জানুন হস্তমৈথুনের অখণ্ড ইতিহাস, নিষিদ্ধ যে বিষয়ের উল্লেখ আছে প্রাচীন গুহাচিত্রে


Odd বাংলা ডেস্ক: সেই গুহাবাসী মানুষের সময় থেকেই হস্তমৈথুনের নিদর্শন পাওয়া যায় বিভিন্ন গুহাচিত্রের মাধ্যমে। এরপরে নানান প্রাচীন সভ্যতায় এর রেওয়াজ ছিল বলে দেখা গেছে। প্রাচীন গ্রীক, ব্যাবিলনীয়, মিশরীয় সভ্যতায় এর ভুরি ভুরি নিদর্শন। প্রাচীন গ্রীসে পুরুষ এবং মহিলা উভয়েই হাত এবং অন্যান্য বস্তুর সাহায্যে স্বমেহনে অভ্যস্ত ছিলেন। সেলফ সেক্সকে ঘিরে নানারকম রিচুয়ালস ও চালু ছিল সেই সময়। প্রাচীন চীন দেশেও হস্তমৈথুনের নিদর্শন পাওয়া যায়। তবে প্রাচীন সভ্যতায় এটিকে পাপ কাজ বলে মনে না করলেও এর ফলে শারীরিক ক্ষতি হবার ভয় থেকে তারা মুক্ত ছিল না। চীনদেশে যেমন এই ধারণা প্রচলিত ছিল যে হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত করলে দেহের ভাইটাল শক্তির ক্ষয় হয় এবং সেটা স্বাস্থ্যের পক্ষে বিপজ্জনক। আধুনিক গবেষণা যদিও বলে এই ধরনের ভয় সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, তবু সেই সময় কেন এরকম আশঙ্কা মানুষের মনে ছিল সেটা আন্দাজ করাই যায়। তখনও দেহে কোষের ভূমিকা সম্পর্কে মানুষ অবগত ছিলনা, জানতনা যে রক্ত থেকে শুরু করে দেহের অন্যান্য সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কোষই কিছুদিন পর মরে যায়, আবার নতুন করে নতুন কোষের জন্ম হয়। তাই রক্তদান করলে যেমন মানুষের ক্ষতি হয়না, তেমনই দেহ থেকে বীর্য বার হয়ে গেলেও বীর্য বা শুক্রাণু কমে যায়না।

ভারতেও এই ধরনের ভয়ের নিদর্শন পাওয়া গেছে। বৃহৎ আরণ্যক উপনিষদে বর্ণিত আছে যে অপ্রয়োজনে বীর্যক্ষয় স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর। মনু সংহিতায় বলা হয়েছে দেহের সুখলাভের জন্য স্বমেহন করলে সেটা পাপ এবং তার প্রায়শ্চিত্ত করা প্রয়োজন। তবু বলা যেতে পারে সনাতন হিন্দু ধর্মই ছিল সমস্ত প্রাচীন ধর্মের মধ্যে যৌনতার ব্যাপারে সবচেয়ে মুক্তমনা। এই ধরনের ছুটকো ছাটকা কিছু নির্দেশ বাদে বাদবাকি সমস্ত জায়গাতেই যৌনতার ব্যাপারে কোনও রাখঢাক করা হয়নি, বরং সেটিকে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বাৎস্যায়নে কামসূত্রে তো হস্তমৈথুনের ব্যাপারে আলাদা করে বর্ণনাই আছে, কিভাবে শ্রেষ্ট উপায়ে সেটা করা যায় তারও নির্দেশ দেওয়া আছে। দুর্ভাগ্যবশত সনাতন ভারতের সেই মুক্ত মন পরবর্তীকালে সঙ্কীর্ণ হয়ে এসেছে। তার ওপর ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনও তার ভিক্টোরিয়ান মনোভাব চাপিয়ে দিয়েছে ভারতীয় সমাজের ওপর।  তাই কামসূত্র হয়ে গেছে "নিষিদ্ধ" বই, আর ঘেঁটে যাওয়া ব্রহ্মচর্যের কনসেপ্ট চাপানোর চেষ্টা চালানো হয়েছে কিশোরদের ওপর। আর কিশোরীদের? ধুর! মেয়েদের আবার যৌন খিদে থাকতে আছে নাকি?

নানান প্রাচীন সভ্যতায় হস্তমৈথুনের দিব্যি চল থাকলেও অষ্টাদশ শতকের শুরুর দিক থেকে বিভিন্ন দেশে শুরু হয় এর প্রবল বিরোধিতা। হঠাৎ করে শুরু হয় বললে ভুল হবে। গোঁড়া ধার্মিকরা বহুদিন থেকেই এই অভ্যাসকে "পাপ" আখ্যা দিয়ে মানুষকে ভয় দেখিয়ে আসছেন। ইসলাম, খ্রীষ্টান, ইহুদী সব ধর্মের ধর্মগুরুরাই এর বিরোধিতা করেছেন, সে তাঁদের মূল ধর্মগ্রন্থে স্পেসিফিকালি একে পাপ বলে উল্লেখ থাক বা না থাক। আসলে সন্তান ধারনের প্রয়োজন ছাড়াও স্রেফ দৈহিক সুখলাভের জন্য যৌনতা – এই ব্যাপারটাই সব ধর্মের না-পসন্দ। "প্রোক্রিয়েশন" এর বাণী আউড়ে খ্রীষ্টান ক্যাথলিক চার্চ গুলো অন্য যে কোনো ধরণের যৌনতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। শুধু হস্তমৈথুন নয়, তার মধ্যে রয়েছে সমকামিতা, ওরাল বা অ্যানাল সেক্স, এমনকি জন্মনিয়ন্ত্রণের অন্য কন্ডোম জাতীয় ব্যারিয়ারের ব্যবহারও। এমনকি মাদার টেরেসার মত ব্যক্তিত্বও এই ধরণের প্রচার করে গেছেন! এক সময় চার্চ এমনও বলেছে যে ধর্ষণের চেয়েও হস্তমৈথুন বড় পাপ। কেন? না ধর্ষণে তো তাও "প্রোক্রিয়েশন" অর্থাৎ নতুন শিশুর জন্মের সম্ভাবনা থাকে, হস্তমৈথুনে সেটাও নেই!! আমেরিকার কিছু অঞ্চলে হস্তমৈথুনের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডও ঘোষণা করা হয়েছিল!


ইহুদীরাও এই ধরণের তত্ত্বে বিশ্বাস করত। তাই যে ধরণের যৌনতায় সন্তানলাভের সম্ভাবনা নেই তাকে পাপ হিসেবে ঘোষণা করেছিল তারা। বিশেষ করে "পুল আউট" পদ্ধতি, অর্থাৎ সঙ্গমের সময় যোনির বাইরে বীর্যপাতের মাধ্যমে কন্ট্রাসেপশন অভ্যাস করলেও সেটা অপরাধ হিসেবে গণ্য হত। গোঁড়া ধার্মিকরা তো ছিলেনই, অষ্টাদশ শতকের গোড়ায় শুরু হল ডাক্তারদের তরফে হস্তমৈথুনের বিরোধিতা। সুইস ডাক্তার স্যামুয়েল টিসোর লেখা বিখ্যাত বই "ওনানিসম" এ ব্যাখ্যা করা হয় যে হস্তমৈথুন করলে গেঁটে বাত এবং দৃষ্টিশক্তির সমস্যা থেকে শুরু করে নার্ভাস সিস্টেমের চরম ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। আরও বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তার এই ধরণের প্রচার চালাতে থাকেন। ধর্মবিশ্বাসীরা তো আগেই পাপের ভয়ে সিঁটিয়ে ছিলেন, এখন অন্যান্যরাও ভয় পেতে শুরু করলেন। এই ভয় ছড়িয়ে গেল সারা বিশ্বেই। মার্ক টোয়েনের মত ব্যক্তিত্বও এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছিলেন "When you feel a revolutionary uprising in your system, get your Vendome Column down some other way- don't jerk it down." অথচ সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া ছেলে মেয়েরা তো এত জানেনা। তারা হস্তমৈথুন করতে গিয়ে অনেক সময়ই ধরা পড়ে যায় বাবা মার কাছে। তারপর যা হয় সে এক ভয়ঙ্কর ব্যাপার। বাবা মা রা সন্তানের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে এইসব হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া শুরু করলেন। এবং সেই ডাক্তাররা চিকিৎসা হিসেবে ছেলেদের লিঙ্গের ফোরস্কিন বিশ্রীভাবে কেটে দেওয়া বা মেয়েদের ক্লিটোরিস কেটে বাদ দেওয়া অথবা গরম ছ্যাঁকা দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া, এই ধরণের আসুরিক চিকিৎসা করতে লাগলেন… যাতে ব্যাথার চোটে তারা হস্তমৈথুনে বিরত থাকে। এমন কি পুরুষাঙ্গ বা অণ্ডকোষ কেটে বাদ দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে খোদ আমেরিকার বুকে। যারা ধরা পড়ে গিয়ে এই ধরণের অত্যাচারের শিকার হত তাদের কথা তো ছেড়েই দিলাম, বাকি যারা লুকিয়ে স্বমেহন চালিয়ে গেল তাদের মনে জন্ম নিল অস্বাভাবিক ভয় এবং সেগুলো নিঃসন্দেহে তাদের মানসিকভাবে সমস্যায় ফেলতে লাগল।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকে অনেকদিন পর্যন্ত। এমনকি বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্তও আমেরিকার স্কুলপাঠ্য জীবনবিজ্ঞান বইয়ে হস্তমৈথুনকে একটা রোগ হিসেবে উল্লেখ করা ছিল। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রোগের কারণ হিসেবে জীবাণুর ভূমিকা সম্পর্কে মানুষ যত অবগত হতে লাগল তত এই ধরণের ভুল ধারণা ভাঙতে শুরু করল। সিফিলিস, গনোরিয়ার মত যৌনরোগ যে আসলে জীবাণুর আক্রমণে হয় সেগুলো আবিষ্কার হওয়ার পর বোঝা গেল ওই অসুস্থতাগুলো তবে হস্তমৈথুনের কারণে হতনা। আর হবেই বা কিভাবে ভাবুন দেখি? সঙ্গমের সময় যেভাবে যৌনাঙ্গগুলি উত্তেজিত হয় সেটাকেই হাতের সাহায্যে সিমুলেট করা হচ্ছে, তা যদি ক্ষতিকর হত তবে তো যৌনমিলন ব্যাপারটাই ক্ষতিকর হত! ওদিকে কিনসের বিখ্যাত সার্ভে থেকে দেখা গেল প্রায় ৯০ শতাংশ পুরুষ এবং ৭০ শতাংশ নারী এই অভ্যাসে অভ্যস্ত। এত বিপুল পরিমাণ লোক যখন দিব্যি স্বাভাবিক রয়েছেন তখন এটি যে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর নয় সেটা বলাই বাহুল্য। বরং ধীরে ধীরে গবেষণায় দেখা যেতে লাগল হস্তমৈথুন খারাপ তো নয়ই, বরং এর অনেক ভাল গুণ আছে। তার মধ্যে বেশিরভাগই যেকোন উপায়ে যৌন তৃপ্তির পাওয়ার সঙ্গেই যুক্ত। অর্থাৎ মন ভাল থাকা, স্ট্রেসমুক্ত থাকা থেকে শুরু করে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমানোরও নিদর্শন পাওয়া গেছে। তার সঙ্গে উপরি পাওনা হল এর মাধ্যমে এইডস বা অন্যান্য যৌন ব্যাধি ছড়াবার ভয় নেই, যা কিনা অনেক অপরিণত ছেলেমেয়ে আনসেফ সেক্স এর মাধ্যমে বাধিয়ে বসে। তাই আজকালকার ডাক্তাররা এতে বাধা দেওয়া তো দূরের কথা, বরং উৎসাহ দেন। কেবল সিঙ্গল নর-নারীর জন্যেই নয়, কাপলদের জন্যও একক বা যৌথ হস্তমৈথুন সময় বিশেষে উপযোগী বলা হয়। এও দেখা গেছে যাঁরা আগে থেকে হস্তমৈথুনে অভ্যস্ত, সেরকম কাপলদের মধ্যে সেক্সুয়াল কম্যুনিকেশন অনেক ভাল হয়। আপনি কিভাবে সবচেয়ে বেশি অ্যারাউজড হন সেইটে নিজে ভাল ভাবে বুঝলে তবেই না সেটা আপনার পার্টনারকে বলতে পারবেন? আফটার অল, কবি তো বলেইছেন – "আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবেনা/ এই জানারই সঙ্গে সঙ্গে তোমায় চেনা…"। তাই আধুনিক যৌনবিজ্ঞান বলছে "হস্তমৈথুন কেবল লুজার-রা করে (অর্থাৎ যারা সেক্স পার্টনার জোটাতে পারেনা তারা)" এই প্রাচীন ধারণাকে ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলার সময় এসেছে।
কিন্তু তবু সমাজ কি সেটা মেনে নিয়েছে? পশ্চিমে কিছুটা মেনে নিলেও ভারতে তো একেবারেই না। সবাই জানে যে বেশিরভাগ মানুষই হস্তমৈথুন করে থাকেন, বা অন্তত কখনো করেছেন। তবু একে ঘিরে এক অদ্ভুত লুকোছাপা। সেক্স এডুকেশন ব্যাপারটাই এখনও গৃহীত নয় সেভাবে। সুতরাং এ আর আশ্চর্য কি? সভ্য সমাজে এই শব্দটি উচ্চারণ করাটাই অশ্লীলতা বলে মনে করেন অনেকে। অনেকে যুক্তি দেবেন এটা তো একটা খুব ব্যক্তিগত ব্যাপার, এ নিয়ে আলোচনা করতে যাব কেন? যুক্তিটা ঠিক ধোপে টেকেনা। প্রেম-ভালোবাসা, যৌনতা এই সমস্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। সেটা আপনি কারো সাথে শেয়ার করবেন কিনা সে আপনার ইচ্ছে। তা বলে কেউ সে নিয়ে আলোচনা করলেই "ছি ছি" রব, বা হস্তমৈথুন নিয়ে রাখঢাকের মাধ্যমে সেই সংক্রান্ত কুসংস্কার গুলি জিইয়ে রাখা কি কাজের কথা? ভাবুন তো, আপনার সন্তান যদি এই ভয় নিয়ে স্বমেহন করে যে এর ফলে তার হাতের চেটোয় চুল গজাবে, বা মুখে ব্রন হবে, কিম্বা শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে, তাহলে তার মানসিক প্রভাবটা কি ভাল কিছু হবে? গবেষণায় দেখা গেছে টিনেজার দের মধ্যে হস্তমৈথুনের খারাপ প্রভাব সত্যি সত্যি হয়ে থাকে অনেক সময়, আর সেটা পুরোটাই এই ধরনের ভয় বা অপরাধবোধ থেকে জন্মানো।  এই ধরনের একটি মানসিক সমস্যার কথা জানতে এই আর্টিকলটি পড়ে দেখতে পারেন। এরকম অপরাধবোধ না থাকলে কোনো ধরনের শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনাই নেই যদি না এটি নেশায় পরিণত হয়। যে কোনো ধরনের নেশা (এমন কি চায়ের নেশাও) বা কম্পালসিভ আচরণের মতই এই নেশাও মানসিক দিক থেকে ক্ষতিকর। তা না হলে হস্তমৈথুন যে অত্যন্ত স্বাভাবিক একটি কাজ, সেই গ্রহণযোগ্যতাটা সবার আগে আসা দরকার। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই আসবে সমাজে, শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্রে এই ব্যাপারে মুক্ত চিন্তা।

চলচ্চিত্র বলতে মনে পড়ল অ্যানি হল ছবিতে উডি অ্যালেনের সেই ডায়ালগ – “Don't knock masturbation. It's sex with someone you love.” মজার হলেও কথাটা কিন্তু ভাবার! পশ্চিমী এরকম অনেক ছবিতেই স্থান পেয়েছে হস্তমৈথুন। অথচ ভারতীয় ফিল্মে সুড়সুড়ি দেওয়া যৌনতার ছড়াছড়ি হলেও এই ব্যাপারটি ব্রাত্য থেকে গেছে। সম্প্রতি একটি সেন্সর পাশ বাংলা ফিল্মে স্পষ্টভাবে এর উল্লেখ দেখলাম। এছাড়া আরও হাতে গোনা কিছু ফিল্ম বাদে এই ব্যাপারে কিছুই চোখে পড়েনি, চিত্রায়ণ তো দূরের কথা। সাহিত্যের ব্যাপারেও একই কথা খাটে। অথচ স্বমেহন কিন্তু সাহিত্য বা ফিল্মে স্থান পাওয়ার মত একটি অত্যন্ত ইন্টারেস্টিং বিষয়, কারণ এর সঙ্গে যুক্ত থাকে গভীর সাইকোলজিকাল ব্যাপার স্যাপার। মানুষের সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসির বহিঃপ্রকাশের একটি অন্যতম ক্ষেত্র হল স্বমেহন। ফরাসী সাহিত্যিক ফ্লবেয়ার এর বিখ্যাত উক্তি “Pleasure is found first in anticipation, later in memory” যে যৌন ফ্যান্টাসির ক্ষেত্রে কতটা সত্য তা রসিক মাত্রেই জানেন। এই ফ্যান্টাসি অনেক সময় তথাকথিত এথিক্স এর গণ্ডিও ছাড়িয়ে যায়। সেটা ঠিক কি ভুল সে তর্কে না গিয়ে এটুকু বলাই যায় যে এমন ইন্টারেস্টিং একটি সাবজেক্ট নিয়ে ভবিষ্যতে ভারতীয় শিল্পে সাহিত্যে আরও খোলামেলা প্রকাশ দেখার অপেক্ষায় থাকব।

একবার আমার এক প্রতিভাবান বন্ধুকে (তিনিও ঘটনাচক্রে এই ব্লগের সদস্য) সেই বিখ্যাত "নিষিদ্ধ" ফিল্ম Y2K এর কায়দায় জিজ্ঞেস করেছিলাম "আচ্ছা রবি ঠাকুর কি কখনও হস্তমৈথুন নিয়ে কাব্যি লিখেছেন?" সে বললে "হ্যাঁ, সেরকম আছে বটে, বৃদ্ধ বয়েসে একদিন কবি হঠাৎ সফলভাবে হস্তমৈথুন করতে পেরে আনন্দে লিখে ফেলেন -

কঠিন লোহা কঠিন ঘুমে ছিল অচেতন, ও তার ঘুম ভাঙাইনু রে।
লক্ষ যুগের অন্ধকারে ছিল সঙ্গোপন, ওগো, তায় জাগাইনু রে॥
পোষ মেনেছে হাতের তলে যা বলাই সে তেমনি বলে -
দীর্ঘ দিনের মৌন তাহার আজ ভাগাইনু রে॥"
প্রাচীন মিশরীয় গুহাচিত্রে হস্তমৈথুনের উল্লেখ মেলে, Source: Google



খিল্লি অ্যাপার্ট, এ যুগেও হস্তমৈথুন নিয়ে রাখঢাক কিন্তু কেবল ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণেই সীমাবদ্ধ নেই। হস্তমৈথুন নামক "রোগ" নিরাময়ের উপায় জানেন বলে দেওয়ালে দেওয়ালে বিজ্ঞাপন দেওয়া হাতুড়ে ডাক্তারদের ব্যবসা রমরমিয়ে চলছে। অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি পর্যন্ত মনে করেন এটি ন্যাচারাল নয়, একটি কৃত্রিম ব্যাপার, সেহেতু বর্জনীয়। অথচ বিজ্ঞান বলছে অন্য কথা! কুকুর, ঘোড়া, বাঁদর থেকে শুরু করে সজারুকে পর্যন্ত নিয়মিত স্বমেহন করতে দেখা গেছে। টেকনিকালি একে "হস্ত"মৈথুন বলা যাবেনা, কেউ ব্যবহার করে পা, কেউ অন্য কোনো অঙ্গ। এমন কি গাছের ডাল ইত্যাদি বাহ্যিক বস্তুর সাহায্য নিতেও দেখা গেছে। কিন্তু সত্যি কথা বলতে হোমোসেক্সুয়ালিটি বা স্বমেহন কে জাস্টিফাই করার জন্য অন্যান্য জীবজন্তুর উদাহরণ দেওয়ার কোনো প্রয়োজন আমি দেখিনা। যদি এমনও হত কেবল মানুষই এই অভ্যাসে অভ্যস্ত, তবু তাকে আন-ন্যাচারাল মোটেই বলা চলেনা। মানুষের করা যেকোনো জিনিসকেই আমরা দুম করে আন-ন্যাচারাল আখ্যা দিয়ে দিই। অথচ মৌমাছি যখন তার কারখানায় মধু তৈরি করে, তাকে কিন্তু আমরা "হান্ড্রেড পার সেন্ট ন্যাচারাল হানি" বলে থাকি! সব চেয়ে বড় কথা, অপ্রাকৃতিক হলেও সেটা খারাপ বা বর্জনীয় এমনও কোনো কথা নেই। তাহলে তো সেই যুক্তিতে রোগ হলে পরে চিকিৎসার ব্যবস্থা সবার আগে বন্ধ করে দিতে হয়! আর পেসমেকার এর মত কৃত্রিম জিনিস তো নৈব নৈব চ!


যা দিয়ে শুরু করেছিলাম ফিরে আসি সেই মাস্টারবেটাথনে। এটা কি কেবল একটি সেক্স টয় কোম্পানির নিজেদের প্রোডাক্ট বেচার ছলছুতো? নাকি সত্যিই এর প্রয়োজন আছে আমেরিকার মত দেশে? বছর কয়েক আগেও আমার ধারণা ছিল এই ধরণের ব্যাপারে আমেরিকা খুব লিবেরাল একটি দেশ। এসে বুঝলাম সে ধারণা কতটা ভুল। ভারতের তুলনায় বেশি লিবেরাল তো বটেই, কিন্তু এখনও এখানে প্রাচীনপন্থী এবং গোঁড়া লোকজনের অভাব নেই। ফলতঃ এদেশের রাজনীতি এখনও ধর্মীয় এবং গোঁড়া ব্যাপারস্যাপার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। তারই ভুক্তভোগী প্রাক্তন ইউ এস সার্জন জেনারেল জোসেলিন এল্ডার্স। এইডস এর প্রবল প্রকোপ সামলাতে যখন সারা দেশ হিমশিম খাচ্ছে তখন ইনি সেক্স এডুকেশন এবং হস্তমৈথুন কে প্রোমোট করতে চেয়েছিলেন, বলেছিলেন যে যৌনতার এই নিরাপদতর উপায়টি সম্পর্কে স্কুলের ছেলেমেয়েদের জানানো উচিত। তাঁর এই "অতি-প্রোগ্রেসিভ" মন্তব্য নেওয়ার মত সাবালক তখনও হতে পারেনি আমেরিকা। ক্লিন্টন সরকার তাই এই কেচ্ছা চাপা দিতে তৎপর হয়ে ওঠে এবং জোসেলিনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। মজার ব্যাপার, এই ক্লিন্টনই কিছুদিন পর ফেঁসে যান যৌন কেচ্ছায়। তিনি অবশ্য পদত্যাগ করেননি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.