ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে এই গ্রামে বংশ পরম্পরায় ভগবান শিবের দেখভাল করে মুসলিম পরিবার, ছড়ায় শান্তি-সম্প্রীতির বার্তা


Odd বাংলা ডেস্ক: বর্তমানে মানুষ এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে যেখানে মানুষে মানুষের মধ্যে কেবলই রয়েছে হিংসা, সাম্প্রদায়িক হানাহানি, ঘৃণা , ক্ষোভ। কিন্তু এইসবের মধ্যেও ব্রহ্মপুত্র নদ পেরিয়ে উত্তর গৌহাটির একজন মুসলিম ব্যক্তি কয়েকশো বছরের পুরনো একটি শিব মন্দিরে নিয়ত সেবা করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা। 

প্রায় কয়েক প্রজন্ম ধরে জনৈক মতিবর রহমানের পরিবার শহরের রঙমহল এলাকার ওই মন্দিরটির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। প্রায় সত্তরের দশক থেকেই এই মন্দিরের যাবতীয় দেখভালের দায়িত্ব সামলে এসেছেন মতিবরের পরিবার। ধর্মের বেড়াজাল অতিক্রম করে প্রতিদিন সকালে মন্দির চত্বর পরিষ্কার করা, ধুপকাঠি, মোমবাতি জ্বালিয়ে শিব ঠাকুরের আরাধনা করেন মতিবর। এরপর তিনি শ্রদ্ধা জাানন তাঁর স্বর্গত ঠাকুরদাকে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বহু মানুষ প্রতিদিন এই মন্দিরে আসেন এবং তাঁরা দেবতার চরণে পুজো নিবেদন করেন। পাশাপাশি যোগ দেন নাম সংকীর্তনেও। তবে এখানকার মহাদেব কেবল হিন্দুদের পুজোই নেন না, অসংখ্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও প্রতিদিন  এখানে আসেন। ভগবান শিবও এই বিষয়টি খুব পছন্দ করেন বলে জানান মতিবর। 

মতিবর আরও বলেন যে, তিনি আরও চান যে তাঁর চারপাশটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হোক। তাঁর অনুমতি ব্যতীত এখানে কোনও কিছুই সম্ভব নয়। তাঁর অনুমতী ছাড়া একটা গাছের ডালও এখান থেকে কেউ নিতে পারে না বলে দাবি করেন সাদা লম্বা কুর্তা, লুঙ্গি এবং টোপি পরিহিত মতিবর। তাঁর আরও দাবি শঙ্করদেব এবং আজান ফকিরের মানুষরা শান্তি এবং ভ্রাতৃত্বে বিশ্বাস করেন। 

প্রসঙ্গত অসমকে প্রায়শই 'শঙ্কর- আজান'-এর ভূমি বলেও নামাঙ্কিত করা হয়ে থাকে। ১৫-১৬ শতকের অসমীয়া বহুবিদ্যাজ্ঞ শঙ্করদেব এবং বাগদাদের সুফির প্রচারক আজান ফকির- দুজনেই তাঁদের গোটা জীবনটা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার মানুষের এক করার কাজে লাগিয়েছিলেন। 


মুসলিম পরিবারের শিবের উপাসনা করার পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, তাঁদের পূর্বপুরুষ স্বপ্নাদেশ দেয় ভগবান শিব। স্বপ্নে তিনি বলেন সেখানে তিনি বাস করতে চান। তারপর থেকেই সেখানে ভগবান শিবের দেখভাল করে আসছেন তাঁরা। তাঁর আরও বিশ্বাস তাঁর ছেলেরাও এই মন্দিরের দেখভাল করবে।   


Blogger দ্বারা পরিচালিত.