সাবধান! আজ রাতেই পেতে পারেন 'নিশির ডাক'
Odd বাংলা ডেস্ক: ভুত সমাজে সবচেয়ে ভয়ংকর হিসাবে গণ্য করা হয় নিশিকে। প্রচলিত কথায়, কোনও কুচক্রী তান্ত্রিক তার শত্রুকে শায়েস্তা করার জন্য নিশির সাহায্য নেয়। গভীর রাতে শিকারকে তার প্রিয় মানুষের গলায় নাম ধরে ডাকে নিশি। তাকে বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। তাপর আর বাড়ি ফেরে না সেই ব্যক্তি। লোককাহিনী মতে, নিশিরা দুই বারের বেশি কাউকে ডাকতে পারে না। ফলে বলা হয়, রাতেরবেলা তিনবার নিজের নামে ডাক শুনলে তবেই আওয়াজ করা উচিত।
‘আরবান লিজেন্ডস’ বলে, কোনও অপতান্ত্রিক একটা সবুজ ডাবের ছাল ছুলে তাতে সিঁদুর মাখায়। তার পরে তার মুখটি কেটে নিয়ে তার জলকে মন্ত্রঃপূত করে। এবং আরও কীসব কীসব করার পরে সেই ডাব হাতে নিয়ে যাকে নিশি ডাকা হবে, তার বাড়ির কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন নিশুতি রাত। অমাবস্যা-টস্যা হবে। সেখানেই নাকি ওই ডাবের ভিতর থেকে ভেসে আসে ডাক, যা শুনতে লাগে অভীষ্ট ব্যক্তির কোনও চেনা মানুষের কণ্ঠস্বরের মতো। এই ডাকে যদি লোকটি সাড়া দেয়, তাহলে তান্ত্রিক সেই ডাবের মুখটি খপ করে বন্ধ করে দেন। আর তৎক্ষণাৎ সেই লোকটি হার্টফেল করে মারা যায়।
আবার অন্য মতে, নিশি সাধারণত ছোট ছেলেমেয়েদেরই টার্গেট করে। তার ডাক দিযে সে তাদের নিয়ে যায় তার নিজস্ব জগতে। অনেকটা হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাদের কী ব্যবস্থা করে নিশি, তা কেউ অবশ্য বলতে পারেননি। কারণ, সেই বিবরণ দেওয়ার জন্যে কেউ ফিরেই আসেনি ‘নিশিলোক’ থেকে। কল্পনা করতে ইচ্ছে হয়, নিশি কি পিটার প্যানের মতো কোনও জীব, যে খুদে ছেলেপুলেদের ভুলিয়ে ভালিয়ে চাঁদে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নিশি মোটেই পিটার প্যানের মতো মজাদার নয়। সে সিরিয়াসলি ডেঞ্জারাস। কিন্তু তার উৎস ঠিক কোথায়। আর যাই হোক, তন্ত্রে সে নিহিত নেই। তা হলে?
সে যেমনই হোক, নিশি কিন্তু একান্ত বাঙালি ভূত। তার উৎস হয়তো বাংলার আদিবাসী সমাজের ভাবনায়। কিন্তু সে ছড়িয়ে গিয়েছে বাংলার গ্রাম থেকে নগরে। শহর কলকাতা তাকে লালন করেছে সস্নেহে। সে বেঁচে থেকেছে না-ঘুমোনো শিশুদের রাত্রিকালীন কল্পনায়। সে টিকে রয়েছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে যাওয়া মৌখিক পরম্পরায়। সে শ্বাস নেয় আজকের ইন্টারনেট দুনিয়াতেও। খাস বাঙালি এই অপ্রাকৃতের আখ্যান পড়ে সাহেবরা কী বললেন না বললেন, তাতে কিছু এসে যায় না। বই-বিমুখ, ঠাকুমা-বিচ্ছিন্ন প্রজন্ম কি-বোর্ড দাবিয়ে মাউস হাতড়েও পৌঁছতে পারছে তার কাছে, এ কি কম পাওনা!
Post a Comment