দিনের আলোতেই শত শত মানুষ এক সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হত, তারপর একদিন গণ-আত্মহত্যা


Odd বাংলা ডেস্ক: এই তো কয়েকটা দিন আগেই  ভারতের বুকে রামরহিম ধরা পড়ল। যে কিনা নিজের আশ্রমে এক বিরাট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। প্রত্যেকদিন আলাদা আলাদা নারী শিষ্যাকে নিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হত এই ধর্ম প্রচারক। কিন্তু জানেন কি এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল ১৯৭৮ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের এক ধর্মগুরু জিম জোনস এর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কয়েকশ মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন। এবং এই জিম জোনসও নাকি একইভাবে তাঁর মহিলা শিষ্যাদের শোষণ করতেন। তাঁদের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন এই ধর্মগুরু। দক্ষিণ আমেরিকা ও ভেনিজুয়েলার উত্তরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাঝে একটি ছোট রাজ্য গায়ানা৷ সেখানে ‘পিপলস্ টেম্পল’ এর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই জিম। তাঁর শিষ্য ও শিষ্যারা তাঁকে ভগবানের মতো করেই দেখত। গভীর অরণ্যের ভেতর নিজের একটি সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল এই ধর্মগুরু। ছিল নিজস্ব আইন ব্যবস্থাও। সেসময় যে সমস্ত সাংবাদিকরা কোনো ক্রমে জিম জোনসকে রাজি করিয়ে পিপলস টেম্পলে প্রবেশ করেছিলেন তাঁরা পরে বলেছেন মেয়েরা সাবালিকা হলে এই ধর্মগুরু নিজে তাদের হেইমেন ভাঙ্গার এক অনুষ্ঠান করতেন। যেখানে তাদের সঙ্গে প্রথম সঙ্গম তিনি নিজেই করতেন।
ধর্মগুরু জিম জোন্স, Image Source: Google

কিন্তু একদিন জিম জোনসের এই কীর্তি ধরা পড়ে যায়। ফলে বিপাকে পড়ে জিম। আর তাই শিষ্যদের সবার মস্তিষ্ক প্রক্ষালন (Brain Wash) করেন এই ব্যাক্তি। যে রাতে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটানো হয় তাঁর নামকরন করেন দ্য হোয়াইন নাইট। এবং  সেই রাতে ইঞ্জেকশন দিয়ে বিষ প্রবেশ করানো হয় শিশুদের শরীরে আর প্রাপ্ত বয়স্কদের বিষ খেতে বাধ্য করা হয়।
তরুণী ও নাবালিকাদের সঙ্গে জিম জোন্স, Image Source: Google


আসলে, চোর ডাকাত, সন্ত্রাসীরা এই পৃথিবীতে যতখানি ক্ষতি করেছে তার চেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি করেছে কাল্ট লীডার এবং তথাকথিত আধা পূর্ণতাপ্রাপ্ত আধ্যাত্মিক গুরুরা। তথাকথিত ভাল কাজের নামে তারা মানুষকে করেছে ব্রেইনওয়াশ এবং হরণ করেছে মানুষের অধিকার।

এইসব ব্রেইনওয়াশ শুরু হয় তথাকথিত কল্যাণের নামে। তারা আপনাকে শেখাবে - টাকা না থাকা, জীবনে কষ্ট করা, যৌনতা থেকে বঞ্চিত থাকা, না খেয়ে থাকা, গুরুর সেবা করা হচ্ছে মুক্তির পথ এবং এভাবে আধ্যাত্মিকতার উচু স্তরে পৌছানো যায়। টাকা-পয়সা হচ্ছে খারাপ। এবং যখন আপনার টাকার প্রতি মোহ থাকবে না, আপনি টাকা ত্যাগ করবেন, তখন এই গুরুরাই আপনার টাকা নেবে, আপনাকে তাদের কাজে লাগাবে। আপনাকে দুনিয়া সম্পর্কে উদাসীন করে দিয়ে তারাই দুনিয়ার ক্ষমতা পাওয়ার জন্য আপনাকে ব্যবহার করবে।

এই পাত্রের মধ্যেই সেই রাতে বিষ গোলা হয়েছিল, Image Source; ABC News


লিও রায়ান, (আমেরিকার আইন প্রণয়নকারী) জোনস টাউন পরিদর্শনে আসেন এ ঘটনার ঠিক আগে৷ এফবিআই-এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, আচরণ নিয়ন্ত্রণে ড্রাগের ব্যবহার, রহস্যজনক মৃত্যু, মাস-সুসাইডের প্রস্তুতি নিয়েও আলোচনা হয় এই সফরে৷ রায়ান ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলে শিষ্যরা তাঁর সঙ্গে যাওয়ার অনুরোধ জানায়৷ বিমানে আকস্মিক হামলা করে একদল দুষ্কৃতী৷ রায়ানসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হন এবং আহত হন অনেকে৷ সেই সময়ই জিম জোনস্ শিষ্যদের বিষাক্ত পানীয় পানের অনুরোধ জানান৷ কারণ, তিনি শিষ্যদের বুঝিয়ে ছিলেন, যে এই বিমান হামলা থেকে রেহাই পাবে না জোনসনবাসী৷ আর সেইজন্যই ওই পানিয় খেতে বলেন তিনি। সবাই মরে যাওয়ার পর জিম নিজের মাথায় নিজে বন্দুক ঠেকান। এবং নিজের মস্তিষ্কে গুলি করে তিনি নিজেও মারা যান। আর এই পুরো ঘটনাটি ঘটেছিল দিনের আলোতে । যা পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো গণ-আত্মহত্যার রূপ নেয়।   
Blogger দ্বারা পরিচালিত.