ধর্মের বেড়াজাল ছিন্ন করে খাস কলকাতার বুকে আরাধনা করা হয় চিনা কালীর, প্রসাদে দেওয়া হয় চিনা ভোগ



Odd বাংলা ডেস্ক: সারা দেশ এমনকী দেশের বাইরেও যে শক্তির আরাধনা হয় একথা সকলেরই জানা। স্থান-কাল-সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে মা কালী পূজিত হন সর্বত্র। তবে খাস কলকাতার বুকে এমন এক কালী মন্দির রয়েছে, যার আরাধনা করে আসছেন চিনা পুরোহিত। শক্তির আরাধনায় খাস কলকাতার বুকেই এক হয়েছে দুই দেশ। 

কলকাতার ট্যাংরায় অবস্থিত চায়না টাউনে রয়েছে সেই চিনা কালী মন্দির যেখানে মা কালীর নিত্য সেবা ও অন্যান্য পুজো করেন এক চিনা পুরোহিত। আর ট্য়াংরার এই মন্দির সকলের কাছে পরিচিত চিনা কালী মন্দির হিসাবে। হিন্দু নয় খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই এই কালীর পুজো করে থাকেন। কীভাবে উৎপত্তি হল এই চিনা কালী মন্দিরের? এই মন্দিরের উৎপত্তি নিয়ে কথিত রয়েছে যে, বেশ কয়েক বছর আগে এক বৌদ্ধ চিনা দম্পতির সন্তান এক অজানা অসুখের কবলে পড়েছিল। বহু চিকিৎসা করেও কোনও ফল মিলছিল না। চিকিৎকরাও একপ্রকার হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন কোনও প্রতিকারের উপায় না পেয়ে। এরপর এলাকায় এক গাছের নীচে পড়ে থাকা দুটি পাথরের সামনেই হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন দুই দম্পতি। 

Image Source- Facebook

অদ্ভুতভাবে একটু একটু করে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকেন তাঁদের সন্তান। এরপর থেকেই এক অদ্ভুত মায়াবলে ওই চিনা দম্পতির মনে শক্তির ওপর বিশেষ বিশ্বাস জন্মায় এবং তারপরই শক্তির উপাসনা করবেন বলে মনস্থির করেন তাঁরা। চিনা দম্পতির বিশ্বাসের ভিত্তিতেই চিনা পাড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় চিনা কালী মন্দির তারপর থেকে অসংখ্য বৌদ্ধ ও খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী মানুষ এই মন্দিরের সেবায় নিজেদের নিয়োগ করেন। সেই শুরু তারপর থেকে আজও তাঁদের হাতেই পূজিত হন মা কালী। 

মন্দিরটির আনুমানিক বয়স ৬৫ বছর। বলা হয়, যে দুটি পাথরের ওপর ভর করে দেবীর মাহাত্ম্য দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে, সেই পাথরদুটি আজও রয়েছে সেই মন্দিরে। সেইসঙ্গে সেখানে রয়েছে মহাদেবও। বর্তমানে মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন চ্যাং ইয়ি সেং নামে এক ব্যক্তি। তবে শক্তির উপাসনা করার জনন্য নিজের ধর্ম পরিবর্তন করেছেন তিনি। বৌদ্ধ থেকে হিন্দু ধর্মে নিয়েছেন তিনি। হিন্দু ধর্মের নিয়ম মেনে নিত্যদিন সন্ধ্যারতি করা, মাকে ভোগ নিবেদন এই সবটাই একা হাতে পালন করেন তিনি।

Image Source- Facebook
সবথেকে আকর্ষণীয় দিকটি হল এই মন্দিরে নিত্যদিন অসংখ্য খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষ আসেন দেবীর দর্শণ পেতে। তাঁরা মায়ের আরতিও করেন। চিনারা তাঁদের নিজস্ব কায়দায় হাত ওপর থেকে নীচে-এইভাবে আরতি করেন। মাকে তাংদের নিজের মতো করেই আরাধনা করেন তাঁরা। আর সবথেকে আশ্চর্যজনক বিষয়টি হল এই মন্দিরের প্রসাদ। প্রসাদ হিসাবে মাকে দেওয়া হয় চিন নুডুলস এবং চপস্যুই। মন্দিরে যঁরা মায়ের দর্শণ পেতে আসেন তাঁদেরও প্রসাদ হিসাবে এই নুডুলস প্রদান করা হয়। তবে মাকে কখনওই আমিষ প্রসাদ দেওয়া হয় না। তবে বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে মদ নিবেদন করা হয়। ট্যাংরার এই তিনা কালী মন্দিরে এলে বোঝা যায় শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের বাণী কতখানি সত্য, যে মাকে যে যেভাবেই ডাকুক না কেন তিনি সবার। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.