KAMASUTRA: 'কামসূত্র' বইতে কী আছে? কেন একে নিষিদ্ধ বলে মনে করা হয়?


Odd বাংলা ডেস্ক: অনেকের মাথায় বিভিন্ন "পজিশন", উপরে-নিচে, আগে-পিছে এইসব আসছে তো? উহুঁ, কামসূত্র কোনো "পজিশনের" বই না। যা জানতেন, ভুল জানতেন। আসেন তাহলে, "উল্টা-পাল্টা" বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।


প্রাচীন ভারতে যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ছিলো, তার মধ্য থেকে আয়ুর্বেদ, যোগব্যায়াম, অর্থনীতি, স্পিরিচুয়ালিটি ইত্যাদি বিষয়ে ওই সময়কার জ্ঞানী লোকেরা কিছু বইপত্র লিখে গেছেন। এগুলোর সব জ্ঞান যে নির্ভুল, তা না। সময়ের সাথে সাথে আরও নতুন জ্ঞান মানুষ অর্জন করেছে। ওইসব বইপত্রের বিভিন্ন থিওরি বাতিল হয়েছে। কিন্তু একেবারেই বেসিক কিছু ব্যাপার সব সময়ই কনস্ট্যান্ট ছিলো। কামসূত্র সেইরকম বেসিক নলেজের একটা বই। স্বীকার করেন, সেক্সুয়ালিটি নিয়ে বেসিক ধারণাটাও আপনার নাই, তাই জানা দরকার, কামসূত্রের মধ্যে আসলে কী আছে।

বলতে পারেন, নর-নারীর সম্পর্কের ব্যাপারে কামসূত্র একটা ইউজার ম্যানুয়াল। সেক্স মানুষের একটা বেসিক নিড। এইটার উপরে বেইজ করেই যেহেতু জীবনগতি এবং জগত-সংসার চলে, তাই কীভাবে এই কাজটা সঠিক প্রক্রিয়ায় করা যায়, কামসূত্র হচ্ছে এই বিষয়ের একটা দিকনির্দেশনা।

কামসূত্র, কামসূত্র বই রিভিউ

একই কাজ প্রতিদিন করলে তা যতো ইন্টারেস্টিং কাজই হোক না কেন, একটা পর্যায়ে বিরক্ত লাগবে। এইজন্য বহু স্বামী-স্ত্রীর আকর্ষণ একটা পর্যায়ে গিয়ে কমে যায়। যতোই অস্বীকার করেন, মানুষ প্রতিনিয়ত নতুনত্ব চায়। এই নতুনত্ব চাওয়ার জৈবিক বা মানসিক তাড়নাতেই মানুষ জড়িয়ে পড়ে পরকীয়াতে, বুড়ো বুড়ো বিবাহিত লোকজন বাসের ভিড়ে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়, ফ্রাস্টেটেড লোকজন মেয়েদের ইনবক্সে আজেবাজে ছবি পাঠায়।

এখন, এই হিউম্যান বিহেভিয়ারগুলোকে কামসূত্র গভীরভাবে স্টাডি করেছে। একেবারেই বেসিক কিছু বিহেভিয়ার সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া আছে, যেগুলো বজায় রাখলে আপনার পার্টনার মানসিকভাবে কখনোই আপনার ওপর বিরক্ত হবেনা। নারীদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, মনটা জাগতে হয় আগে, শরীর জাগে অনেক পরে। এই মন জাগানোর এবং মনটা ধরে রাখার বিদ্যা কামসূত্রে মোটামুটি ডিটেইলে দেয়া আছে।

দেখবেন, অনেক সংসার অত্যন্ত সফলভাবে যুগের পর যুগ ধরে চলছে তো চলছেই। অন্যদিকে দুই বছরের মধ্যেই অনেক সংসার টিকছে না। অনেক লোককে দেখবেন, একজনের জায়গায় দশজন নারী তাদের ওপর প্রবলভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে, বহু লোক "গার্লফ্রেন্ড পাচ্ছিনা, বিয়ে হচ্ছেনা, বিয়া করুম" - এইসব লিখে বেড়াচ্ছে।

এই যে কেউ আকর্ষণীয় হয়, আর কেউ বহু চিল্লায়েও মার্কেট পায়না- এই আচরণগুলোর স্টাডিও কামসূত্রে দেয়া আছে। ফলে, এই বইটি পড়লে আপনারা আরও জানতে পারবেন, কীভাবে নিজেকে একজন "সঙ্গী" হিসাবে আকর্ষণীয় করে তুলবেন।

"পজিশন" ব্যাপারটা নিয়ে কথাবার্তা মোট পাঁচভাগের একভাগ আছে। অধ্যায় আছে ছত্রিশটা, এর টুয়েন্টি পার্সেন্ট মাত্র পজিশনের বর্ণনা। আপনি নিজের এবং পার্টনারের শরীরের ওজন, প্যাটার্ন, পছন্দ ইত্যাদির ওপর ডিপেন্ড করে কোন সিচুয়েশনে কোন পজিশনে ঘাপাঘাপ দিবেন, সেই ব্যাপারে কিছু সচিত্র বর্ণনা আছে।

এছাড়াও, একই পজিশনে একই স্টোরি বারবার দেখতে দেখতে পর্নহাব এক্স-ভিডিওসের মতো সোনার গুদাম পর্যন্ত একটা পর্যায়ে বিরক্ত লাগে। কামসূত্র বিভিন্ন পজিশন এবং আচরণ বদলের মাধ্যমে একই কাজ বিভিন্ন স্টাইলে করার নিয়ম দেখিয়েছে। এর ফলে পার্টনারদের মধ্যে একটা ইন্টারেস্টিং চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়, এবং দুইপক্ষ সমানভাবে একে অন্যের সাথে এই গেম দীর্ঘ সময় ধরে খেলতে আগ্রহী হয়।

ফাইনালি, যেসব শুটকি খাওয়া গরীবদের নিজের হাত বাদে কোনো অবলম্বন নাই, কামসূত্র তাদের জন্য নিজেকে নিজে সর্বোচ্চ স্যাটিসফেকশন কীভাবে দিতে হয়, এই ব্যাপারেও কিছু আলোচনা করেছে।

এখন, এতোকিছু থাকতে এই বইয়ের রিভিউ দেয়ার কারণ কী? কারণ হচ্ছে, বিষয়টা সিরিয়াস।

বউ ভেগে গেছে? এই বইতে সূত্রটা আছে, কেন ভাগলো। গার্লফ্রেন্ড অন্য ছেলেতে আকৃষ্ট? কামসূত্র পড়েন, কাহিনী ধরতে পারবেন। লিটনের ফ্ল্যাটে গেছেন, কিন্তু ঘাপাঘাপ দিতে পারেন নাই? বুঝতে পারবেন, কোথায় ঝামেলা হয়েছিলো। সবই ঠিক ছিলো, সেক্সও হয়েছে কিন্তু মজা পান নাই? পড়ে ফেলেন বইটা, কাজে আসবে।

এই যে এতো এতো ফ্রাস্টেটেড লোক ঘরে বউ রেখে বাইরে সুখ খুঁজে বেড়ায়, এদেরকে "প্রতারক" বলে দেয়াটা খুব সোজা। অথচ, জীবনে কোনো একটা ঘাটতি আছে জন্যই কিন্তু এরা বাইরে যাচ্ছে সুখ খুঁজতে। প্রশ্ন হচ্ছে, সুখ খোঁজাটা কি অপরাধ? বিয়েটাও তো সুখ খোঁজার জন্যই করা হয়েছিলো, নাকি? কমিটমেন্টের কচকচানি শোনাবেন না, মানুষ দিনে রাতে, রাইট এন্ড লেফট কমিটমেন্ট ভাঙে।

কিন্তু কেন ভাঙে?

কামসূত্র খুব সহজভাবেই দেখিয়েছে, পরকীয়াতে আপনি না জেনেই এমন সব আচরণ করে থাকেন, যেটা বৈবাহিক সম্পর্কে করেন না। কী কী পরকীয়া টাইপের আচরণ বৈবাহিক সম্পর্কের মধ্যেই করলে বিয়েটা সুখে-দুখে টিকে যাবে, কামসূত্রে এই সংক্রান্ত বর্ণনা আছে।


যেসব ভাই-ব্রাদার বিয়েশাদী এবং সম্পর্ক টেকাইতে পারছেন না, না পারার দুঃখে ক্রমাগত অন্যকে দোষ দিয়ে যাচ্ছেন যে, "ওই ডাইনী আমার এতো সাধের সাজানো বাগান খেয়ে দিলো"- এনারা দয়া করে কামসূত্র পড়েন। অশিক্ষিত হওয়াটা সমস্যা না, সমস্যা হচ্ছে নিজের অশিক্ষার দায়টা অন্যের ওপরে চাপিয়ে দেয়াটা।

একেবারেই শূন্য যোগ্যতা নিয়ে যদি আপনি ফর গ্র‍্যান্টেড ধরে নেন যে, আপনার সংসার টিকবেই, তাহলে তো হবেনা গুরু। নিজের মধ্যে কী কী গুণ তৈরি করলে আপনার স্বামী বাসের মধ্যে অন্য মেয়েকে কনুই না মেরে আপনাকেই কনুই মারবে, সেই কারণটা তো তৈরি করতে হবে।

কমিটমেন্ট ভাঙা খারাপ, সে তো ট্রাফিক আইন ভাঙাও খারাপ, সিগারেট খাওয়াও খারাপ এবং মানুষ এগুলো জানে। জানার পরেও যেহেতু করে, তো জানা দরকার যে মানুষ এগুলো কেন করে, কোন ড্রাইভিং ফোর্স তাকে এগুলো করতে বাধ্য করে। কামসূত্র হচ্ছে এইসব কারণ অনুসন্ধানের বই।

সম্পর্কের পর সম্পর্ক করতে থাকবেন, একটার জায়গায় দশটা বিয়া করবেন, কিছু বেসিক বিদ্যা না জানলে একটাও সুখের হবেনা। আপনার অশিক্ষার সুযোগে যে শিক্ষিত ব্যক্তিটি আপনার সাজানো বাগান খেয়ে দিবে, সব হারিয়ে তাকে যতোই গালমন্দ করেন, কোনো লাভ নাই। দিনশেষে সেই জিতবে, আর আপনি হারবেন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.