শরৎ চন্দ্রের লেখা চুরি করেছিলেন তাঁরই মামা, ভাগ্যের কী পরিহাস


Odd বাংলা ডেস্ক: ১৫ই সেপ্টেম্বর জন্মদিন এই সাহিত্যিকের। জানেন এই সাহিত্যিকের লেখা চুরি করেছিলেন তারই মামা। ১৮৯৫ সালে শরৎ চন্দ্রের মায়ের মৃত্যু হয় এবং অর্থাভাবের দরুন কলেজ ত্যাগ করতে হয়। তারপর ১৯০০ সালে বিহারের গোড্ডায় রাজ বনালী এস্টেটে একটি চাকরি পান। কিন্তু পিতার অনেক বৈশিষ্ট্য তার মধ্যেও ছিল। সে চাকরি তিনি ছেড়ে দেন এবং এরপর কিছুদিন সাঁওতাল পরগণায় সেটেলমেন্টে কাজে যোগ দেন। ১৯০৩ সালে তার পিতাও ইহলোক ত্যাগ করেন এবং তিনি তখন হাইকোর্টে অনুবাদকের কাজ নেন। সে বছরই ‘মন্দির’ নামে তার প্রথম গল্প প্রকাশিত হয়। কিন্তু গল্পটি তাঁর মামা সুরেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নামে কুন্তলীন প্রতিযোগিতায় পাঠানো হয়েছিলো। তার প্রথম মুদ্রিত রচনাটি তার নিজের নামেই প্রকাশ পায়নি, ভাগ্যের অদ্ভুত চক্র! সেবার দেড়শ গল্পের মধ্যে ‘মন্দির’ শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছিলো ‘বসুমতি’ পত্রিকার সম্পাদক জলধর সেন দ্বারা। কেউ জানতেই পারেনি তার নাম। পরে তাঁর মামা অবশ্য স্বীকার করে নেন বিষয়টা। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে শরতবাবু, Image Source: Facebook


শরৎচন্দ্রের বিখ্যাত উপন্যাস ‘শ্রীকান্ত’ এর নামচরিত্রটি অনেকাংশে তার নিজের উপর ভিত্তি করেই সৃষ্টি। শ্রীকান্তের মতোই তিনিও বার্মা তথা বর্তমান মায়ানমারে ভাগ্যান্বেষণে যাত্রা করেন ১৯০৩ সালেই। রেঙ্গুনে থাকা অবস্থাতেই তিনি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রী শান্তিদেবী ও এক বছর বয়সী পুত্রসন্তানের প্লেগে মৃত্যু হয়। এরপর মোক্ষদা দেবীর পিতার বিশেষ অনুরোধে শরৎচন্দ্র তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর মোক্ষদার নাম পাল্টে তিনি রেখেছিলেন হিরন্ময়ী।

শরৎচন্দ্র হাওড়া কংগ্রেসে সভাপতি ছিলেন, কিন্তু ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাকে সবসময়ই সশস্ত্র বিপ্লবীদের পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা যায়। তিনি ১৯২২ সালে তাই একবার কংগ্রেস ত্যাগ করতে চান, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ তাকে বাধা দেন। তিনি সশস্ত্র সংগ্রামীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগও রাখতেন। বিপ্লবী বিপিন গাঙ্গুলী তার মামা ছিলেন। তার ভালো সম্পর্ক ছিল বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সর্বাধিনায়ক হেমযন্দ্র ঘোষ, কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলার আসামী বিপ্লবী শ্চীন স্যান্যাল, বারীন ঘোষ, উপেন বন্দোপাধ্যায়, অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের সঙ্গে। শরৎচন্দ্র বিপ্লবীদের নিজের রিভলবার, বন্দুকের গুলি দিয়ে এবং আর্থিকভাবে সাহায্য করতেন। মাস্টারদা সূর্য সেনকেও তিনি আন্দোলনের কাজের জন্য অর্থ দিয়েছিলেন।
শরতবাবুর বৃদ্ধাবস্থা, Image Source: Google
কোনোদিন নিজের নাম সংবাদপত্রে প্রকাশ করার জন্য মুখিয়ে ছিলেন না। আপন ভোলা একজন মানুষ ছিলেন। আত্মপ্রচারবিমুখ ছিলেন এই লেখক। পরিচিতদের মধ্যে নিজস্ব বৃত্তে স্বচ্ছন্দ থাকতেন, ছিলেন হাস্যরসে ভরপুর এবং প্রচণ্ড পারিবারিক। বেশভূষার ক্ষেত্রে শৌখিনতা ছিল। দক্ষ সাঁতারু হবার পাশাপাশি শিকারেও পারদর্শী ছিলেন, কিন্তু পরে শিকার করা ছেড়ে দেন। হয়তো একটা সময় জীবপ্রেম এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে তার মধ্যে, তখন আর শিকারী পরিচয় তার কাছে বোঝার মতো ঠেকতো। এরপর অনেক বছর তিনি সি.এস.পি.সি.এ. অর্থাৎ কলকাতা পশুক্লেশ নিবারণী সমিতির হাওড়া শাখার চেয়ারম্যান ছিলেন। ‘মহেশ’ গল্পে তার জীবপ্রেমের প্রকাশ ঘটেছে। লেখক পরিচয় তার জীবনে প্রবল ভূমিকা নিয়েছে, কিন্তু গায়ক, বাদক, চিকিৎসক ও চিত্রশিল্পী হিসেবেও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত দক্ষ ছিলেন। যেটা কেউ জানে না। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.