প্রত্যেকদিন ৭০ টাকা করে নিতেন পরিচালকের কাছে, ভানু করতেন বকাবকি, জন্মদিনে অজানা জহর


Odd বাংলা ডেস্ক: নামেই তিনি 'রত্ন', অভিনয় তাঁর অনবদ্য । তিনি সকলের প্রিয় জহর রায় ।‘পূর্বরাগ’ দিয়ে বাংলা ছবিতে বড় চরিত্রে অভিনয় শুরু করে একে একে ‘ধন্যিমেয়ে’, ‘ছদ্মবেশী’, ‘ভানু গোয়েন্দা জহর অ্যাসিস্টেন্ট’, ‘পরশপাথর’ –এর মত ছবিতে নিজের চরিত্রকে অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তোলেন জহর রায় । জহর রায় বলতেই হাল্লার মন্ত্রীমশাই ভেসে ওঠেন চোখের সামনে। রাজাকে যিনি যুদ্ধ বাধানোর কুমন্ত্রণা দিতেন, যাঁর চারধারে ঘুরে ঘুরে গুপী গান গেয়েছিল আর বাঘা ঢোল বাজিয়েছিল ও মন্ত্রীমশাই ষড়যন্ত্রীমশাই!

ছাড়পোকা নিয়ে ভানু-জহরের কমিক

কিন্তু জীবনের শুরুটা কিন্তু এত সহজ ছিলনা। বিএ পড়ছিলেন বিএন কলেজে, সংসারের চাপে ফোর্থ ইয়ারে পড়া ছেড়ে ঢুকতে হল চাকরিতে। পটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রুফ রিডার। পরে ইস্ট ইন্ডিয়া ফার্মাসিউটিক্যালসে মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। শেষমেশ তা-ও ছেড়ে দর্জির দোকান দিলেন। দিব্যি চলছিল। কারিগরের থেকে সেলাই মেশিন চালাতে, এমনকী শার্ট-প্যান্ট কাটতেও শিখে নিয়েছিলেন জহর।

কিন্তু তাতে কি! তাঁর ভবিতব্যে যে ছিল অভিনেতা হওয়া। ছোটো থেকে দেখা চার্লস চ্যাপলিনের ছবিগুলিই তাঁর মনে গেঁথে ছিল। আর তাই তার অভিনয়ে সেই একটা ধারা ছিল। কমিক টাইমিং মিলে যেত চ্যাপলিনের সঙ্গে।
দেখুন জহর ও বিশ্বজিতের আর এক মজার দৃশ্য

সমসাময়িক বহু অভিনেতা তাঁর সম্পর্কে বলেছেন, জহরের আরো একটা বিশেষ গুণ ছিল। ও বাঁধাধরা সংলাপে আটকে থাকত না বা ওকে রাখা যেত না। হয়ত কয়েক মিনিটের সংলাপ। ও বানিয়ে আরো খানিকটা বলে দিল। কিন্তু এমন মুনশিয়ানায় কাজটি করত যে এডিট করার পথ থাকত না। দেখতাম, দর্শকরা ওই বাড়তি সংলাপ মজা করে গ্রহণ করে নিয়েছেন। ওকে নিয়ে একটা মজার ঘটনার কথা মনে পড়ছে। ও একটা কমিক স্কেচ করত। এবং সেটি খুব জনপ্রিয় ছিল। হিটলারকে নকল করে কমিক স্কেচটি ছিল। একটা বত্তৃতা। বলত কিন্তু আবোল তাবোল। কিন্তু ইংরেজি উচ্চারণে, নানা অভিব্যক্তিতে এমন পর্যায়ে সেই স্কেচকে নিয়ে যেত যে দর্শকরা ঘাড় ঘোরাবার সময় পেতেন না। প্রচণ্ড বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ ছিলেন তার সঙ্গে মিলেছিল জ্ঞান। তাই ওর এ সব পারফরমেন্স দর্শকদের কাছে ওকে তুমুল জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তাৎক্ষণিক বিষয় নিয়েও ও দারুণ স্কেচ করত। তবে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে তাঁর জুটি বেঁধে অভিনয় আজও যে কোন মনখারাপের মুহুর্তে মানুষের মুখে হাসি এনে দিতে পারে ।বলা যেতে পারে তাঁদের এই জুটি উত্তম-সুচিত্রার জুটির মতই নজরকাড়া ।
ভানু- জহরের কমিক জুঁটি, Image Source: Google


ভানু পরে আক্ষেপ করেছেন, ‘আমাকে এবং জহরকে বেশির ভাগ পরিচালক ‘কমিক রিলিফ’ হিসেবে ব্যবহার করেছে।’ খানিক নামডাক হওয়ার পরে ভানু ছোটখাটো রোল নেওয়া ছেড়ে দেন। কিন্তু জহরের বাছবিচার ছিল না জীবনের শেষ পর্যন্ত। ভানু যেখানে আড়াইশো টাকা নিচ্ছেন রোজ, জহর নিচ্ছেন মোটে সত্তর। তা নিয়ে ভানুর কাছে বকুনিও খেয়েছেন বহুবার।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.