জাহাজ কুইন মেরী, যেখানে আজও অতৃপ্ত আত্মারা ঘুরে বেড়ায়
Odd বাংলা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফর্নিয়ার লং বীচে অবস্থিত এই জাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যানার্ড। জাহাজটির নামকরণ রানী ভিক্টোরিয়ার নামে সুপারিশ করা হলে রাজা পঞ্চম জর্জ তাঁর স্ত্রী মেরি অফ টেক এর নামে জাহাজটির নামকরণ করেন। ১০১৯ ফুট লম্বা এবং ৮১,২৩৭ টনের বিশাল এই জাহাজটি বানাতে সময় লেগেছিল প্রায় চার বছর; খরচ হয়েছিল প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন ইউরো। টাইটানিকের চেয়ে বড় এই জাহাজটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য তৈরি করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় একে "গ্রে ঘোস্ট" বলা হত এর রঙ এবং গতির জন্য। কিন্তু কে জানত এই জাহাজটি একদিন হয়ে উঠবে ঘোস্টদের আশ্রয়স্থল?
ভয়ঙ্কর জাহাজ কুইন মেরীতে আজও বসে নৈশ ভোজের আসল, Image Source: Google |
ঐতিহাসিক এই জাহাজটি ১৯৬৭ সালে কিনে নেয় লং বীচ বন্দরের একটি প্রতিষ্ঠান। ব্যাপক সংস্কারের পর একে ভাসমান হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মিউজিয়ামের মত তৈরি করে ট্যুরিস্টদের আকর্ষণের উপযোগী করে তোলা হয়। এরপর থেকেই ট্যুরিস্টেরা নানা অদ্ভুত সব ভূতুড়ে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন। লেজেন্ডস অব আমেরিকা নামক একটি ওয়েবসাইটের সূত্র থেকে জানা যায়, কমপক্ষে ৫০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই জাহাজের মধ্যে। এর আগে ব্রিটিশ যুদ্ধজাহাজ কিউরা কেরার সাথে সংঘর্ষে প্রায় ৩০০ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছিল। ধারণা করা হয় এইসব মৃতব্যক্তির অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় গোটা কুইন মেরি জুড়ে।
কুইন মেরির ভূতুড়ে আচরণের কথা সর্বপ্রথম জনসুম্মুখে তুলে ধরেন কুইন মেরিতে চাকরিরত ১৭ বছরের এক যুবক। কুইন মেরির ইঞ্জিন রুমে কয়লা সরবরাহ করা ছিল তার কাজ। তিনি জানান, জাহাজটির করিডরে একটি অস্পষ্ট ছায়াকে ব্যাগ পাইপ নামক বাঁশি বাজাতে বেশ কয়েকবার দেখেছেন তিনি। লেজেন্ডস অব আমেরিকা বলেছে, জাহাজটির শিশুদের একটি খেলাঘর থেকে প্রায়ই একটা শিশুর কান্না শুনতে পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, কোন এক শিশুর অতৃপ্ত আত্মা এখনও এই খেলাঘরের মায়া ছাড়তে পারেনি।
গভীর রাতে একা দাঁড়িয়ে কুইন মেরী, Image Source: Google |
এই জাহাজের তিন দশক ধরে পরিত্যাক্ত একটি সুইমিংপুলে প্রায়ই নাকি দুটি মেয়েকে ১৯৩০ সালের সুইমিং সুট পড়ে হাসতে এবং খেলতে দেখা যায়। চেঞ্জিংরুমের সামনে অনেকে ভেজা পায়ের ছাপ দেখতে পেয়েছেন, পানির শব্দ শুনতে পেয়েছেন। কেউ কেউ সেখানে টেডি বিয়ার পুতুল হাতে একটি মেয়েকেও দেখতে পেয়েছেন। জানা যায়, এই সুইমিংপুলে দুটো মেয়ে অজানা কারনে পানিতে ডুবে মারা যায় যদিও ওরা দুজনই সাঁতার জানত।
জাহাজটির সিঁড়িঘর নিয়েও অনেক কথা রয়েছে। জাহাজটির সাবেক গাইড ন্যান্সি অ্যানি এরকম অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'একদিন আমি যখন জাহাজটির সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলাম তখন আমি ষাট-সত্তর বছর বয়সী এক সাদা চামড়ার মহিলাকে দেখতে পেয়েছিলাম। তাকে একা একা ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি খানিকটা অবাক হয়েছিলাম। কৌতুহলবশত সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলাম। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যেন উধাও হয়ে গেলেন তিনি। এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা আমার জানা নেই।'
তখনও সমুদ্র দাপিয়ে বেড়াতো কুইন মেরী, Image Source: Google |
সার্ভার ক্যারল নামে এক ব্যক্তি বলেন, 'জাহাজটির যাত্রী হয়ে যখন আমি কেবিনের কাছাকাছি গিয়েছিলাম তখন দেখেছিলাম এক জন নারী সেখানে বসেছিল। আমি তার পোশাক দেখে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তার ছিল গাঢ় কালো চুল। তার কোনো মেকআপ ছিল না। তাকে দেখতে খানিকটা ফ্যাকাশে মনে হচ্ছিল। আমি কখনো তাকে নড়তে দেখেনি। আমি যখন তার খুব কাছে এগিয়ে গেলাম, তখনি ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। সেই নারীর কাছাকাছি এগুতেই তিনি যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলেন। আমি হতভম্ব হয়ে চর্তুদিকে তাকে খুঁজলাম। কিন্তু কোথাও তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি।'
তখন প্রথম জলে নামানো হল কুইন মেরীকে, Image Source: Google |
তবে এই জাহাজের সবচেয়ে ভয়ংকর জায়গাটি হচ্ছে বি৩৪০ নাম্বার রুমটি। কারণ এই রুমটিকে ঘিরেই সবচেয়ে বেশী ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। লেজেন্ডস অব আমেরিকা বলেছে, গভীর রাতে লম্বা করে কালো চুল-দাঁড়িওয়ালা কেউ একজন রুমের দরজায় নক করে। অনেক সময় এই রুমের লাইট কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ অন বা অফ হয়ে যায়। মাঝে মাঝে বাথরুমে পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বাথরুমের দরজা হঠাৎ বিকট শব্দে বন্ধ হয়ে যায়। এই রুমের অতিথিরা অভিযোগ করেছেন, গভীর রাতে অনেক সময় তারা ঘুম ভেঙে দেখেন তাদের বিছানা কাঁপছে। এত অভিযোগের পর আশির দশকে এই রুমটি বন্ধ করে দেয়া হয়। সম্প্রতি এই রুমটি আবার খুলে দেয়া হয়েছে অতিথিদের অনুরোধে। আগ্রহী অতিথিরা এখন চাইলে পাঁচশত ডলারের বিনিময়ে রুমটি রিসার্ভ করতে পারবেন। কুইন মেরির জেনারেল ম্যানেজার স্টিফেন সোয়ার্ডস বলেন, 'গত কয়েকবছরে অনেক অনুরোধ এসেছে এই রুমটির জন্য। তাই আমরা আমাদের গেস্টদের প্রতি সম্মানে রুমটি আবার খুলতে যাচ্ছি।'
Post a Comment