যৌন নির্যাতন সয়ে, আধপেটা খেয়ে আপনার সাধের ডার্ক চকোলেট-এর আঁধারে নিমজ্জিত হাজার হাজার শিশুর শৈশব!


ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: ডার্ক চকোলেট, নামটার মধ্যেই মিশে আছে একটা অদ্ভুত ভাললাগা, বিশেষত যাঁরা আমার মতো চকোলেট প্রিয় তাঁদের জীবনে সুখে-দুঃখে, আনন্দে-আহ্লাদে, মান-অভিমানে মিশে রয়েছে ডার্ক চকোলেট। কোনও আনন্দ-অনুষ্ঠান হোক কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার মানভঞ্জন, সবেতেই ডার্ক চকোলেটের উপস্থিতি একটা আলাদা মাত্রা যোগ করে। তবে ভীষণরকমের বিষণ্নতার মধ্যেও যখন আপনার মুখে এক টুকরো হাসি এনে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে ডার্ক চকোলেট। কিন্তু এর নেপথ্যে রয়েছে কত কান্না, কত ছোট ছোট ছেলে-মেয়ের হারিয়ে যাওয়া শৈশব, তার ইয়ত্তা নেই। নামের মতো ডার্ক চকোলেটের নেপথ্যের গল্প কিন্তু ভীষণ অন্ধকারাচ্ছন্ন। 

আচ্ছা আপনি যদি ডার্ক চকোলেট প্রেমী হন আপনা কে যদি নিয়ে যাওয়া হয় চকোলেটের দুনিয়ায়, তাহলে আপনি কী করবেন? নিশ্চটয় সেখানেই কাটিয়ে দিতে চাইবেন সারা জীবন? এই পৃথিবীতে এমন বহু মানুষ রয়েছে যাদের জীবনে ডার্ক চকোলেট নামটাই একটা অভিশাপ। কেন, তা জানতে গেলে আমাদের চলে যেতে হবে ডার্ক চকোলেট তৈরির নেপথ্যের কাহিনিতে। দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি দেশ ঘানা এবং আইভরি কোস্ট-এ সারা বিশ্বের ৭০ শতাংশ কোকো উৎপাদন করা হয়। আর আইভরি কোস্টের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে ডার্ক চকোলেট বিক্রির টাকা থেকে। আইভরি কোস্ট থেকে সারা দেশে আর এই দেশের কোকো ফার্মগুলিতে কাজ করে কয়েক হাজার শিশু। নিজেদের উজ্জ্বল শৈশবকে জলাঞ্জলি দিয়ে তারা বাধ্য হয় এই ফার্মে হাড় ভাঙা পরিশ্রম করতে। কারণ পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত গ্রামে অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে উঠে আসা এইসব শিশুরাই পয়সা রোজগার করে তাদের পরিবারকে সাহায্য করে।  
Image Source- Google
পাচারকারীরা শিশুদের পরিবারকে প্রতিশ্রুতি দেয় যে তাদের খুব ভাল বেতন দেওয়া হবে, কিন্তু দিনপ্রতি কাজ করলে তাদের দেওয়া হয় ২ ডলারেরও কম (ভারতীয় মূল্যে ১৪২.৭৫ টাকারও কম)! এইসব কোকো ফার্মগুলিতে কাজ করার জন্য মালি, বুরকিনা ফাসো-র মতো প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে প্রতি বছর অগণিত শিশু পাচার করা হয় ঘানা ও আইভরি কোস্টের চকোলেট ফার্মে। তারপর তাদের দিয়ে ফার্মের যাবতীয় কাজ করানো হয়। পালানোর কোনও অবকাশ নেই। 
Image Source- Google

কতটা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয় তাদের?- প্রতিদিন সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে পড়া, তারপর সারিবদ্ধ হয়ে ফার্মহাউসে পৌঁছনোর পরেই শুরু হয় কাজ। এরপর রাত পর্যন্ত চলে কাজ। খাওয়া বলতে একটু কলা আর সেদ্ধ ভুট্টা। এরপর তাদের বন্ধ করে রাখা হয় দরজা-জানলা-বিহীন একটি ঘরে। প্রয়োজনে শিকল দিয়েও বেঁধে রাখা হয়। কারণ এই কঠোর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে নিত্যদিন পালানোর চেষ্টা করে এইসব শিশুরা। 
Image Source- Google

সবথেকে বিস্ময়কর ঘটনা হল, এইসব কোকো ফার্মগুলিতে শিশুশ্রমিকদের বেশিরভাগের বয়স ১২-১৬ বছর। তবে খুঁজলে সেখানে ৫বছরের কম বয়সী শিশুদেরও খুঁজে পাওয়া যায়। তারওপর আবার এইসব শিশুদের মধ্যে ৪০ শতাংশই মেয়ে। এদের অধিকাংশেরই কিশোর থেকে যৌবন কেটে যায় এইসব কোকো ফার্মে। সেইসঙ্গে ফার্মের মালিক, শ্রমিক, ঠিকাকর্মী এমনকী পুলিশেরও যৌন চাহিদা মেটায় তারা। সকাল হলেই এইসব শিশুরা কোকো গাছে ওঠে কোকো কাটতে, সঙ্গে থাকে ভারী ও ধারালো অস্ত্র (ম্যাশে), যার সাহায্যে কোকোবিন কাটে তারা। তবে কোকো কাটতে গিয়ে অনেক সময়ে ভুলবশত হাতের ওপর কোপ পড়ে, আর ক্ষতবিক্ষত হয় কচি কচি হাত। আর কোনও কারণে যদি কেউ বিশ্রাম নেয় তাহলেই পিঠে পড়ে বেতের আঘাত। তারপর কোকো বিনের ভারি বস্তা পিঠে করে বয়ে নিয়ে যেতে হয়। আর এইসবের কাছে আন্তর্জাতিক শ্রম আইন রম্যরচনা ছাড়া আর কিছুই নয়। 
Image Source- Google

আজকের আধুনিক যুগে এইসব ঘটনা কেবলই গল্পগাঁথা বলে মনে হতে পারে। কিন্তু প্রদীপের নীচের আঁধার ঘোচাতে পারে এমন সাধ্য কার? আর এই আঁধার অতিক্রম করেই আপনি শখ করে আপনার ফ্রিজে জমিয়ে রাখেন আপনার পছন্দের ডার্ক চকোলেট।    
Blogger দ্বারা পরিচালিত.