এই যোগেন মন্ডল না থাকলে আম্বেদকর সংবিধান রচনা করতে পারতেন না


Odd বাংলা ডেস্ক: রাজনীতি জীবনের শুরুতে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসু এর অভিভাবকত্ব লাভ করেন। সে সময়ে তিনি স্বতন্ত্র তফসিলি দলের সেক্রেটারি নির্বাচিত হন। ১৯৩৮ সালের ১ আগস্ট মন্ত্রিসভার বিপক্ষে দাঁড়ানোর এবং অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপনকারীদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। যদিও ১৯৪০ সালে কলকাতা কর্পোরেশন এর নির্বাচনে বসু দে’র সুপারিশক্রমে তিনি কংগ্রেসের প্রার্থী হিসেবে তফসিলি সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

১৯৪৩ সালের ২৪ এপ্রিল খাজা নাজিমুদ্দীন মন্ত্রিসভা গঠন করলে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল তাঁর ২১ জন তফসিলি সদস্য সহকারে ওই মন্ত্রিসভার পক্ষে সমর্থন জানান। এর প্রতিদানে তাঁকে উক্ত মন্ত্রিসভার সমবায় মন্ত্রীর পদ প্রদান করা হয় এবং প্রেমবিহারী বর্মন ও পুলীন বিহারী মল্লিক নামের তাঁর অপর দু’জন তফসিলি সহযোগীকেও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। যদিও এ মন্ত্রিসভা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৪৫ সালের ২৯ মার্চ তা ভেঙ্গে দেয়া হয়। ইতোঃমধ্যে মন্ডল ‘All India Scheduled Caste Federation’ গঠন করেন।

মন্ত্রিসভায় থাকাকালে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল সর্বভারতীয় পর্যায়ের তফসিলি নেতা ড. বি, আর, আম্বেদকরের সাহচার্যে আসেন। তাঁরই পরামর্শে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল বাংলায় ‘Bengal Provincial Scheduled Caste Federation’ গঠন করেন এবং সভাপতি হিসেবে একে বাংলার তফসিলি সম্প্রদায়ের একমাত্র দেশভক্ত সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দেন। তাঁর দৃষ্টিতে কংগ্রেস ছিল শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের সংগঠন। তিনি নিজেকে ‘হিন্দু’ মনে না করলেও নিজেকে তফসিলি সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে এ শ্রেণির উন্নয়নে তাঁর যথাসাধ্য চেষ্টা করেন।

১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম লীগ নিরঙ্কুশ জয় লাভ করে এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে প্রধানমন্ত্রী করে লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করে। যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল ছিলেন মন্ত্রিসভার একমাত্র তফসিলি সদস্য।

১৯৪৬ সালে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে মুসলিম লীগ তাৎক্ষণিকভাবে যোগ না দিলেও মাস খানেক পরে যোগ দেয়। মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত মুসলিম লীগের পাঁচ সদস্যের মধ্যে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল তফসিলি সম্প্রদায়ের হিন্দু একমাত্র সদস্য হিসেবে আইন মন্ত্রীর পদ লাভ করেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দৃষ্টিতে তিনি ছিলেন ‘মুসলিম লীগের হিন্দু প্রতিনিধি।’ জিন্নাহ তাঁকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যে, মুসলিম লীগ কেবলমাত্র মুসলিম জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না, তারা হিন্দু সম্প্রদায়েরও প্রতিনিধিত্ব করে। ইতোঃমধ্যে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট মুসলিম লীগের ডাকা প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস উপলক্ষে সারা ভারতব্যাপী সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার সূত্রপাত হয়। তফসিলি সম্প্রদায় ও মুসলমানদের মধ্যে কোন প্রকার ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি যাতে না হতে পারে তা তত্ত্বাবধানের জন্য যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলকে বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করা হয়। মন্ডল বিশ্বাস করতেন যে, ভারতবর্ষে মুসলিম ও তফসিলিদেরই অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থ ছিল।

বাবাসাহেব আম্বেদকর ভারতের সংবিধান রচনা করেছেন এটা আমরা জানি। কিন্তু সংবিধান সভায় যেতে হলে তাঁকে ভোটে জিততে হত। জানেন কি বাবাসাহেব আম্বেদকর নিজের রাজ্যে ভোটে হেরে গিয়েছিলেন। আর তখন এই যোগেন মন্ডল তাঁকে বাংলা থেকে ভোটে জিতিয়ে পাঠিয়েছিলেন সংবিধানসভাতে।  
বাবাসাহেব যদি সংবিধান সভায় যেতে না পারতেন তাহলে এই দেশের সংবিধান ব্রাহ্মণদের পক্ষেই লেখা হ’ত । তাই যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল আম্বেদকরী আন্দোলনে যে সহযোগীতা করেছেন এবং মূলনিবাসীদের উদ্ধারের জন্য যে কাজ করেছেন সেটা অসাধারণ কাজ ।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.