পৃথিবীর প্রথম লেসবিয়ান নারীকে চেনেন?


Odd বাংলা ডেস্ক: ইংল্যান্ডের হ্যালিফ্যাক্স শহরের এক স্কুল শিক্ষিকা ১৯৮৩ সালে হঠাৎ করেই খোঁজ পেয়েছিলেন দেড়শ' বছরের পুরোনো কিছু ডায়েরির, যা ওই শহরেরই এ্যান লিস্টার নামে এক নারীর লেখা। সেটি লেখা হয়েছে সাংকেতিক ভাষায়, হাতের লেখাটিও দুর্বোধ্য। কিন্তু হেলেনা হুইটব্রেড নামে সেই মহিলার কৌতুহল জাগিয়ে তোলে ডায়েরিটি। সেই সাংকেতিক ভাষার পাঠোদ্ধার করতে শুরু করে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন হেলেনা। কারণ সেই ডায়েরিতে পাতার পর পাতা জুড়ে লেখা রয়েছে লেসবিয়ান প্রেম ও যৌনতার রগরগে সব বর্ণনা। এ্যান লিস্টার ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর বহু ভূসম্পত্তির মালিক এক নারী, তবে সেই ডায়েরি প্রকাশের পরই প্রথম জানা যায় যে তিনি ছিলেন লেসবিয়ান, একজন 'নারী শিকারী'। তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিল একাধিক নারীর। তার সেই ডায়েরি যখন বই হয়ে বেরোলো - তখন পাঠকরাও তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন সে সব রগরগে বর্ণনা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ্যান লিস্টারকেই বলা যায় আধুনিক যুগের প্রথম 'লেসবিয়ান' বা নারী সমকামী। তিনি যখন লেসবিয়ান জীবন যাপন করছিলেন - তখন এই 'লেসবিয়ান' শব্দটিরও জন্ম হয় নি।

এর আগেকার কোনো ঐতিহাসিক রেকর্ডে নারীর সাথে নারীর যৌনসম্পর্কের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। তাই এ্যানের জার্নালে একজন লেসবিয়ানের যে জীবন ফুটে উঠেছে - তাতে অনেকেই ভাবতে পারেন নি যে এগুলো আসলেই বাস্তবে ঘটেছিল । অনেকে মনে করেছিলেন, এই ডায়েরিগুলো ভুয়ো। যিনি প্রথম সেই সাংকেতিক ভাষায় লেখা ডায়েরির রহস্য উদ্ঘাটন করেছিলেন - সেই হেলেনা হুইটব্রেড ছিলেন একজন শিক্ষক ও ইতিহাসবিদ। এ্যান লিস্টারের ডায়েরির পাঠোদ্ধার করতে পাঁচ বছর ব্যয় করেছিলেন তিনি। এ্যান লিস্টার ছিলেন 'পুরুষালী চেহারার এক নারী' হেলেনা হুইটব্রেড বলছিলেন, "আমার মনে হয়, এ্যান লিস্টারের জীবনকে বলা যায় হ্যালিফ্যাক্স শহরের 'বেস্ট কেপ্ট সিক্রেট' - যে কথা ২০০ বছরেও কেউ জানতে পারে নি।" এ্যান লিস্টারের জন্ম ১৭৯১ সালে, উত্তর ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার কাউন্টির হ্যালিফ্যাক্স শহরে। তিনি ছিলেন ব্যতিক্রমী এক নারী। এমন পোশাক পরতেন, এমনভাবে হাঁটতেন যে লোকে তাকে পুরুষ মনে করতো। শহরের লোকেরা তাকে ডাকতো 'জেন্টলম্যান জ্যাক' নামে। এ্যান লিস্টার ছিলেন তীব্র স্বাধীনচেতা - সে যুগের ইংল্যান্ডের অনেক সামাজিক রীতিনীতিকেই তিনি থোড়াই কেয়ার করতেন।

ছোটবেলায় তিনি এমনই দুরন্ত ছিলেন যে তার মা তাকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। ওই বোর্ডিং স্কুলে থেকে তিনি গ্রীক ও ফরাসী ভাষা, দর্শন, গণিত, ভূতত্ববিদ্যা এবং মহাকাশবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন, এবং সমসাময়িক মেয়েদের চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত হয়ে ওঠেন। সে সময়ই তার ব্যক্তিত্বের সেই বিশেষ দিকটি প্রকাশ পেতে থাকে - তা হলো: নারীদের প্রতি তার আকর্ষণ। তার প্রথম যৌন অভিজ্ঞতা হয় ওই স্কুলেরই আরেক ছাত্রী এলিজা রেইনের সাথে। তারা দু'জনেই তাদের যৌন অভিজ্ঞতার ডায়েরি রাখতেন, এবং সেটা আড়াল করতে 'ফেলিক্স' শব্দটি ব্যবহার করতেন। কিন্তু এ্যান চাইতেন তাদের যৌন সম্পর্কের আরো বেশি বিস্তারিত খুঁটিনাটি ডায়েরির পাতায় লিখে রাখতে। সে জন্য তিনি নিজেই তৈরি করলেন এক সাংকেতিক ভাষা - যাতে তিনি ব্যবহার করতেন গ্রীক ও ল্যাটিন শব্দ, গণিত ও রাশিচক্রের নানা প্রতীক।

এ্যান শুধু এলিজাকে পেয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না। ধীরে ধীরে তার মধ্যে অন্য আরো নারীর জন্য কামনা জেগে উঠলো। আর এর ফলে এলিজার মধ্যে দেখা দিল বিষণ্ণতা রোগ - যা থেকে তিনি কখনো সেরে ওঠেন নি। 'এ্যান লিস্টার ছিলেন শুধু লেসবিয়ান নয়, এক শিকারী' হেলেনা বলছেন: "এ্যানের ভালোবাসার পাত্র ছিলো মেয়েরা। তিনি বার বার মেয়েদের প্রেমে পড়েছেন।" "যদি এ্যান লিস্টার একবার আপনাকে পটাতে পারেন - তাহলে তা বিছানা পর্যন্ত গড়াক বা চিঠিপত্র পর্যন্তই সীমিত থাকুক - তাহলে আপনি তার প্রতি মুগ্ধতা থেকে আর বেরোতে পারবেন না। তার ডায়েরি পড়ে আমি নিজেই মোহিত হয়ে গেছি" - বলছিলেন হেলেনা। এ্যান লিস্টার ছিলেন তার বাবা মায়ের ৬ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। তার বাবা ছিলেন একজন সৈনিক। তিনি আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় লড়াই করেছিলেন। হ্যালিফ্যাক্সের নামী পরিবারগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এই লিস্টার পরিবার। তার ভাইয়েরা মারা যাবার পর এ্যানই ৪০০ একরের পারিবারিক ভূসম্পত্তির মালিক হন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.