ঋতুমতী মহিলাদের কাজে রাখা হয় না, তাই এই গ্রামে অধিকাংশ মহিলাই শরীর থেকে বাদ দেন জরায়ু!


Odd বাংলা ডেস্ক: মহিলারা আজ কী না করছেন, কর্মক্ষেত্র থেকে শুরু করে সংসার সামলানো মহিলারা সবক্ষেত্রেই দশভুজা। কিন্তু পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের কাজ, যোগ্যতা, এবং সম্ভাবনা সবকিছুকেই খাটো করে দেখার প্রবণতা রয়েছে। কিন্তু মেয়েরাও যে থেমে থাকার মানুষ নন, তা এই প্রতিবেদন পড়ার পর আপনি আরও খানিকটা নিশ্চিত হবেন।



মহারাষ্ট্রের মারাথওয়াডা অঞ্চলের খরা-বিধ্বস্ত বিড জেলার অধিকাংশ মহিলারই জরায়ু নেই। সেখানকার মহিলাদের কথা যতই জানা যায়, ততই বিস্ময় জাগে! সেখানকার ভাঞ্জরওয়াডি এলাকার অর্ধেকের বেশি মহিলারাই হিস্টেরেক্টোমিস করিয়ে নিয়েছেন, এটি এমন এক সার্জারি যেখানে অপারেশন করে মহিলাদের জরায়ু বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। এবং এই গ্রামে গ্রামে মহিলারা ২-৩টি সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরই অপারেশন করে নিজেদের জরায়ু বাদ দিয়ে দেন। 

আর এইসব মহিলাদের অধিকাংশই বেত কাটার কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। এবং বেত কাটার মরশুমে তাঁরা সকলেই পশ্চিম মহারাষ্ট্রে চিনির বেল্টে পাড়ি দেন। তবে তীব্র খরা বিধ্বস্ত হওয়ার কারণে এইসব জায়গায় অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদাররা তাদের বেত কাটার দলে গর্ভ আছে এমন মহিলাদের রাখতে রাজি নন। প্রায় লক্ষ লক্ষ নারী-পুরুষ বেত কাটার কাজ করেন। ঠিকাদাররা স্বামী এবং স্ত্রী-কে একটি ইউনিট হিসাবে গণ্য করে। তবে যদি কেউ এক দিনের জন্য বেত কাটার কাজ না করেন, তাহলে দম্পতিকে দিন প্রতি ৫০০ টাকা করে জরিমানা দেওয়া হয়।


 

তবে মহিলাদের ক্ষেত্রে কাজ থেকে ছুটি নেওয়ার এক অন্যতম কারণ হল ঋতুস্রাব। আর ঋতুস্রাব হলেই মহিলারা প্রতিদিনের মতো কাজ করতে পারেন না। তাই অপারেশন করে জরায়ু বাদ দিয়ে দিলে আর ঋতুস্রাবের চিন্তা নেই, ফলত ছুটিও নিতে হবে না। ঠিকাদারদের কথায়, মাসিকের সময় মহিলারা ১ বা ২ দিনের জন্য ছুটি চান, কিন্তু খুব কম সময়ের মধ্যে কাজ করার যে লক্ষ্য তাদের রয়েছে, তাতে একদিন যদি কেউ কাজ বন্ধ রাখে তাহলে তাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই ঋতুমতী মহিলাদের তারা কাজে রাখতে চান না। তবে ঠিকাদারদের আরও দাবি, যে তারা কোনও মহিলাকে জোর করেন না অস্ত্রোপচার করার জন্য। বরং বিষয়টি তাদের পরিবারের তরফেই মেনে নেওয়া হয়। 


প্রসঙ্গত, তথাপি নামে একটি সংস্থার অচ্যুত বরগাওঙ্কার এই বিষয়ের ওপর একটি গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন, যারা বেত কাটার কাজ করেন, তারা মাসিক ঋতুস্রাবকে একটি সমস্যা বলে বিবেচনা করেন হয় এবং তারা মনে করেন যে এর থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অস্ত্রোপচারই একমাত্র বিকল্প পথ। তবে এটি মহিলাদের স্বাস্থ্যের উপর এক মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কারণ এর ফলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, মানসিক স্বাস্থ্যের অবণতি এবং ওজন বৃদ্ধি ইত্যাদি নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ২৫ বছর বয়সের মেয়েরা এই সার্জারি করেছে। শুধু তাই সেখানকার বেসরকারি চিকিৎসকরাও মহিলাদের সাধারণ পেটে ব্যথা বা সাদা স্রাবের সমস্যা থাকতে তাদের অপারেশন করে জরায়ু বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেন! 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.