একজন বাঙালি রিক্সা চালক, অশিক্ষিত থেকে সমাজবাদ, জেলে বসেই লিখেছেন "ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন"


Odd বাংলা ডেস্ক: নিজের জন্ম তারিখ মনে করতে পারেন না। কারন নমঃশূদ্র পরিবারে বাবা-মা সালের হিসেব করতে পারতেন না। মনোরঞ্জন ব্যাপারীর জন্ম হতদরিদ্র দলিতপরিবারে। বরিশালের পিরোজপুরের তুরুকখালি নামক স্থানে। তাপতপ্ত বৈশাখের কোনো এক রবিবারে। মনোরঞ্জন ব্যাপারী লেখাপড়া তেমন করেননি। জীবন ধারণের জন্য কত কী যে করতে হয়েছে তাঁকে। তার সামান্য নমুনা পাওয়া যায় উদ্ধৃতাংশে। একসময় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় রিকশা চালিয়েছেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী। একদা সেই মনোরঞ্জনকে নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্দুমতী’ নামের সভাগৃহে সাহিত্যসম্মেলন হয়েছে। তাঁকে নিয়ে খ্যাতিমান লেখকরা লেখালেখি করছেন। অলকা সারওগী, মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, টুটুন মুখার্জী, নবনীতা দেবসেন, মহাশ্বেতা দেবী, ড. কপিল কাপুর, কুলপতি বিভূতিনারায়ণ রায়, রামকুমার মুখোপাধ্যায়, অশ্রুকুমার শিকদার, সাধন চট্টোপাধ্যায়, সুরজিৎ ঘোষ, অচিন্ত্য বিশ্বাস, সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং আরো ক-ত জন যে মনোরঞ্জনের সাহিত্যসৃষ্টি নিয়ে লিখছেন।

হাল আমল পর্যন্ত মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ছয়খানা উপন্যাস ও একখানা গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। শেষে বেরিয়েছে ‘ইতিবৃত্তে চণ্ডালজীবন।’ এই গ্রন্থটি পাঠকের ভেতরটা ধরে টান দিয়েছে। মনোরঞ্জন নিজে দলিত। নিজেকে মেথর ডোম হিসেবে পরিচয় দিতে মোটেই দ্বিধান্বিত নন তিনি। নিজের জন্মজায়গায় দাঁড়িয়ে, নিজের জন্মকথা অস্বীকার না করে তিনি সাহিত্য রচনা করেছেন এবং করে যাচ্ছেন। এক অসাধারণ বাস্তবতা আছে তাঁর লেখায়। আছে নিটোল ক্রোধ। এই ক্রোধ নিজের জন্য নয়। তাঁকে দলিত প্রান্তজন বানিয়েছে যারা, যারা তাঁর সমাজকে অপাঙক্তেয় করে রেখেছে, যারা অস্পৃশ্য বলে প্রচার করে হাজার হাজার বছর ধরে ঘৃণার স্টীমরোলার চালিয়েছে তাঁদের ওপর, মনোরঞ্জনের অগ্নিসদস্য ক্রোধ তাদের বিরুদ্ধে। এই ক্রোধকে তিনি যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন তাঁর লেখায়। এই লেখা লিখতে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি।

সম্প্রতি নিজের এক সাক্ষাৎকারে মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলছেন যে তাঁর কাছে জেল যাওয়াটা কোনো ব্যাপার ছিল না । এমন কি জেলে তিনি প্রক্সিও দিয়েছেন। যেমন চোলাই দোকানদারের জেল হল। তখন মনোরঞ্জন তাঁদের বদলে জেল যেতেন। তার বদলে ওই সব দুষ্কৃতিরা তাকে ৫ টাকা করে দিত। এমন কি আরপিএফদের কাজ দেখাতে হত। যে তারা রাতে কাউকে বিনা টিকিটে ধরেছে কিনা। তখনও মনোরঞ্জন প্রক্সি দিতেন। নিজে গিয়ে ধরা দিতেন আরপিএফের কাছে। বদলে আরপিএফরা ওকে কিছু টাকা দিত। আসলে তিনি প্রফেশনাল ভাবে জেলের ভাত খাওয়া লোক হয়ে গিয়েছিলেন। 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.