OUIJA: প্ল্যানচেট, ভারতীয় তন্ত্র ও পশ্চিমী ভূত সংস্কৃতির মেলবন্ধন

 

 

Odd বাংলা ডেস্ক: মানুষের ভূত জীবন আছে। এখানে ভূত জীবন মানে অতিত জীবনের কথা বলছি না। এই ধরুন ছোটো থেকে আমরা যে ভূতের গল্প শুনি বা পড়ি তাতে এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। আপনি ভাবুন তো আপনার সন্তান এখন মামদো ভূতের কথা জানে? বা আপনি ছোটোবেলায় যে ভূতগুলোর কথা পড়তেন সেগুলি জানে আপনার ছেলে? জানে না। কারন ভূত সংস্কৃতিতে এসেছে বিরাট পরিবর্তন। তারই মাঝে এখন বাজার কাঁপাচ্ছে প্ল্যানচেট ও OUIJA বোর্ড।

 

হলিউডের সাড়া জাগানো ‘অরিজিন অফ ইভিল’ সিনেমাটি হয়তো অনেকেই দেখেছেন। অন্ধকার ঘরে তিন-চারজন বন্ধু মিলে হাতে হাত ধরে মৃত আত্মাকে আহ্বান করে, পরে তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে নেমে আসে সাক্ষাৎ এক শয়তান! যারা সিনেমাটি দেখেননি, তাদের অনেকেই হয়তো জানেন এভাবে আত্মাকে ডেকে আনার ব্যাপারটি। কেউ কেউ শখের বশে, কেউ কৌতূহল থেকে, কেউ আবার সত্যিকারের বিশ্বাস থেকে এভাবে মৃতদের আত্মার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে থাকেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগেও অতিপ্রাকৃত শক্তি বা ঘটনায় বিশ্বাস করে এমন মানুষের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। মূলত বিদেহী আত্মাদের ডেকে আনার প্রাচীন ও চমকপ্রদ পদ্ধতি ‘প্ল্যানচ্যাট' নিয়েই আমাদের আজকের এ আয়োজন। 

Image Source: Google

 

শুরুতেই একটি জিনিস পরিষ্কার করে নেয়া দরকার। প্ল্যানচ্যাট আর প্রেতসাধনাকে অনেকে একসাথে গুলিয়ে ফেলেন এবং দুটোকে একই পদ্ধতি বলে মনে করেন। এ দুটি মূলত ভিন্ন দুটি চর্চা। প্ল্যানচ্যাটে শুধুমাত্র মৃতদের আত্মাকে আহ্বান করা হয়ে থাকে বা তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। অপরদিকে, প্রেতসাধনা করে মূলত শয়তানের অনুসারীরা। তারা অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে এবং শয়তানের উপাসনা করে। প্রেতসাধকরা মূলত শয়তানের উপাসনার মাধ্যমে নিজেরা শয়তানের ন্যায় শক্তিশালী হতে পারবে- এ ধরনের বিশ্বাস থেকে চর্চা করে থাকে। অপরদিকে, প্ল্যানচ্যাটে কোনো ভিন্ন শক্তির উপাসনা হয় না। এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মৃতদের আত্মার সাথে যোগাযোগ স্থাপনের একটি চেষ্টামাত্র।

 

প্ল্যানচ্যাটের মাধ্যমে আত্মাদের ডেকে আনার ধারণাটি বেশ পুরনো। মূলত আঠারো শতক থেকেই প্ল্যানচ্যাট নিয়ে গবেষণা ও মৃতদের আত্মাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু হয়। ১৮৫৩ সালে অ্যালান কারডেক নামে এক ফরাসি ব্যক্তি সর্বপ্রথম আত্মাকে ডেকে আনার উপায় আবিষ্কার করেন বলে দাবি করেন। আত্মা নিয়ে বিজ্ঞানীদেরও যথেষ্ট কৌতূহল ছিলো বিধায় বিভিন্ন সময় আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গঠিত হয়েছিল একাধিক আত্মিক অনুসন্ধান কমিটি। ১৮৮২ সালে লন্ডনে গঠিত আত্মিক সমিতির সভাপতি ছিলেন খোদ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত প্রফেসর হেনরি সি জুইক। তার সহকারীদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আর্থার জে বেলফোর। পরবর্তীতে মৃত আত্মাদের সাথে যোগাযোগের এই চর্চা ছড়িয়ে পড়ে এশিয়া, আমেরিকাসহ আরো অনেক দেশে।

Image Source: Google

 

১৮৮৩ সালে ইউরোপীয় দেশগুলোতে সর্বপ্রথম আধুনিক প্ল্যানচ্যাটের গবেষণা ও ব্যবহার শুরু হয়। ফরাসি পরলোকগত তত্ত্ব বিশেষজ্ঞ এফ এস প্ল্যাঁশেত সারাজীবন আত্মার সঙ্গে জীবিত মানুষের যোগাযোগ ঘটানোর ব্যাপারে চেষ্টা করেছেন। তাই তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখা হয়েছে প্ল্যানচ্যাট। প্ল্যানচ্যাটের ধারণাটি আমেরিকাতে আসে উনিশ শতকের শেষদিকে। আমেরিকাজুড়ে তখন গৃহযুদ্ধ চলছিলো। প্রতিদিন মারা পড়ছিলো শত শত মানুষ। প্রতিনিয়ত কারো মা, বাবা আবার কারো আদরের ভাই-বোন মারা পড়ছিলো সেই যুদ্ধে। এ অবস্থায় মৃত আত্মীয়দের আত্মার সাথে যোগাযোগ করার জন্য প্ল্যানচ্যাটের প্রচলন হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস করা আমেরিকানদের অনেককেই তান্ত্রিকদের কাছে প্ল্যানচ্যাটের জন্যে ধর্না দিতে দেখা যায়। বাস্তবে আত্মা ডেকে আনা সম্ভব না হলেও আত্মীয় হারানোর শোকে কাতরদের বিশ্বাসকে ব্যবহার করে এই প্ল্যানচ্যাট ব্যবসা বেশ ভালোই জমে উঠেছিলো তৎকালীন আমেরিকায়।

আমরা এতক্ষণ প্ল্যানচ্যাটের ইতিহাস ও উত্থান জানলাম। এবার দেখে নেই প্ল্যানচ্যাটের মাধ্যমে কীভাবে আত্মাদেরকে ডেকে আনা হয়, কিংবা কীভাবে ডেকে আনার চেষ্টা করা হয়।

বোস্টন প্ল্যানচ্যাট

এই প্ল্যানচ্যাটে মূলত একটি সাদা বোর্ডকে ব্যবহার করে করা হয়। প্ল্যানচ্যাটের জন্য তৈরি বিশেষায়িত বোর্ডটি সাধারণত কাঠ কিংবা তামা দিয়ে তৈরি করা হয়। বোর্ডের দুদিকে ছোট ছোট ক্যাস্টরদানা রাখা হয়, যাতে বোর্ডটি সুবিধামতো চক্রাকারে ঘুরতে পারে। বোর্ডের মাঝখানে পেন্সিল ঢোকানোর জন্য ছোট একটি ছিদ্র থাকে। পেন্সিলটির তীক্ষ্ম দিকটি ছিদ্র ভেদ করে বোর্ডের নিচে রাখা কাগজ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এই কাগজেই মূলত আত্মার সাথে যোগাযোগের কাজটি লেখা হয়।

বোস্টন প্ল্যানচ্যাট সাধারণত বিজোড় সংখ্যক মানুষ নিয়ে করতে হয়। অন্ধকার একটি কক্ষে সবাই সবার হাতের আঙুল ছুঁয়ে চক্রাকারে উপবিষ্ট থাকে, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় সিয়ান্স বা প্রেতচক্র। তাদের মধ্য থেকে একজন মিডিয়াম হিসেবে থাকেন, যার মাধ্যমে অশরীরী আত্মাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়। মিডিয়ামের হাতে পেন্সিলটি আলতোভাবে ধরা থাকে। প্ল্যানচেটের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসার বিদেহী আত্মা সেই মিডিয়ামের দেহে ভর করে তার হাত ধরে প্রশ্নের উত্তরগুলো লিখিয়ে নেয়।

 

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.