আকাশবাণী তাঁকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল



Odd বাংলা ডেস্ক: ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ সেপ্টেম্বর ঝাড়খণ্ডের ডিহিরী জংশন লাইনে শালবন ঘেরা গুঝাণ্টি নামে একটি রেলস্টেশনের কাছে, ট্রেনের কামরায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের পৈত্রিক নিবাস ছিল উত্তর কলকাতার হাতিবাগান অঞ্চলে। তাঁর পিতার নাম সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়। মায়ের নাম সুবর্ণলতা দেবী। ইনি ছিলেন পিতা-মাতার চতুর্থ সন্তান। ইনি কলকাতার বেথুন কলেজিয়েট স্কুলে লেখাপড়া শুরু করেন। 

তরুণী সুচিত্রা মিত্র, Image Source: Google


এখানে পড়ার সময় গানের চর্চা শুরু হয় দুই শিক্ষক অমিতা সেন এবং অনাদিকুমার দস্তিদারের কাছে। পঙ্কজ মল্লিকের গান শুনে রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি তাঁর বিশেষ আগ্রহ জন্মে। ছেলেবেলায় তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাক্ষাৎ সহচর্য লাভ করেছিলেন। ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে ক্লাস টেন-এ পড়ার সময় শান্তিনিকেতনের সংগীত ভবন থেকে বৃত্তি লাভ করেছিলেন। ১৯৪২-এ ম্যাট্রিক পরীক্ষা না দিয়েই তিনি শান্তিনিকেতন চলে যান। এখানে এসে তিনি ইন্দিরাদেবী চৌধুরানী, শান্তিদেব ঘোষ, শৈলজারঞ্জন মজুমদারের কাছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাঠ নেন। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসাবে প্রাইভেটে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দেন।
শঙ্করলাল চক্রবর্তীর নেওয়া সুচিত্র মিত্রর সাক্ষাৎকার 

 শান্তিনিকেতন থেকে ডিপ্লোমা লাভ করার পর, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ফিরে আসেন। এই বৎসরে তিনি London Tagore Hymn Society থেকে Tagore Hymn Prize পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ২১ বছর বয়সে তাঁর প্রথম রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলা ভাষা নিয়ে এমএ পাশ করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে-তে তিনি ধ্রুব মিত্রের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে জুন তাঁদের একমাত্র পুত্র সন্তান কুণাল মিত্রের জন্ম হয়। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। শান্তিনিকেতনে তিনি কণ্ঠ সঙ্গীতের পাশাপাশি সেতার, এস্রাজ ও তবলা শেখার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি কণ্ঠসংগীতই বেছে নেন। 

তিনি ধ্রুপদী সংগীতের শিক্ষাগ্রহণ করেন ভি ভি ওয়াঝেলকরের কাছে। এ সময় কিছুদিন (প্রায় দু’বছর) নাচ শেখার চেষ্টা করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে নির্মিত উমাপ্রসাদ মৈত্রের জয় বাংলা এবং মৃণাল সেনের পদাতিক'-এ অভিনয় করেছেন। এছাড়াও, বিষ্ণু পাল চৌধুরীর টেলিফিল্ম আমার নাম বকুল-এর একটি পর্বে তিনি অভিনয় করেন। পরিণত বয়সে ঋতুপর্ণ ঘোষ পরিচালিত দহন ছবিতে অভিনয় করেন। দীর্ঘদিন তিনি ভারতীয় গণনাট্য সংঘ বা ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশন-এর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। বেশ কয়েকটি নাটকে তিনি অভিনয় করেছেন। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- মুক্তধারা, বিসর্জন, তপতী, নটীর পুজা, মায়ার খেলা, চিরকুমার সভা ও নীলদর্পণ। তিনি 'রবিতীর্থ' নামে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার উপযোগী একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এরই পাশাপাশি তিনি বহু রবীন্দ্রসঙ্গীতে কণ্ঠদান করেন। 
শেষ বয়সে সুচিত্রা মিত্র, Image Source: Google


এবং তাঁর জীবদ্দশাতেই তিনি এক কিম্বদন্তী শিল্পী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হন। তাঁর অসাধারণ সঙ্গীতশৈলী এবং প্রজ্ঞার জন্য, তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ১৯৮৪ সালে তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লী থেকে প্রচারিত আকাশবাণীর জাতীয় অনুষ্ঠানে, তিনি রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন। আকাশবাণীতে জওহরলাল নেহেরুকে কটাক্ষ করে বাল্মীকি প্রতিভা-য় গান গাওয়ার অভিযোগে তাঁকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ ছ'বছর তিনি আকাশবাণীতে গান করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.