বিনোদ মেহেরা: সত্যিই কি রেখাকে না পেয়ে মারা গিয়েছিলেন এই বলিউড নায়ক?



দেখতে অতি ভদ্র, নায়ক সুলভ চেহারা, পারফেক্ট হাসবেন্ড হওয়ার মতো একটা ব্যাপার ছিল তাঁর মধ্যে। কিন্তু কোনোদিনই পারফেক্ট হাসবেন্ড হতে পারেন নি বিনোদ। প্রেমে যখন পাগল তখন রেখাও তাঁকে অস্বীকার করলো। গোটা বলিউডে এটা ওপেন সিক্রেট যে রেখার সঙ্গে বিনোদ মেহেরার বিয়েও হয়ে গিয়েছিল, তাহলে কী এমন হলো যে রেখার সঙ্গে তিনি থাকতে পারলেন না। কিংবা রেখার সঙ্গে সংসার না করার আসল কারনটা কী?


রেখার সঙ্গে "ঘর" ছবিতে বিনোদ মেহেরা

সিনেমা জগতে আসার পর পরই প্রায় সমস্ত বিখ্যাত অভিনেত্রীদের সঙ্গে অভিনয় করে ফেলেছিলেন বিনোদ মেহেরা। এবং অভিনেত্রীরাও এই সুদর্শন যুবকের সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করতেন। সব রকম অভিনয়েই বেশ অভিজ্ঞ ছিলেন এই অভিনেতা। একটি বিশেষ শ্রেণীর ফ্যান ফলোয়িং তৈরি হয়েছিল এই অভিনেতার। একের পর এক প্রচুর সিনেমা করে যাচ্ছেন। কিশোর কুমারের গানে প্রচুর লিপ দিয়েছেন। এমন কিছু গান আছে, যেখানে সিনেমাগুলি না মনে থাকলেও ভারতীয় দর্শক মনে রেখেছেন গানটিকে। অনেকেই মনে করেছিল রোম্যান্টিক হিরোর ল্যুক নিয়ে আসা এই অভিনেতা বলিউডে বিশেষ ছাপ রাখবে। কিন্তু তাঁর প্রেম বা নারী আসক্তিই তাঁর ধ্বংসের কারন হয়ে দাঁড়ালো।
প্রথম স্ত্রী মীনার সঙ্গে বিনোদ মেহেরা, Image Source: Google
তাঁর জীবনে প্রথম ধাক্কাটি এসেছিল অভিনেত্রী রেখার কাছ থেকে। সবচেয়ে বেশি সিনেমা তিনি করেছিলেন রেখার সঙ্গেই। রেখা প্রথম থেকেই বিনোদকে তেমন গুরুত্ব দিতে নারাজ ছিলেন। কিন্তু পরে রেখাও বিনোদের কাছাকাছি চলে আসেন। দুজনের মধ্যে একটি ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি হয়।  দুজনেই একটা সময় বিয়ে করতে রাজি হয়। কিন্তু রেখার দক্ষিণ ভারতীয় পরিবার বিনোদের সঙ্গে তাঁর এই মেলামেশা কোনোদিন পছন্দ করতেন না। মনে করতেন যে রেখার যোগ্যতার সমতুল্য বিনোদ নন। তাই সামাজিক বিয়ে কোনো দিন হয়নি তাদের। তবে বলিউডে আজ শোনা যায় যে তাঁরা বিয়েও করেছিলেন। এদিকে রেখার সঙ্গে তখনও অমিতাভ বচ্চনের বিশেষ কোনো সম্পর্ক তৈরি হয়নি।


তবে বিনোদ বিয়ে করেছিলেন আরও ৩টি। প্রথম বিয়ে তাঁর হয় মায়ের পছন্দের মেয়ে মীনা ব্রোকার সঙ্গে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে খুব বেশিদিন ঘর করতে পারেন নি বিনোদ। ওদের ডিভোর্স হয়ে য।য়। দ্বিতীয় বিয়ে বিনোদ করেছিলেন সে সময়ের আরেক বিখ্যাত অভিনেত্রী বিন্দিয়া গোস্বামীর সঙ্গে। বিন্দিয়া তখন বলিউডের অনেক নায়কেরই রাতের ঘুম কেড়েছেন। আর তখনই তিনি বিয়ে করলেন বিন্দিয়াকে। কিন্তু বিন্দিয়া বিনোদের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে পারেনি। এদিকে রেখার সঙ্গে তখনও বিনোদের সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়। অবশেষে বিন্দিয়া বিনোদকে ছেড়ে চলে যান। এবং বিয়ে করেন বিখ্যাত ফিল্ম ডিরেক্টর প্রোডিউসর জেপি দত্তর সঙ্গে।

প্রথম স্বামী বিনোদ মেহেরা ও দ্বিতীয় স্বামী জেপি দত্তর সঙ্গে বিন্দিয়া গোস্বামী, Image Source: Google


বিনোদ মেহেরার শেষ স্ত্রীর নাম হলো কিরণ। সেই কিরণের সঙ্গেই নিজের জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন বিনোদ। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কিরণের সঙ্গেই ছিলেন বিনোদ। একে ওপরকে খুব ভালোবাসতেন তাঁরা দুজন।


এবার আসা যাক তাঁর মৃত্যু আসল কারনে। রেখার কারনে বিনোদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এই ধারনা একেবারেই ভুল। আসল কারনটা তাহলে বলি। ৮০-র দশকে যখন বিনোদের অনেক সম্পত্তি, টাকা-পয়সা হয়ে গিয়েছে, তখন তিনি একটি বিগ বাজেট সিনেমা শুরু করেন নিজের টাকা দিয়ে। সেই ছবিতে তিনি নায়ক হিসেবে নিয়েছিলেন ঋষি কাপুর ও অনিল কাপুরকে এবং নায়িকা ছিলেন শ্রীদেবী। এতজন স্টারকে নিয়ে হওয়া সিনেমাতে সমস্যা শুরু হয় ডেটস নিয়ে। ফলে ছবির স্যুটিং দেরি হয়ে গেল। কখনও স্যুটিং-এ শ্রীদেবী আসতেন না আবার কখনও ঋষি কাপুর আসতেন না। প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল। এই সিনেমার নাম ছিল গুরুদেব। রাতের পর রাত ঘুম আসতো না বিনোদের। বাজারে প্রচুর ধার-দেনাও হয়ে গিয়েছিল। এরই মাঝে একদিন হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান বিনোদ মেহেরা। সিনেমা মাঝ পথেই আটকে যায়। যদিও তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর তৃতীয় পক্ষের স্ত্রী কিরণ সিনেমাটা সম্পূর্ন করেন। এবং ১৯৯৩ সালে গুরুদেব রিলিজ করে।

বিনোদ মেহেরার শেষ ছবি গুরুদেবের পোস্টার, Image Source: Google

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.