স্বামীর সামনেই অন্য পুরুষের সঙ্গে সঙ্গমে লিপ্ত হয় এখানে মেয়েরা, নাম সেক্স মাউন্টেন
Odd বাংলা ডেস্ক: পাহাড়ের নাম সেক্স মাউন্টেন। বাংলা করলে এর অর্থ দাঁড়ায় যৌন পাহাড়। কী অদ্ভুত ! যৌনতায় ঠাসা এতকিছু আছে, পাহাড়ও যে আছে, সহজে বিশ্বাসই হয় না। কিন্তু ঘটনা সত্য। এই আধুনিক যুগেও এর আবেদন বা আগ্রহ কমে নাই।
প্রাচীন প্রথা, নাকি তার আড়ালে চলছে অনাচার? ইন্দোনেশিয়ার ‘সেক্স মাউন্টেন’ নিয়ে বিতর্কের অবসান এখনও হয়নি। মুসলিম প্রধান দেশের একটি শতাব্দী প্রাচীন রীতিকে ঐতিহ্যের ঘেরাটোপে মুড়ে কি দেহব্যবসাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে? এই প্রশ্নের মীমাংসা হয়নি। তবে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অপরিচিত মানুষের সঙ্গে সঙ্গমের খেলায় মেতে ওঠেন স্থানীয় যুবক, যুবতীরা। সেখানে অবাধ প্রবেশ বিবাহিতদেরও।
মধ্য জাভার বিখ্যাত পাহাড় এই ‘সেক্স মাউন্টেন।’ সোলো বা সুরাকারতা শহর থেকে ২৮ কিলোমিটার দক্ষিণপূর্বে এই পাহাড়কে স্থানীয়রা ডাকেন গুনুং কেমুকুস বা মাউন্ট কেমুকুস নামে। জাভার অধিবাসীদের কাছে পবিত্র এই পাহাড়ই বর্তমানে গোটা বিশ্বের কাছে ‘সেক্স মাউন্টেন’ নামে পরিচিত। এই পাহাড়কে ঘিরে রেখেছে এর ইতিহাস, অন্ধবিশ্বাস। তারই ফাঁক ফোকর দিয়ে উঁকি মারছে বিতর্ক, নানা মহল থেকে ওঠা ছিছিক্কার এবং অবশ্যই প্রশাসনের বাধা-নিষেধ। সব মিলিয়ে ইন্দোনেশিয়ার গুনুঙ্গ কেমুকুস এখনও খবরের শিরোনামে।
শুরুটা সেই ষোড়শ শতক থেকে। জাভানিজ ক্যালেন্ডারের দিনক্ষণ মিলিয়ে ‘জুমাত পন’ তিথিতে একটি উৎসবের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। তাঁদের ভাষায় এর নাম ‘পন ফেস্টিভাল’ (Pon Festival)। আসলে স্থানীয় জাভানিজ মুসলিমরা বলেন এটি তাঁদের শতাব্দী প্রাচীন রেওয়াজ। তাঁদের জীবনের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে এর ঐতিহ্য। এই রেওয়াজকেই উৎসবের রূপ দেওয়া হয় বছরের ওই নির্দিষ্ট দিনে। উৎসব চলে টানা ৩৫ দিন ধরে। কখনও তারও বেশি। দিনে গড়ে ৮,০০০ পর্যটক ভিড় জমান। পাহাড়ের নীচে যত্রতত্র নির্বিচারে চলে সঙ্গম। আগে মনে করা হত গাছের নীচে সঙ্গম করলেই পুণ্য হবে, তবে প্রশাসনের চোখ রাঙানিতে হোটেল, রেস্তোরাঁগুলিতে উপচে পড়ে ভিড়। স্থানীয়দের সঙ্গে এই সঙ্গমের খেলায় মেতে ওঠেন বিদেশি পর্যটকেরাও।
রীতি হল সম্পূর্ণ অপিরিচিত বা অনাত্মীয়ের সঙ্গে টানা ৩৫ দিন ধরে পর পর সাত বার যৌন সম্ভোগ করতে হবে। তবেই জীবনে আসবে শুভ মুহূর্ত। বিবাহিত নারী-পুরুষরাও এই রেওয়াজে অংশ নিতে পারেন। জাভানিজদের বিশ্বাস এই রীতি পালন করলে নাকি বিপুল পুণ্য অর্জন করা যায়।
জনশ্রুতি রয়েছে, নিজের সৎ মা নিয়াই অনজাভার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন রাজপুত্র প্যানগেরান সামোদ্রো। লোকচক্ষুর আড়ালে তাঁরা নিয়মিত মিলিত হতেন এই গুনুং কেমুকুস পাহাড়ের নীচে। রাজা সন্দেহ করলেও প্রমাণের অভাবে কাওকেই শাস্তি দিতে পারতেন না। একদিন সঙ্গমের সময় ধরা পড়ে যান দু’জনেই। রাজার আদেশে দু’জনকেই কুপিয়ে খুন করে পুঁতে দেওয়া হয় পাহাড়েরই নীচে। সেই থেকে এই পাহাড় হয়ে যায় পুণ্যভূমি। শুরু হয় নতুন রেওয়াজ। পাহাড়ের নীচে গিয়ে যৌনতায় লিপ্ত হবে অচেনা কারওর সঙ্গে। এই রীতি মেনে চললে দূর হবে সব বাধা।
প্রথমদিকে স্থানীয়দের মধ্যেই এই রীতির প্রচলন ছিল, ধীরে ধীরে সেটা সার্বিক আকার নেয়। উনিশ শতকের গোড়া থেকে গুনুঙ্গ কেমুকুসে এই রীতিকে ঘিরে শুরু হয় উৎসব। লোকের মুখে মুখে পাহাড়ের নতুন নাম ছড়িয়ে পড়ে ‘সেক্স মাউন্টেন’। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা ভিড় জমান সেখানে। টানা ৩৫ দিন ধরে চলে মেলা। বিশ্বের নানা দেশ থেকে যৌনকর্মীরা এসে ঘাঁটি গাড়েন জাভায়। রীতিমতো পয়সা দিয়ে হয় লেনদেন। সরকারি কর্মচারী থেকে বাড়ির গৃহবধূ, এমনকি একটা সময় প্রশাসনিক কর্তাদেরও অংশ নিতে দেখা গিয়েছিল এই রীতিতে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে তাইওয়ান থেকে একটি সভ্যতা ইন্দোনেশিয়ায় বসতি গড়ে তোলে খ্রিষ্টজন্মের দুই হাজার বছর আগে। ধীরে ধীরে তারা সরতে থাকে পূর্ব উপকূলের দিকে। কৃষিকেন্দ্রিক গ্রামীণ সমাজ গড়ে ওঠে। তৈরি হয় অসংখ্য শহর-নগর-বন্দর। সমুদ্র উপকূলে বিস্তার ঘটে ব্যবসা-বাণিজ্যের। চিন ও ভারতের সঙ্গে গড়ে ওঠে বাণিজ্যিক সম্পর্ক। যার ফলে দেশটিতে এক দিকে হিন্দু ধর্ম ও অন্য দিক থেকে বৌদ্ধ ধর্মের মিলন ঘটে। দুই ভাবধারাই দেখা যায় এখানকার অধিবাসীদের মধ্যে।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে মুসলিমদের আগমন ঘটে। উত্তর সুমাত্রা হয়ে ক্রমে মুসলমানরা ছড়িয়ে পড়ে হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত ইন্দোনেশিয়ায়। ষোড়শ শতাব্দীতে দেশটির প্রধান ধর্ম হয়ে যায় ইসলাম। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়েছিল বৌদ্ধ আর হিন্দুপ্রধান এ অঞ্চলে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার জনসংখ্যার প্রায় ৮৭ শতাংশই মুসলিম। তবে তার মধ্যে অনেক ভাগ রয়েছে। ধর্মীয় গোঁড়ামি যেমন রয়েছে, তেমনি আধুনিক মনস্ক জাভানিজ মুসলিমরাও রয়েছেন। হিন্দু, বুদ্ধ ধর্মের সঙ্গে ইসলামের সংমিশ্রণ ঘটেছে এই জাভানিজদের মধ্যে। তাঁরা মনে করেন, এই রীতি আসলে ঈশ্বরের উপাসনা। উৎসবের দিনে নিয়ম মেনে প্রথমে পাহাড়ের নীচে কবর দেওয়া রাজ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্য প্রার্থনা করা হয়। রীতিতে অংশ নেবেন যাঁরা তাঁদের পাহাড়ি ঝর্ণায় স্নান করে শুদ্ধ হয়ে সঙ্গমে লিপ্ত হতে হয়। টানা ৩৫ দিন ধরে চলে এই রেওয়াজ।
প্রাচীন রীতির নাম দিয়ে তার আড়ালে রমরম করে চলছে দেহব্যবসা, জাভার এই উৎসবকে ঘিরে একসময় ছিছিক্কার শুরু হয়েছিল নানা মহলে। টিভি চ্যানেলের একটি ডকুমেন্টারিতে দেখানে হয়েছিল কী ভাবে রীতির নাম দিয়ে যথেচ্ছভাবে যৌনাচার হচ্ছে মাউন্ট কেমুকুসে। দেখা যায়, পর্যটকদেরও অধিকাংশই যৌনকর্মী। শুধু পুণ্য অর্জনের নেশায় নয়, বেশিরভাগই এসেছেন রোজগারের আশায়। রীতিমতো মেলা বসিয়ে চলছে দেহব্যবসা।
জাভার ‘গাদজা মাদা ইউনিভার্সিটি’র সাইকোলজিস্ট কেওনটিজোরো সোয়েপার্নোর কথায়, “অদ্ভুত ব্যাপার, ওই এলাকায় মসজিদ রয়েছে, মন্দিরও রয়েছে, তাও চলছে এই অনাচার। ধর্মীয় রীতির নাম দিয়ে অশ্লীলতার বাড়বাড়ন্ত।” নানা মহল থেকে আপত্তি ওঠার পর ২০১৪ সালে সরকারি নির্দেশে এই প্রথা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তাতে তুমুল আপত্তি তোলেন স্থানীয় জাভানিজরা। কারণ তাঁদের রোজগারের অধিকাংশই আসে এই প্রথাকে কেন্দ্র করেই। পাহাড়ের আনাচ কানাচে অবৈধ ভাবে গজিয়ে ওঠে হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ, প্রশাসনের নজর এড়িয়ে চোরাগোপ্তা পথে এখনও নাকি চলছে এই রেওয়াজ।
Post a Comment