সন্তান চোখ পিট পিট বা অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গী করে? টুরেট সিনড্রোম নয় তো?


Odd বাংলা ডেস্ক: টিক সিনড্রোমের বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটি টুরেট সিনড্রোম। যখন অনেকগুলো মোটর টিক এবং অন্তত একটা ফোনেটিক টিক এক বছরের বেশি সময় ধরে রোগীর শরীরে থাকে তখন তাকে টুরেট সিনড্রোম বলা হয়।

বারবার চোখের পাতা ফেলা, কাশি দেওয়া, গলা পরিষ্কার করা এবং মুখের বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করা টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণ।

ধারণা করা হয় ছোট্ট বাচ্চা এবং স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে শতকরা এক ভাগ টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত। একসময় একে অদ্ভুত এবং দুর্লভ রোগ বলে মনে করা হত এবং কপ্রোলেলিয়া নামক রোগের সাথে একই সঙ্গে পাওয়া যেত।

জিন মারটিন চারকট নামের এক ব্যক্তি তার রেসিডেন্ট “জরজেস আলবার্ট এডওয়ার্ড ব্রুটাস গিলেস দে লা টুরেট”এর নামে এই রোগের নামকরণ করেন।

আলবার্ট টুরেট একজন ফরাসী চিকিৎসক এবং নিউরোলজিস্ট ছিলেন যিনি ১৮৮৫ সালে টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত তার নয়জন রোগীর কথা প্রকাশ করেন।

গৎবাঁধা সংজ্ঞার অনুবাদ করলে বলা যায় যে, টুরেট সিনড্রোম সামগ্রিকভাবে হচ্ছে একটি স্নায়বিক সমস্যা যেখানে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সঞ্চালন এর অবচেতন পুনরাবৃত্তি হয়। দৃশ্যমানভাবে মনে হয় যে স্বাভাবিক আচরণগুলো খুবই অস্বাভাবিকভাবে করা হচ্ছে। টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের মনে হয় যে তার চোখের পাতায় কিছু পড়েছে তাই বার বার চোখের পাতা ফেলা দরকার, কিংবা গলায় কোনো কিছু আটকে রয়েছে তাই বারবার ঢোক গেলা দরকার, সাথে বারবার কাঁধ ঝাঁকানো বা শ্রাগ করা তো আছেই।

টুরেট সিনড্রোম কি বংশগত?
অনেক আগে গবেষণাপত্রে মনে করা হত যে টুরেট সিনড্রোমের জন্য বংশগত কোন প্রভাবক বা জিন দায়ী, বংশগতির “অটোসোমাল ডমিন্যান্ট মোড” এর জন্যই বাচ্চাতে এমন টিক সিনড্রোম বা টুরেট সিনড্রোম দেখা দেয়।



কিন্তু পরবর্তীতে গবেষকরা পেয়েছেন যে বংশগতির এই সূত্র অনেক জটিল এবং ছোটখাট কয়েকটি জিন বংশানুক্রমিকভাবে টুরেট টাইপের সিনড্রোমগুলোর জন্য দায়ী হলেও শিশুর চারপাশের অবস্থাও এর জন্য দায়ী। সাধারণত একজন টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত রোগীর কাছ থেকে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ জিন বংশগতভাবে চলে আসতে পারে কিন্তু তারপরেও পরিবারের কোন সদস্যের টুরেট সিনড্রোম থাকলেও তার পরবর্তী প্রজন্মে অনেক সময় সেটা নাও থাকতে পারে কিংবা থাকলেও খুবই কম আকারে দেখা যেতে পারে। রোগী পুরুষ না মহিলা সেটার উপরেও অনেকসময় টুরেট সিনড্রোমের প্রকাশ হবে কি হবে না সেটা নির্ভর করে। তুলনামূলকভাবে মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের এমন সিনড্রোম বেশি হয়ে থাকে।

ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
যদিও টুরেট সিনড্রোম সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যাওয়ার মত কোন ওষুধ নেই, আশার কথা হচ্ছে এটা তেমন কোন ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে না মানুষের শারীরিক বা ব্যক্তিগত জীবনের উপর।অনেক সময় দেখা যায় যে বয়সের সাথে এই সিনড্রোমের অনেক লক্ষণই কমে কিংবা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসে। টুরেট সিনড্রোম কখনও আক্রান্ত ব্যক্তির বুদ্ধিমত্তা কিংবা দক্ষতার উপর প্রভাব ফেলে না। কর্মজীবনে বা পরবর্তীতে তেমন সমস্যা না হলেও, বিষণ্ণতায় ভোগা কিংবা আতংকগ্রস্থ হওয়ার মত নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রাত্যহিক জীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।

টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত বাচ্চাদের যত্নঃ
টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত বাচ্চাদের স্কুল নিয়ে সাধারণত তেমন বড়ধরনের সমস্যা হয়না। তারপরেও অভিভাবককে সতর্ক থাকতে হয়। শিখার সমস্যা, অবসেসিভ-কমপালসিভ সিম্পটম কিংবা লেখার সময় হাত কাঁপা এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে কিছু ক্ষেত্রে। তাই টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুসন্তানকে স্কুলে পাঠানোর আগে বাড়িতে কিছু প্রি-স্কুলিং আইডিয়া দিয়ে রাখতে হবে। শিশুদের জন্য উপযোগী বিশেষ স্কুলে পাঠানো যেতে পারে। শিক্ষার পথ সুগম করতে অভিভাবক, শিক্ষক এবং স্কুল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ভালো সম্পর্ক আর বোঝাপড়ার কোন বিকল্প নেই।



অনেক সময় এই সিনড্রোমে আক্রান্ত বাচ্চার লেখার সময় সমস্যা হয় কিংবা নির্দিষ্ট কোন পরিবেশে নিজেকে সহজে মানিয়ে নিতে পারেনা। পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়তে পারে এমনকি। তখন স্কুল কর্তৃপক্ষের উচিৎ আসম্ভব হলে শিশুকে স্বাচ্ছন্দ্য হয় এমন জায়গায় পরীক্ষা নেওয়া। লিখিত পরীক্ষার বদলে মৌখিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করাও সমাধান হতে পারে। এভাবে আস্তে আস্তে শিশু স্কুলের সাথে এবং বাইরের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবে,ফলে টুরেট সিনড্রোমের প্রবণতা অনেক কমে যাবে।

ডেভিড বেকহাম, মোজারট, হুই মেন্ডেল, লেখক স্যামুয়েল জনসনসহ অনেক বিখ্যাত মানুষই টুরেট সিনড্রোমে আক্রান্ত। কিন্তু এটা তাদের সাফল্যের পথে কখনই অন্তরায় হয়ে উঠতে পারেনি।


Blogger দ্বারা পরিচালিত.