বাঙালি মেয়েদের ব্লাউজ পরার অধিকার দিয়েছিলেন ঠাকুর বাড়ির এই পুরুষ, আজ গগন ঠাকুরের জন্মদিন




Odd বাংলা ডেস্ক: গগনেন্দ্রনাথ, সমরেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ – তিন ভাই। রবীন্দ্রনাথের ভ্রাতুষ্পুত্র। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় ভাই গিরীন্দ্রনাথ। গিরীন্দ্রনাথের ছোট ছেলে গুণেন্দ্রনাথ। গগনেন্দ্রনাথ ছিলেন গুণেন্দ্রনাথের প্রথম সন্তান। তাঁর জন্ম ১৮৬৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর। তাঁর যখন ১৪ বছর বয়স, তখন তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। জ্যেষ্ঠ পুত্র হিসেবে সংসারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব তাঁর ওপর এসে পড়ে। তাঁর ছত্রছায়ায় অবনীন্দ্রনাথ ছবি এঁকেছেন। কিন্তু তিনি নিজে ছবিতে মগ্ন হতে পারেন নি। তাঁর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিল্পশিক্ষা ছিল না। ছেলেবেলায় সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়ার সময় আর সকলের মতো তাঁকেও কিছুটা ছবি আঁকা শিখতে হয়েছিল। ছবি আঁকার জন্য পুরস্কারও পেয়েছিলেন তখন। কিন্তু এর পরে তাঁর চিত্রচর্চা বিশেষ এগোয় নি। ১৮৯৯-১৯০০ সালে তিনি কিছুদিন ছবি আঁকা শেখেন হরিনারায়ণ বসুর (১৮৬৮-১৯২০) কাছে। হরিনারায়ণ বসু গভর্নমেন্ট আর্ট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। স্বাভাবিকতাবাদী আঙ্গিকে দক্ষ ছিলেন। গগনেন্দ্রনাথও সেটাই শিখেছিলেন।
ঠাকুরবাড়িতে গগন ঠাকুরের ছবি, Image Source: Wiki


অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিত্র শিল্পী হিসেবে বিরাট খ্যাতি পেয়েছেন। কিন্তু তাঁর দাদা গগন ঠাকুরের নাম ততটা প্রচার পায়নি। শুধু রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনস্মৃতি’ বইটার টুকরো-টাকরা ছবি আঁকার জন্য তাঁকে মনে রেখেছেন কেউ কেউ। অথচ, এই মানুষটার মধ্যে ঠাকুরবাড়ির শিল্পী-রক্ত কম ছিল না কিছু। আর মনে প্রাণে তিনি খুব আধুনিক মনস্ক ছিলেন।


একটা সময় হিন্দু ধর্মে বিয়ের অনুষ্ঠানে সেলাই করা কোনো জিনিস পরিধান করা যেত না।  পুরুষরা অন্তর্বাস পরত না বিয়ের আসরে।  আর মহিলারাও শুধু শাড়ি দিয়ে নিজেদের দেহ ঢেকে বিয়ে করত।  এতে শাড়ির ভেতরেও তাদের স্তন থাকতো অনাবৃত। যা অনেক সময় অস্বস্তির কারন হয়ে দাঁড়াতো। এই নিয়ম কিন্তু শাস্ত্রাচার ছিল না। বরং সে সময়ের পুরোহিতরা এই নিয়ম লোকাচার হিসেবেই শুরু করেছিলেন। তাদের বক্তব্য ছিল সেলাই করার সময় সুতোতে থুথু লাগানো হয়। আর তাই সেলাই করা বস্ত্র পরলে সেটা অসূচি হবে।

তাঁর শিল্পকলাতে ছিল পাশ্চাত্যের বিশেষ ছোঁয়া,  Image Source: Shilpi.org


কিন্তু ওই যে গগনেন্দ্রনাথ ছিলেন জিনিয়াস। তিনি মেয়েকে ব্লাউজ পরালেন। এবং বিয়ের আসরে নিয়ে এলেন। মেয়ের হবু শ্বশুর ব্যাপারটি দেখে তো পুরো খাপ্পা। তিনি বলে দিলেন মেয়ে সেলাই করা বস্ত্র পরলে এই বিয়ে হবে না। এবার গগন ঠাকুর বললেন যদি তিনি প্রমান করতে পারেন এই বস্ত্র সেলাই করা তাহলে তিনি তাঁর হবু বেয়াইকে নগদ এক লাখ টাকা দেবেন আর যদি না পারেন তাহলে সেই ছেলের বাবা গগন ঠাকুরকে এক লাখ টাকা দেবে। সেই বাজির লোভেই কিনা জানিনা হবু শ্বশুর অন্যান্য মহিলাকে পাত্রীর ব্লাউজ দেখতে বলেছিলেন।  কিন্তু মেয়েরা সেই ব্লাউজ দেখে তো অবাক। পুরো ব্লাউজটাই আঠা সাটিয়ে তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কোনো সেলাই নেই। ফলে সেটা অসূচিও নয়। ব্যাস!  আর কি, ওই ব্লাউজ পরেই বিয়ে হয়েছিল গগন ঠাকুরের মেয়ে সুজাতার।
গগন ঠাকুরের আঁকা বিখ্যাত সেই দূর্গা বিসর্জনের ছবি, Image Source: Google


এই ঘটনার পরে ওই এক লাখ টাকা গগনেন্দ্রনাথ পেয়েছিলেন কিনা সেটা জানা নেই তবে গগন ঠাকুরের ডিজাইন করা সেই ব্লাউজ খুব নাম করেছিল। এবং কলকাতার অনেক কাপড়ের ব্যবসায়ী সেই পন্থা অবল্মবন করে বিয়ের জন্য আলাদা ব্লাউজ বিক্রি করতে শুরু করেন। যার মধ্যে কোনো সেলাই থাকতো না। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.