মনরো, পুরুষের লালসাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন যে অভিনেত্রী



Odd বাংলা ডেস্ক: জন্মের পরেই তাঁর মা তাঁকে অস্বীকার করে। মেরিলিন মনরোর আসল বাবাকে সেটাও তাঁর মা কোনোদিন তাঁকে বলে দেননি। কোনো এক অজ্ঞাত পরিচয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মেরিলিনের মা। আর তারই সন্তান এই মেরিলিন। একটি পরিবারের হাতে নিজের সন্তানকে অনাথ বলে তুলে দিয়েছিলেন মেরিলিনের মা। আর সেই বাড়িতেই এক ব্যাক্তি ছোট্ট মেরিলিনকে শারীরিক শোষন করত। কিন্তু সেই মেরিলিনই একদিন পুরুষদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। একটা বারের জন্য সজ্জা সঙ্গীনি হিসেবে মেরিলিনকে পেতে মুখিয়ে থাকত ১৮-৫০ এর সব পুরুষ। এক লাস্যের দেবীতে পরিনত হয়েছিলেন এই নায়িকা।
কিশোরী অবস্থায় মনরো Image Source: Monroereport.com

গ্ল্যামার, সৌন্দর্য আর ক্যামেরার সামনে আবেদনময়ী উপস্থাপনা; মেরিলিন মনরোর জন্য হলিউডে যাত্রাটা ছিল স্বপ্নের মতো। ১৯২৬ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে জন্মগ্রহণ করেন হলিউডের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ আবেদনময়ী এই অভিনেত্রী। ক্যারিয়ারে তার যাত্রাটা হয়েছিল একজন মডেল হিসেবে। তারপর নজরে আসেন টুয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সের বেন লিয়নের; তারপরের যাত্রাটা সিনেমার জন্য একটি ইতিহাস। সিনেমার পর্দায় মনরোর আবির্ভাব ঘটতো একজন অভিনেত্রী এবং ফ্যাশন আইকন হিসেবে।
পৃথিবীর প্রথম ন্যুড আন্ডার ওয়াটার ফটোশ্যুট করেছিলেন মার্লিন মনরো, Image Source: Google


প্রতিনিয়ত পোশাকে চমক তৈরি করতে থাকা মনরোর জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। দর্শকরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করতো কখন মনরো নতুন কোনো আউটফিট নিয়ে সবার সামনে হাজির হবে! তার সবচেয়ে বিখ্যাত পোশাকটি ছিল সাবওয়েতে দাঁড়ানো অবস্থায় যখন বাতাস তার পোশাকটি নিয়ে দুষ্টুমি করছিল, আর সে হাত দিয়ে সেটা ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিল! বর্তমান সময়ে এসেও পোশাক আর আবেদনময়তার এমন মিশ্রণ কেউ তৈরি করতে পারেনি। হয়তো পারবেও না, এটা একান্ত মেরিলিন মনরোর সিক্রেট রেসিপি !
হলিউডের ইতিহাসের প্রথম নায়িকা, যিনি নিজের গোপনাঙ্গ সাহসিকতার সঙ্গে দেখিয়েছিলেন, Image Source: Google

তাঁকে নিয়ে কৌতূহলের এমনিতেই শেষ নেই। মাথা ঘুরিয়ে দেওয়া সৌন্দর্য আর অভিনয় দক্ষতার পাশাপাশি যৌনতার প্রতীক হিসেবে গোটা বিশ্বে ধারাবাহিক ভাবে চর্চা হয়েছে মার্কিন অভিনেত্রী মেরিলিন মনরোকে নিয়ে। সেই গল্পে যোগ হল আরও একটি গোপন তথ্য।‘মেরিলিন: দ্য প্যাশন অ্যান্ড প্যারাডক্স’ নামে তাঁর সাম্প্রতিক বইয়ে লয় ব্যানার দাবি করেছেন, নাতাশা লাইটেস নামে এক জার্মান মহিলা অভিনয়ের প্রশিক্ষণ দিতেন মনরোকে। সেই মহিলার সঙ্গে দু’বছর স্বামী-স্ত্রীর মতো জীবনযাপন করেছেন মনরো।

কলম্বিয়া পিকচার্সের ওই প্রশিক্ষকের সঙ্গে মনরো কাজ করেছেন দীর্ঘ সাত বছর, ১৯৪৮-১৯৫৫। তার মধ্যে দু’বছর নাতাশার সঙ্গে সমকামী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মনরো।

তিন বার বিয়ে করলেও মনরো কিন্তু নিজেই এক সময় বিভিন্ন অভিনেত্রীর সঙ্গে তাঁর সমকামী সম্পর্কের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে নাতাশার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি এত দিন অজানাই ছিল। ওই প্রশিক্ষকের লেখা একটি চিঠির সঙ্গে নিলাম হতে চলেছে মনরোর জিন্স, কিছু রত্ন, আর লম্বা ঝোলা দুল।

এবং সেই জিন্স নাকি ‘ডিয়ারেস্ট ফ্রেন্ড’ নাতাশাকে উপহার দিয়েছিলেন মার্কিন অভিনেত্রী। ওই চিঠিতে অবশ্য মনরোর সঙ্গে সমকামী সম্পর্কের কোনও উল্লেখ নেই।

তবে যে বছর মেরিলিন অতিরিক্ত মাদক সেবনের জন্য মারা যান, সেই ১৯৬২-তেই লাইটেস এক সাক্ষাৎকারে বিশদ জানিয়েছিলেন তাঁদের সম্পর্কের কথা।
 পরিচালক আর্থার তাকিয়ে রয়েছেন মেরিলিনের ক্লিভেজের দিকে, Image Source: Google


তাঁর সঙ্গে নাতাশার যে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে, তা কাছের বন্ধু এবং অভিনেতা টেড জর্ডনকে অকপটে জানিয়েছিলেন মেরিলিন। বলেছিলেন, তিনি নাতাশার শয্যাসঙ্গিনী। মনরো বলেছিলেন, “যাদের তুমি পছন্দ করো, তাদের সঙ্গেই তো যৌন সম্পর্ক হয়। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যে কি কোনও ভুল রয়েছে?”

নাতাশার সাক্ষাৎকার অনুযায়ী, মনরোর সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা ১৯৪৬-এ। সেই সময় মনরো মাত্র ২০। আর লাইটেসের কথায়, “তখন ও মোটেই সুন্দরী ছিল না। কথা বলতে পারত না ঠিক করে। কী ভাবে মুখ খুলতে হয়, তা-ই জানত না। সব কিছুতে ভয় পেত।”

লাইটেসের দাবি, ওর সঙ্গে থাকার সেই দু’বছর বাড়িতে বেশির ভাগ সময়েই নগ্ন হয়ে থাকতে পছন্দ করতেন মনরো। তাঁর মন্তব্য, “আমি এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। সব সময়েই বাড়িতে নগ্ন থাকত ও।”

কিন্তু এর পাশাপাশিই লাইটেসের পর্যবেক্ষণ, মনরো সাংঘাতিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করতেন। “ওকে যা যা ‘মেরেলিন মনরো, যৌনতার প্রতীক’ হিসেবে গড়ে তুলেছিল, সে সব হারানোর ভয়ে কুঁকড়ে থাকত ও।

পোশাক, মেক আপ, আদব-কায়দা এই সব ছাড়া কিছু ভাবতেই পারত না ও। মনে করত, যৌনতা ছাড়া আর কিছুই দেওয়ার নেই ওর। অথচ অদ্ভুত ভাবে যৌনতার প্রতি অসম্ভব ঘৃণা, ভয় ছিল ওর। ওকে কেউ ‘সেক্সি’ বললে ওর ভাল লাগত না।”

মেরিলিনের মৃত্যুর দু’বছর পরে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নাতাশা। কিন্তু ঘনিষ্ঠতার দিনগুলোয় শু্যটিংয়ের সময়েও অভিনয়ের শিক্ষিকাকে কাছছাড়া করতে চাইতেন না মনরো। “সেটের মধ্যেও ওর সঙ্গে থাকতে হত। ওর হাত ধরে থাকতাম।
নিজের বাড়িতে বেশিরভাগ সময় নগ্ন থাকতে পছন্দ করতেন মেরিলিন, Image Source: Google


মনরো নিজেই পরিচালককে বলতেন, আমার আরও একটু কাছে কি ও থাকতে পারে? পরিচালক বলতেন, হ্যাঁ কিন্তু উনিও যে ফ্রেমে চলে আসছেন!” কিন্তু নাতাশার দাবি, যে সব শটে মনরোর মাথা বা কাঁধ দেখা যেত, সে সব সময়ে তাঁর হাত শক্ত করে ধরে রাখতেন মার্কিন অভিনেত্রী। বলতেন, এই ভাবেই সাহস পাই।

শেষ পর্যন্ত মেরিলিনের দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু ঠেকানো যায়নি ঠিকই, কিন্তু তার আগেও একবার মনরোকে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন নাতাশা। এক দিন তিনি দেখেছিলেন, ঘুমের বড়ির শিশি নিয়ে বিছানায় শুয়ে মনরো। চুল অবিন্যস্ত। মুখটা ফ্যাকাশে। দৃষ্টি শূন্য। নাতাশা ছুটে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, “কী করেছ মেরিলিন?” মেরিলিনের উত্তর, “কিছু না।”

তখন ভয় পেয়ে তাঁর গালে বেদম জোরে চড় মারেন নাতাশা। জোর করে মুখ খুলিয়ে দেখেন, সবুজ মতো কী যেন দলা পাকিয়ে রয়েছে মুখে। “জানতাম না সেটা কী। কিন্তু ওর মুখ থেকে ওটা বার করে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। পরে জেনেছি, ১৬টা ঘুমের বড়ি খেয়ে ফেলেছিল ও।

ডাক্তার বলেছিলেন, ও মরেই যেত। ওই সময়ে নিজেকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল ও। নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিল,” বলেছেন তিনি।

নাতাশা মনে করতেন, তাঁর কাছে যৌনতার ঊর্ধ্বে কোথাও যেন শিশুর মতো স্নেহের জন্যও কাঙাল ছিলেন মেরিলিন। যিনি পরে নাতাশা সম্পর্কে বলেছিলেন, “মিস লাইটেস আমাকে বুঝতেন। আমি ওঁর কাছে ঋণী।”

 

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডিও মেরিলিনের সাথে জড়িয়ে গিয়েছিলেন

তখন কেনেডি রাষ্ট্রপতি হয়েছেন। চারিদিকে তাঁর ভক্তরা তখন কেনেডিকে একটুখানি দেখতে পাগল। কিন্তু কেনেডি তখন নিজের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে মেরিলিনের প্রেমে পাগল। মাঝে মাঝেই হোয়াইট হাউসে মেরিলিনের সঙ্গে দেখা যেত কেনেডিকে। এদিকে একথাও বলা হয় যে প্রেসিডেন্টের ভাই ববির সঙ্গেও নাকি মনরোর শারীরিক সম্পর্ক ছিল। গোটা আমেরিকা এই অবৈধ সম্পর্ককে রীতিমতো এনজয় করত এক সময়। এবং একটা সময় মেরিলিন তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ট এক সাংবাদিককে জানান যে প্রেসিডেন্ট কেনেডি নিজের স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে মেরিলিনকে বিয়ে করবেন । অন্যদিকে মেরিলিনের স্বামী আর্থারের সঙ্গেও তাঁর তখন কোনো সম্পর্ক ছিল না।  কিন্তু এসব ক্ষেত্রে যা হয়। মেরিলিনকে বিয়ে করেন নি কেনেডি। এদিকে মেরিলিন একা হতে থাকেন একটু একটু করে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কেনেডির সঙ্গে মেরিলিন মনরো, Image Source: Google

মেরিলিনের মৃত্যুর দায় কার?

মেরিলিন আত্মহত্যা করেছিলেন। অন্তত পোস্টমর্টেম রিপোর্টে সেটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু অনেকেই দাবি করেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আবার একদল বলেন যে প্রেসিডেন্ট মেরিলিনের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার পরেও তাঁকে অস্বীকার করেন। আর তাই মেরিলিন সেই দুঃখে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
পোস্টমর্টেমের পর মেরিলিনের মৃতদেহ, Image Source: Google
Blogger দ্বারা পরিচালিত.