ফেলে রেখে দেওয়া হতো সেই মৃত দেহগুলিকে। সে এক চরম নারকীয় দৃশ্য, ভয়ঙ্কর! আঁতকে ওঠার মতো।
যুদ্ধ শেষে মুসলে প্লেগের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কারন মৃতদেহগুলি পঁচে গোটা শহরটা দুর্গন্ধে ভরে ওঠে। মানুষ খেতে পারত না। মানুষ সব সময় অসুস্থ্য অনুভব করতো। যে ইসলাম শান্তির বাণী দেয় সেই ইসলামকে হাতিয়ার করেই ইসলামিক স্টেট যা করেছে তা সমালোচনার যোগ্য। সারা পৃথিবী জুড়ে প্রত্যেকটি দেশের উচিত এই ঘটনার চরম নিন্দা করা।
Post a Comment