এই লোকটাকে চেনেন? দূরদর্শনের কার্টুন সিরিজ মীনা ইনিই এঁকেছিলেন


Odd বাংলা ডেস্ক: রাম মোহনের পেশাগত জীবনের শুরু হয় ১৯৫৬ সালে। গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়াস কার্টুন ফিল্মস ইউনিটের ফিল্ম ডিভিশনে চাকরি নেওয়ার মাধ্যমে তার এই যাত্রার আরম্ভ ঘটে। তবে ১৯৬৮ সালের নাগাদ তিনি ফিল্ম ডিভিশন ছেড়ে দিয়ে প্রাসাদ প্রোডাকশনের অ্যানিমেশন ডিভিশনের প্রধান হিসেবে যোগদান করেন৷ অ্যানিমেশনের প্রতি প্রবল আকর্ষণের দরুন নিজ উদ্যোগে ‘রাম মোহন বায়োগ্রাফিক্স’ নামে নিজের প্রোডাকশন কোম্পানিও প্রতিষ্ঠা করেন। মূলত কিছু কমার্শিয়াল প্রজেক্টে কাজ করত প্রতিষ্ঠানটি। জাপানের চলচ্চিত্র নির্মাতা ইউগো সাকোর সাথে মিলে ‘রামায়ণ: দ্য লিজেন্ড অভ প্রিন্স রাম' (১৯৯২) নামক অ্যানিমেটেড ফিচার পরিচালনাও করেন।


ঐ সময়ে আধুনিক অ্যানিমেশনের বিষয়টি ভারতের মানুষের কাছে নতুন ছিল। এটি একটি চমকপ্রদ একটি বিষয়ও বটে। এর সাথে আবার ভারতের মতো হিন্দু-প্রধান দেশে এরকম একটি অ্যানিমেটেড ফিচার যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এছাড়াও ভারতীয় বেশ কিছু চলচ্চিত্রে অ্যানিমেশনের পুরো কিংবা আংশিক কাজ করে বেশ সুনাম অর্জন করেন রাম মোহন। বি আর চোপড়ার ‘পতি পত্নী অর ও' (১৯৭৮)-এ একটি অ্যানিমেটেড গান, সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কা খিলাড়ি’-এর একটি অংশ এবং মৃণাল সেনের একটি হিন্দি ছবি ‘ভুবন সোম'-এ অ্যানিমেশনের কাজ করে দেন তিনি। তাছাড়া ‘বিবি ও বিবি', ‘কামচোর’ এবং ‘দো অউর দো পাঁচ'-এর মতো ছবিতেও তার কাজের নমুনা পাওয়া যায়।


অ্যানিমেশন নিয়ে সবসময়ই বেশ আশাবাদী ছিলেন রাম মোহন। অ্যানিমেশনে তরুণ প্রজন্মকে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন আরএম-ইউএসএল অ্যানিমেশন। তার পূর্ব-প্রতিষ্ঠিত অ্যানিমেশন কোম্পানি ‘রাম মোহন বায়োগ্রাফিক্স’ সেই সময়ের ভারতের প্রধান পোস্ট প্রোডাকশন স্টুডিও ‘ইউনাইটেড স্টুডিওস লিমিটেড’-এর সাথে মিলে যাত্রা শুরু করে এই অ্যানিমেশন হাউজটির। কোম্পানিটির মালিক এবং অ্যানিমেশনের গুরু রাম মোহনের লক্ষ্য ছিলো এমন একটি অ্যানিমেশন হাউজ নির্মাণ করা, যার মধ্যে কাজ করার মতো যথেষ্ট জায়গা ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি থাকবে। উল্লেখ্য যে, হাউজটি প্রায় ৫,০০০ বর্গফুটের ছিল যেখানে ১৩টি অ্যানিমো ওয়ার্ক স্টেশন রয়েছে। রাম মোহন একটি সাক্ষাৎকারে বলেন যে, ১৯৯৭ সালের আগে রাম মোহন বায়োগ্রাফিক্সে শিল্পীদের অভাবে বেশি বড় কাজ করা সম্ভব হতো না। বেশিরভাগ সময় ছোট ছোট কমার্শিয়াল অ্যাড ও প্রজেক্ট করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই কোম্পানির কাজ। গুরুত্বপূর্ণ ও বড় কাজগুলোর জন্য বৈদেশিক কোম্পানির সহযোগিতা প্রয়োজন হতো। উদাহরণস্বরূপ তিনি মীনা কার্টুনের কথা বলেছিলেন। ১৯৯২ সালে মীনা কার্টুনের কাজ শুরু করলে তার সাথে শুধুমাত্র ২০-২৫ জন শিল্পী কাজ করতেন। সেজন্য তিনি ম্যানিলার ফিল-কার্টুনসের সহায়তা নেন। অর্থাৎ, প্রথম কিছু পর্ব ম্যানিলা শহরেই নির্মিত হয়। পার্টনারশিপ করার ফলে আরএম-ইউএসএলের কাজ করার ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। আর এর ফলেই মীনার ১২ মিনিট করে তিনটি পর্ব তৈরি করা সম্ভব হয়৷ আবার পূর্ব ও দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সারা কার্টুনের ১৬ মিনিটের পর্বের জন্য কাজ করে রাম মোহনের কোম্পানিটি। সারার চরিত্রটি হলো আফ্রিকার একটি কিশোরীর।


০-এর দশকে দক্ষিণ এশিয়ায়, বিশেষ করে উপমহাদেশে যখন নারীদের অধিকার অনবরত ক্ষুণ্ণ হতে থাকে এবং নারী-পুরুষের বৈষম্য নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় অনুভব করা যায়, তখন ইউনিসেফ এমন একটি কার্টুন তৈরির উদ্যোগ নেয়, যা শুধু মানুষদেরকে বিনোদনই দেবে না, বরং নারী বা মেয়েদের প্রতি তাদের দৃষ্টিতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তাছাড়া অন্যান্য সামাজিক সমস্যাকে সকলের সামনে তা তুলে ধরে সমাধানও দেখিয়ে দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট চরিত্র সৃষ্টি করার চেষ্টা করে ইউনিসেফ। সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য কিন্তু অতি সাধারণ বৈশিষ্ট্যের একটি মুখাবয়ব সৃষ্টির জন্য তখন রাম মোহনের দ্বারস্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। রাম মোহন নিজ হাতে রং তুলিতে আঁকেন আমাদের সকলের প্রিয় মীনাকে। মীনা কার্টুনের প্রতিটি চরিত্রই ফুটে ওঠে রাম মোহনের আঁকা ছবিতে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত মীনা কার্টুন সিরিজের ১৬টি পর্ব তিনি নিজেই পরিচালনা করেন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.