কামিকাতসু, বিশ্বের প্রথম আবর্জনা মুক্ত শহর, একটা প্লাস্টিকও পড়ে থাকে না


Odd বাংলা ডেস্ক: প্রচলিত পদ্ধতিতে আবর্জনা পুড়িয়ে, মাটি চাপা দিয়ে কিংবা পানিতে ফেলা এড়িয়ে পুনর্ব্যবহার করার পরিবেশবান্ধব প্রক্রিয়াকে জিরো ওয়েস্ট বলা হয়। ২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাপানে প্রথম জিরো ওয়েস্ট কর্মসূচী হাতে নেওয়ার মধ্য দিয়ে কার্যোপযোগী বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে কামিকাতসু।

শহরজুড়ে পথে ঘাটে কোথাও নেই ময়লা ফেলার জায়গা। এমনকি শহরটিতে কোনো ময়লার গাড়িও নেই। তবুও কোথাও চোখে পড়বে না এক টুকরো ময়লা আবর্জনা। কারণ এখানকার বাসিন্দারা নিজেরাই তাদের আবর্জনা পরিষ্কার করে নিয়ে আসেন ওয়েস্ট রিসাইকেলিং সেন্টারে। সেখানে এসব আবর্জনা সুনির্দিষ্টভাবে ৩৪টি ভিন্ন ভিন্ন ভাগে ভাগ করে রিসাইকেলিংয়ে পাঠানো হয়।

কামিকাতসু শহরের ওয়েস্ট কালেকশন সেন্টারে খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন, কার্টন, ফ্লায়ারসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজ জাতীয় দ্রব্যের জন্য নির্দিষ্ট ঝুড়ি আছে। একইভাবে, অ্যালুমিনিয়াম, স্প্রে, স্টিল এসবের জন্য ভিন্ন ভিন্ন জায়গা আছে। এমনকি প্লাস্টিক বোতল ও বোতলের ক্যাপের জন্যও আছে নির্দিষ্ট স্থান। এগুলো সহ মোট ৩৪টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থকে সাজাতে হয় কামিকাতসুর বাসিন্দাদের। নিঃসন্দেহে এটি বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে তাদের বেশ সময়ও লেগেছে। কামিকাতসুর স্থানীয় এক তরুণ বলেন,

“একবার অভ্যাস হয়ে গেলে, করতে আর তেমন সমস্যা হয় না। এখন তো আমাদের খুব বেশি ভাবতেও হয় না। ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় সুনির্দিষ্টভাবে আবর্জনা সাজিয়ে গুছিয়ে রাখাটা এখন আমাদের জন্য খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়।”

রিসাইকেলিং সেন্টারে একজন কর্মী আবর্জনা সাজানোর প্রক্রিয়াটি দেখাশোনা করেন। ঠিকঠাক জায়গায় ঠিকঠাক আবর্জনা যাচ্ছে কিনা, এটা নিশ্চিত করাই তার দায়িত্ব।

২০০৮ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিটি বস্তু খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হয় বলে শহরটির ৪০% বাসিন্দাই এ পদ্ধতি পছন্দ করতেন না। কিন্তু, তাতেও বদল হয়নি শহরের আইন। কারণ, বর্জ্য পদার্থ পোড়ানোর জন্য চুল্লি কেনা ও ব্যবহার করার চেয়ে এ পদ্ধতিটি অনেক বেশি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। শহরটিতে প্রায় ৮০% বর্জ্য পদার্থই রি-সাইকেল করা হয়। ২০২০ সাল নাগাদ ‘জিরো ওয়েস্ট সিটি’ হবার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে শহরটি।

কামিকাতসুর রিসাইকেলিং স্টেশনটিকে রি-সাইকেল এক্সচেঞ্জ শপও বলা যায়। শহরের বাসিন্দারা নিয়মিত এখানে এসে তাদের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে যাবার পাশাপাশি, পছন্দসই জিনিসপত্র বিনামূল্যে বাড়িতে নিয়ে যাবার সুযোগও পান। 

রাস্তার শেষ মাথার একটি ফ্যাক্টরিতে স্থানীয় এক নারী ফেলে দেওয়া জিনিসপত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন জিনিস তৈরি করেন। যেমন, পুরনো কিমোনোর কাপড় ব্যবহার করে বানানো হয় টেডি বিয়ার। শহরের ৬০ শতাংশ অধিবাসীই নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে সন্তুষ্ট। পাশাপাশি ২০২০ সালের মধ্যে জিরো ওয়েস্ট সিটি হবার লক্ষ্য অর্জনেও আশাবাদী। প্রচলিত পদ্ধতিতে, ধানক্ষেত এবং চুল্লিতে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য পদার্থ পোড়ানো হতো জাপানে। এখন আর সে অবস্থা নেই। 

এছাড়াও, কাঠের চপস্টিক, রান্নার তেল ইত্যাদি পাঠানো হয় বিভিন্ন রিসাইকেলিং কোম্পানিতে। এতে স্থানীয় সরকার যেমন লাভবান হয়, তেমনি এসব ব্যবহার করে তৈরি করা হয় কাগজ কিংবা সারের মতো পণ্য। খাদ্য বর্জ্য প্রসেস করার জন্য ব্যবহৃত হয় স্বল্প পরিসরের হোম-কম্পোস্টিং সিস্টেম। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহায়তায়, কামিকাতসুর ৯৮ শতাংশ বাড়িতেই জৈব বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ থাকায়, শহরটিতে কোনো ধরনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কম্পোস্টিং ব্যবস্থারও প্রয়োজন হয় না।

বিশ্বব্যাপী কামিকাতসুর দেখানো পথ অনুসরণ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে পরিবেশবান্ধব করতে এখন কাজ করছে বেশ কিছু শহর। ২০১৫ সালে স্যান ডিয়েগো তাদের নগর পরিকল্পনায় জিরো ওয়েস্ট সিটি হবার লক্ষ্যে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৭৫ ভাগ ও ২০৪০ সালের মধ্যে শতভাগ সাফল্য অর্জন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। একইভাবে নিউ ইয়র্কও আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।

নগরায়ন ও শিল্পায়নের আগ্রাসনের সাথে পাল্লা দিয়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির বিকাশ ও ব্যবস্থাপনায় উৎকর্ষের স্বপ্নদ্রষ্টাদের জন্য জাপানিজ এ শহরটি নিঃসন্দেহে একটি অনুপ্রেরণার নাম। হয়তো একটু একটু করে এভাবেই একদিন জিরো ওয়েস্ট প্ল্যানেট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ পাবে পৃথিবীবাসী।

Blogger দ্বারা পরিচালিত.