রক্তে ভাসে চারিদিক, ভবানী পাঠকের কালীপুজো আজও হয় মালদার গোবরজনাতে


Odd বাংলা ডেস্ক: কথা সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অপূর্ব সৃষ্টি দেবী চৌধুরানী। এই গল্পেই উল্লেখ মেলে ডাকাতের সর্দার ভবানী পাঠকের। এই ভবানী পাঠকের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন আছে অনেক। শুধুই গল্পের নায়ক নাকি তাঁর অস্তিত্ব বাস্তবেই ছিল? তবে আজও মালদা জেলাতে উত্তরপ্রদেশ ও বিহার থেকে আগত কিছু পাঠক পদবীর লোকেরা বসবাস করে। মনে করা হয় এঁদের পূর্বপুরুষ ছিলেন এই ভবানী পাঠক। 

গোবরজনাতে যে কালীপুজো হয় সেখানে প্রায় ৫ হাজার পাঠা বলি হয়। দেওয়া হয় মহিষ বলিও। মনে করা হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন মালদা জেলার উপ জেলাশাসক পদে ছিলেন তখন মালদার এই ইতিহাস থেকেই নিজের উপন্যাস দেবী চৌধুরানীর রসদ খুঁজে পান। এলাকার প্রবীণদের মুখে জানা যায়,’গোবরজনা কালীপূজা’ ডাকাতদের হাতে সৃষ্টি। ডাকাতেরা শক্তির আরোধনাই মা কালীর পুজো এলাকায় আরম্ভ করে ছিল। যা বর্তমানে এই পুজো সর্বজনীন রূপ নিয়েছে। প্রায় ৩৫০ বছর ধরে এই ডাকাতের হাতে সৃষ্ট এই পুজো আজও একই রীতি-নীতি, মেনে হয়ে আসছে। এলাকার অধিকাংশ প্রবীণদের মতে জানা যায়, একসময় আরাইডাঙ্গার সমগ্র এলাকা ঘনজঙ্গলে ঢাকা ছিল। সেসময় ঘনজঙ্গলে হিংস্র পশু বাস করতো। তাই মানুষের আনাগোনাও এলাকায় কম ছিল। সেই সুযোগে বিহার থেকে একদল ডাকাত নদীপথে এসে এই জায়গায় বসবাস শুরু করে এবং এখান থেকেই বিভিন্ন প্রান্তে ডাকাতির কার্যকলাপ চালিয়ে যেত। ডাকাতি করতে যাওয়ার আগে ও ডাকাতি করে ফিরে এসে শক্তির আরোধনার জন্য মা কালীর পুজো করতো ডাকাতরা। কার্তিক মাসে ডাকাতেরা নিজেরাই মায়ের প্রতিমা তৈরি করে পুজো অর্চনা করতো। আর এই সময় থেকে পুজো একই মতো আজও হয়ে আসছে।
প্রায় ৫০০০ পাঠা বলি দেওয়া হয়, রক্তে মাঝে দাঁড়ানোর জায়গাও পাওয়া যায় না, Image Source: Google

তবে পাশাপাশি আরও একটি বিশ্বাস কাজ করে এখানকার মানুষের মধ্যে। তারা মনে করে যে ভাবনী পাঠক আসলে উত্তরপ্রদেশ থেকে আগত কান্ডকুব্জ ব্রাহ্মণ ছিলেন। এবং তিনি শাক্ত ছিলেন। শক্তির আরাধনা করতেন। তাই নারীর প্রতি তাঁর বিশেষ শ্রদ্ধা কাজ করত। বঙ্কিমচন্দ্রের দেবী চৌধুরানী উপন্যাসের নায়ক ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানীর স্মৃতি রয়েছে এই পুজোয়। কথিত আছে একসময় ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানী বজরা করে রাতে নদীপথে উত্তরবঙ্গের দিকে যাওয়ার পথে নদীতে বজরা আটকে গেলে এই গোবরজনার কালী মন্দিরে রাত যাপন করেছিলেন। তারপর মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের পুজো দিয়েছিলেন তারা। তারপর তাদের বজরা চলতে আরম্ভ করে। তবে এখনো এই পুজোকে ভবানী পাঠকের পুজোর বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন অনেকেই। তবে যত দিন যাচ্ছে এই পুজো ও মায়ের প্রতি বিশ্বাস বেড়েই চলেছে। বিহার, ঝাড়খন্ড এমনকি প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও নেপাল থেকে মায়ের পুজো দিতে ভিড় জমায় এই মন্দিরে। 
    
Blogger দ্বারা পরিচালিত.