জানেন আমেরিকা চেষ্টা করেছিল পারমানবিক বোমা মেরে চাঁদকে ধ্বংস করে দিতে!


Odd বাংলা ডেস্ক: পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে, সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধ যখন তুঙ্গে, তখন অন্তত একটি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল। সেটি হচ্ছে মহাকাশ বিচরণ। ১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন প্রথমবারের মতো মহাশূণ্যে তাদের স্পুটনিক স্যাটেলাইট প্রেরণ করে, তখন আমেরিকার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তারা সিদ্ধান্ত নেয়, নিজেরা যে সোভিয়েতের তুলনায় পিছিয়ে নেই, সেটা প্রমাণ করার জন্য তাদেরকেও বড় ধরনের কিছু একটা করে দেখাতে হবে।

এর কিছুদিন পরেই গণমাধ্যমে রিপোর্ট প্রকাশিত হতে শুরু করে, সোভিয়েত ইউনিয়ন অক্টোবর বিপ্লবের বর্ষপূর্তি উদযাপন করার জন্য ৭ নভেম্বর চাঁদের বুকে একটি হাইড্রোজেন বোমার বিস্ফোরণ ঘটনার পরিকল্পনা করছে। এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই, ৩ নভেম্বর সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাশূন্যে তাদের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট, স্পুটনিক-২ প্রেরণ করে। আমেরিকানরা রীতিমতো হতাশ হয়ে পড়ে। নিজেদের স্যাটেলাইট প্রেরণ করতে তাদের আরও কিছু সময় লাগবে, কিন্তু তার আগেই কিছু একটা ঘটিয়ে দেখানোর জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে তারা। আর চাঁদের বুকে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটানো ছাড়া পুরো দুনিয়াকে দেখানোর মতো সহজ প্রকল্প আর কী হতে পারে?

মহাশূন্যে পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটালে পৃথিবীর পরিবেশের উপর তার কীরকম প্রভাব পড়বে, এটা নিয়ে একেবারে শুরু থেকেই আলোচনা হয়ে আসছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির আর্মার রিসার্চ ফাউন্ডেশন ১৯৪৯ সাল থেকেই এ বিষয়ে গবেষণা করে আসছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে মহাকাশ জয়ের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ১৯৫৮ সালের মে মাসে মার্কিন বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে সংগঠনটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়, চাঁদের বুকে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে তার প্রভাব পৃথিবীতে কী হতে পারে, সে বিষয়ে গবেষণা করার জন্য।

প্রকল্পটির নাম দেয়া হয় প্রজেক্ট এ১১৯। অত্যন্ত গোপন এই প্রকল্পটির কথা যখন ২০০০ সালে ফাঁস হয়, তখন এর প্রধান বিজ্ঞানী স্বীকার করেন, এটি ছিল মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি পাবলিক রিলেশান্স স্টান্টের প্রচেষ্টা। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল চাঁদের বুকে এমন একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটানোর সম্ভাবনা যাচাই করা, যা পৃথিবীর যেকোনো স্থান থেকে খালি চোখে দেখা যাবে এবং যা দেখে আমেরিকার সামরিক এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রা সম্পর্কে মানুষের মনে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হবে।

আর্মার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের দশ সদস্যের একটি দল অত্যন্ত গোপনে তাদের গবেষণাকার্য শুরু করেন। তাদের গবেষণার বিষয় ছিল চাঁদের বুকে পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে তা থেকে বৈজ্ঞানিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে কীভাবে উপকৃত হওয়া যাবে, এবং এর বিপরীতে চাঁদের মাটিতে এবং পৃথিবীর পরিবেশে কী ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়বে, এসব বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করা। গবেষণা দলটির নেতৃত্বে ছিলেন লিওনার্ড রেইফেল নামে একজন বিজ্ঞানী, যিনি পরবর্তীতে নাসার অ্যাপোলো প্রোগামের ডেপুটি পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। এছাড়াও এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন নাসার বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেরার্ড কিপার, যাকে আধুনিক গ্রহবিজ্ঞানের জনক বলে অভিহিত করা হয়।


প্রজেক্ট এ১১৯ এর কথা দীর্ঘদিন পর্যন্ত গোপন ছিল। কিন্তু ১৯৯৯ সালে কার্ল সেগানের জীবনী রচনা করতে গিয়ে জীবনীকার কেই ডেভিডসন এর অস্তিত্বের কথা জানতে পারেন। কার্ল সেগান মৃত্যুবরণ করেছিলেন ১৯৯৬ সালে। তার মৃত্যুর পর তার জীবনী রচনার জন্য গবেষণা করতে গিয়ে কেই ডেভিডসন আবিষ্কার করেন, সেগান মিলার ইনস্টিটিউটের অত্যন্ত সম্মানজনক গ্র্যাজুয়েট ফেলোশিপের আবেদন করার সময় এই প্রকল্পে কাজ করার অভিজ্ঞতা উল্লেখ করেছিলেন, যদিও সে সময় এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশে পরিষ্কার নিষেধাজ্ঞা ছিল।

সেগানের জীবনী প্রকাশিত হওয়ার পরেই রেইফেল বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকল্পটির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেন। পরবর্তীতে মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকেও প্রকল্পটি সংক্রান্ত কিছু নথিপত্র প্রকাশ করা হয়, যার মধ্যে 'A Study of Lunar Research Flights' গবেষণাপত্রটির অংশবিশেষও আছে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.