পাগল সাধক দেখা পেয়েছিলেন মায়ের, তাঁর জন্যই শান্ত হয়েছে মা গঙ্গা, রইল মালদহের পাগলী কালীর গল্প


Odd বাংলা ডেস্ক: কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। বিশেষ করে দেব-দেবীর মাহাত্ম্য নিয়ে নানা মুনির নানা মত। তেমনই মালদহবাসী তাঁদের মনের এক অদ্ভুত বিশ্বাস থেকেই প্রত্যেক বছরই অমাবস্যার পরের দিন অর্থাৎ প্রতিপদে পুজো করা হয় পাগলী কালীর। 

মালদহ জেলায় গঙ্গা ও ভাগীরথী নদীর সংযোগস্থলে স্লুইস গেটের পাশে একটি আমবাগানের মধ্যে অবস্থিত এই পাগলী কালীমাতার মন্দির। এই কালী মাতার অস্তিত্ব গড়ে উঠেছে একটি লোকাচারের মধ্যে দিয়ে। এখানকার স্থানীয় মানুষদের ধারণা মা গঙ্গাকে শান্ত করেছে পাগলী কালী। কারণ গঙ্গা ভাঙনের চেয়ে বড় কোনও বিপদ সেখানকার মানুষের কাছে ছিল না। সেখানকার মানুষের ধারণা গঙ্গা ভাঙনের হাত থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করেছে পাগলী কালীই। কারণ এক দশক আগে গঙ্গা ভাঙন হতে হতে পাগলী কালীর কাছে এসে ভাঙন বন্ধ হয়ে যায়। বরং ভাঙন একটু একটু করে সরে যায় কালিয়াচকের তিন নম্বর ব্লকের দিকে। কিন্তু গত এক দশকে সেখানে ভাঙনের ভয়াবহতা আর চোখে পড়েনি। সেই থেকেই গ্রামবাসীর ধারণা তাঁদের পাগলী কালীই গঙ্গা ভাঙন রুখে দিয়ে গোটা গ্রামবাসীকে বাঁচিয়েছেন। 

আর সেই থেকেই পাগলী কালীর মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়তে থাকে দিকে দিকে। এরপর গ্রামবাসীরাই সেখানে গড়ে তোলেন পাকা মন্দির। প্রতি বছ অমাবস্যার পরের দিন পাগলীকালীর থানে অসংখ্য মানুষের সমাগম ঘটে। কিন্তু সবথেকে আশ্চর্যের বিষয় হল এই মন্দিরে কোনও বিগ্রহ নেই। কিন্তু এই পাগলী কালীর কাহিনি আজ থেকে তিনশো বছর আগেকার। 

লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, আজ থধেকে প্রায় তিনশো বছর আগে ইমাম নামে এক রাজার গোমস্তা ছিলেন অমর মিশ্র নামে এক ব্যক্তি, আদতে তিনি ছিলেন বাঙ্গিটোলার বাসিন্দা। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, নদী দিয়ে ভেসে চলেছেন মা কালী। পরদিন সকালে ভাগীরথীর ঘাটে গিয়ে তিনি দেখেন জলে ভাসছে একটি কলস, আর তার ভিতরেই রয়েছে ছোট্ট মা কালীর মূর্তি। বিষয়টি রাজার কানে গেলে তিনিদেবীকে প্রতিষ্ঠা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর তিনিই নিয়ম করে দেন যে, কালী মাতার কোনও বিগ্রহ রাখা যাবে না। তবে এই পুজোয় মুসলিমদের অংশগ্রহণের অনুমতী দেন তিনি। এরপর থেকেই সেখানে ঘট বসিয়ে শুরু হয় পুজো। যদিও এই কাহিনি লোকমুখে প্রচলিত, এর কোনও ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা নেই। 

তবে এই পাগলী কালী নামকরণের পিছনে যে গল্পটির প্রচলিত রয়েছে, তা হল, এক পাগল সাধক এই থানে বহুদিন ধরে ছিলেন, তিনি নাকি মায়ের দর্শণ পেয়েছিলেন। সেই থেকেই মায়ের নামকরণ হয়েছে পাগলী কালী। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.