কলকাতার পিচকিরি হোটেল, যেখানে মাংসের ঝোল দেওয়া হতো পিচকিরি করে
Odd বাংলা ডেস্ক: বিষয়টা বেশ কয়েকবার গল্প হিসেবেই শুনেছিলাম। প্রথমে বিশ্বাস করতেই পারিনি। পরে এক বন্ধুর বাবার কাছে বিষয়টা সম্পর্কে বিস্তৃত ভাবে জানতে পারি। আসলে কলকাতা পত্তনের সময় থেকেই এখানে খাওয়ার হোটেলের চল শুরু হয়ে যায়। কারন ইংরেজদের আমলে এই কলকাতাতে প্রচুর অফিস-কাছারি ছিলো। এই অফিসগুলিতে মানুষ বিভিন্ন কাজে-কর্মে আসত। আর তখন তারা খেয়ে যেত এই হোটেলগুলিতে। এই হোটেলের অবশ্য ভাব-ভঙ্গিমা ছিল বিভিন্ন রকম। যেমন টাকা তেমন খাওয়া। আর তখন থেকেই উত্তর কলকাতার বেশ কিছু এলাকাতে দেখা যায় পিচকিরি হোটেল। শুনে মনে হতেই পারে যে এ আবার কেমন বিষয়।
আসলে এই হোটেলগুলিতে কর্মচারীর সংখ্যা ছিল কম। আর খদ্দেরের পরিমান ছিল বেশি। ফলে একবার ভাত, একবার ডাল, একবার সবজি দিতে আসবে কর্মচারী, সেটা সম্ভব ছিল না। ফলে হোটেল মালিকরা একটা সহজ পথ বেছে নেন। তারা যে চৌকিটাতে বসতো সেটার ঠিক নিচে ৩টি বালটি রাখতো। একটাতে ডাল, একটাতে মাছের ঝোল আর একটাতে মাংসের ঝোল রাখতো। এবার যে খদ্দের ডাল চাইতো তার পাতা তাক করে হোটেল মালিক নিজ আসনে বসেই পিচকিরি দিয়ে ডাল ছুঁড়তো। এবং অদ্ভুত নিশানা লাগনোর ক্ষমতা থাকতো এই হোটেল মালিকদের। ডাল গিয়ে সোজা পড়ত নির্দিষ্ট পাতাতেই। এবং খদ্দেররাও তখন ব্য়াপারটাতে অভ্যস্ত ছিল। তারা যখন শুনতো এবার ডাল ছোঁড়া হবে তখন তারা একটু সরে যেত নিজের পাতা থেকে। একই ভাবে মাংস ও মাছের ঝোলও দেওয়া হত পিচকিরি দিয়ে ছুঁড়ে।
১৮৮০ সালের বড়োবাজার এলাকা, এখানেই ছিলো সেই পিচকিরি হোটেল, Image Source: Google |
এখন যেখানে বড়োবাজার, সেই এলাকাতে কয়েক বছর আগেও এমন পিচকিরি হোটেলের অস্তিত্ব ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ার বাইরে এই হোটেলগুলিতে রান্না করত কিছু উড়ে (ওড়িশা) রান্নার ঠাকুর। আজ হোটেল মানেই তো শেফ। ঠাকুর বলে আর কিছু নেই। তবু কালের নিয়মে ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে কলকাতার এই পিচকিরি হোটেল।
তথ্যসূত্র: গোপাল ঝা (বড়োবাজার এলাকার পুরনো বাসিন্দা)
Post a Comment