খ্রীষ্টানদের মধ্যে তন্ত্র বিদ্যা নেই, তবু হ্যালোইন পালন হয় কেন?


Odd বাংলা ডেস্ক: 'হ্যালোইন' (Halloween) শব্দের পূর্ণ রূপ 'হ্যালো'জ ইভনিং' (Hallows' Evening) বা 'হ্যালোড ইভনিং', অর্থ 'পবিত্র সন্ধ্যা'। শব্দটি এসেছে স্কটিশ 'অল হ্যালো'জ ইভ' (All Hallows' Eve) থেকে। 'হ্যালো' শব্দটি হ্যালোইন ছাড়াও জে কে রোলিং-এর লেখা হ্যারি পটার মূল সিরিজের শেষ বই 'হ্যারি পটার অ্যান্ড দ্য ডেথলি হ্যালোজ' দ্বারা বিখ্যাত হয়। 'হ্যালো' (Hallow) বলতে বোঝায় 'পবিত্র কিছু' কিংবা 'সাধুজন' (Saint)। এ কারণে এ দিনটিকে 'অল সেইন্টস ইভ'-ও (All Saints' Eve) বলা হয়। 

হ্যালোইন শব্দটির অতীত ঘাঁটতে গেলে আমরা দেখতে পাই, প্রথম ১৭৪৫ সালে এটি ব্যবহার করা হয়, ওদিকে ১৫৫৬ সালে দেখা যায় 'অল হ্যালো'জ ইভ' কথার প্রচলন। হ্যালোইনের বিশ্বাসগুলো খ্রিস্টধর্মজাত। এর সাথে পৌত্তলিক (pagan) প্রথার কোনো সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু একই কথা অবশ্য পরবর্তীতে হ্যালোইনে যুক্ত হওয়া নানা প্রথার ক্ষেত্রে বলা যায় না, সে বিষয়টি আসবে একটু পরে।

৩১ অক্টোবর পালিত হয় হ্যালোইন, যে রাতে বিগত সাধুদের আত্মার স্মরণে গির্জায় গির্জায় জ্বালানো হয় মোমবাতি। তার পরদিন পহেলা নভেম্বর পশ্চিমা খ্রিস্টানদের ভোজ (feast) 'অল হ্যালোজ ডে' (All Hallows' Day) বা 'হ্যালোমাস' (Hallowmas), যেদিন ইতিহাসের সকল জানা-অজানা সাধুদের স্মরণ করা হয়। আর সবশেষে ২ নভেম্বর 'অল সোল'জ ডে' (All Souls' Day), এ দিন স্মরণ করা হয় পরলোকগত খ্রিস্টানদের আত্মাকে। এ তিন দিন মিলিয়ে পালিত হয় পশ্চিমা খ্রিস্টানদের 'অলহ্যালোটাইড' (Allhallowtide) বা শুধু 'হ্যালোটাইড' (Hallowtide)। 

এবার আসা যাক হ্যালোইনের প্রথায় পৌত্তলিক প্রভাব নিয়ে, যেটি নিয়ে হয়েছে বিস্তর গবেষণা, অনেকের মনেই আছে এ নিয়ে প্রশ্ন। সেটি বুঝবার আগে আমাদের জানতে হবে কেল্টিকদের নিয়ে। কেল্টিক (Celtic) ভাষায় যারা কথা বলে থাকেন তাদের বসবাস মূলত পশ্চিম ইউরোপের ছয়টি অঞ্চলে- ওয়েলস, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, কর্নওয়াল, ব্রিটানি এবং আইল অফ ম্যান। সম্মিলিতভাবে এদের বলা হয় কেল্টিক (বা সেল্টিক) অঞ্চল। কেল্টিক ভাষার একটি শাখা হলো গেলিক ভাষা- স্কটিশ, ম্যানক্স ও আইরিশদের ভাষার একটি মিলিত রূপ। এ ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা বর্তমানে ১৯ লক্ষ। কেল্টিক জাতির নানা পৌত্তলিক বা প্যাগান উৎসবের প্রভাব পড়েছিল সদ্য খ্রিস্টধর্মের সাথে পরিচিত হওয়ার পর। তাই প্যাগান কিছু প্রথার ছায়া দেখা যায় হ্যালোইনে। ইতিহাসবিদ নিকোলাস রজার্সের এ বিষয়ে গবেষণা করে মন্তব্য করেন যে কেবল কেল্টিকই নয়, আরও কিছু প্যাগান ধর্ম অনুসারীদের প্রথাতেও আছে হ্যালোইনের উৎসব প্রথার শিকড়। তার মাঝে প্রধান তিনটি হলো- তার মধ্যে একটি হল পোমোনা (Pomona) ভোজ। 

প্যাগান রোমানদের প্রাচুর্যের দেবী পোমোনা। তিনি ছিলেন ফলের গাছ, বাগান ইত্যাদিরও দেবী। অনেক রোমান দেব-দেবীর গ্রিক অস্তিত্ব থাকলেও পোমোনা কেবলই রোমান দেবী ছিলেন। তার স্মরণে যে ভোজের অনুষ্ঠান হতো, তাতে প্রচলিত কিছু প্রথার সাথে মিল পাওয়া যায় হ্যালোইনের।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.