যে দেবতা নিজের মায়ের গলা কেটে হত্যা করেছিলেন


Odd বাংলা ডেস্ক: ক্ষত্রিয়দের আগ্রাসন থেকে ব্রাহ্মণদের রক্ষা করতে মহর্ষি জমদগ্নি ও রেণুকার কোল আলো করে পরশুরাম রূপে জন্মগ্রহণ করলেন ভগবান বিষ্ণু। তিনি ছিলেন তাদের পঞ্চম ও কনিষ্ঠ পুত্র। মহাদেবের তপস্যা করে তিনি লাভ করেছিলেন অমোঘ অস্ত্র পরশু বা কুঠার। রামায়ন ও মহাভারত উভয় মহাকাব্যেই তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। রামায়নে তিনি রাজা জনককে দান করেছিলেন হরধনু। জনকরাজ শর্ত রেখেছিলেন যে এই ধনুকে জ্যা পরাতে পরবে তার সঙ্গেই তিনি কন্যা সীতার বিয়ে দেবেন। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শ্রী রামচন্দ্র সীতাকে পত্নী রূপে লাভ করেছিলেন। অপর দিকে মহাভারতে তিনি কর্ণের অস্ত্র গুরু। কর্ণ নিজের পরিচয় গোপন করে তার কাছে অস্ত্র শিক্ষা করেছিলেন। ছলনার কথা জানতে পেরে পরশুরাম কর্ণকে অভিশাপ দিয়েছিলেন যে, অন্তিম মুহূর্তে তিনি ব্রহ্মাস্ত্র প্রয়োগের কৌশল ভুলে যাবেন। এই কারণেই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে কর্ণের মৃত্যু ঘটেছিল।

ফিরে আসি পরশুরামের কথায়। একদিন জমদগ্নি যজ্ঞের আয়োজন করেছেন, রেণুকা গেছেন নদীতে স্নান করতে। সেখানে চিত্ররথ নামে এক গন্ধর্ব্ব রাজ স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে জলকেলি করছিলেন। গন্ধর্ব্বরাজের মনোহর রূপ দেখে রেণুকা মনে মনে তার প্রতি আকৃষ্ট হন। এদিকে স্ত্রীর স্নান করে ফিরতে দেরি হওয়ায় জমদগ্নি ধ্যানযোগে পত্নীর সব কার্যকলাপ দেখতে পেলেন। ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে পুত্রদের আদেশ করলেন এক্ষুনি তোমাদের মায়ের শিরচ্ছেদ কর। মাতৃ হত্যা মহাপাপ, তাই প্রথম চার পুত্র একাজ করতে অস্বীকার করলেন। তখন জমদগ্নি কনিষ্ঠ পুত্র পরশুরামকে এই কাজ করতে আদেশ দিলেন। পিতৃ আজ্ঞা অমান্য করাও মহাপাপ।

তাই পরশুরাম কুঠারের আঘাতে মায়ের শিরচ্ছেদ করলেন। জমদগ্নির ক্রোধ প্রসমিত হল। পুত্রের পিতৃভক্তি দেখে তাকে মনোমত বর চাইতে বললেন। পরশুরাম বললেন হে পিতা, আপনি আমার মায়ের প্রাণ ফিরিয়ে দিন। খুশি হয়ে তিনি রেণুকাকে পুনর্জীবিত করলেন। কিন্তু দেখা গেল পরশুরামের হাতের কুঠার হাতেই লেগে আছে, কোন ভাবেই তাকে বিচ্ছিন্ন করা গেল না। নিরুপায় পরশুরাম পিতার কাছে এর কারণ জানতে চাইলেন। জমদগ্নি বললেন তুমি নিজের গর্ভধারিনী মাকে হত্যা করেছ। এ সেই পাপের ফল। পরে ব্রহ্মকুন্ডের পবিত্র জলের স্পর্শে তিনি শাপমুক্ত হন। একবার শহস্র বাহু বিশিষ্ট কার্তবীর্জার্জুন তার পুত্রদের নিয়ে মহর্ষি জমদগ্নির আশ্রম দর্শনে আসেন। সেখানে আশ্রমের কামধেনু গাভীকে দেখে এতটাই আকৃষ্ট হন যে রাতের অন্ধকারে তারা বাছুরটিকে চুরি করে নিয়ে যান। সকালে ঘটনা জানতে পেরে ক্রুদ্ধ পরশুরাম ছুটে যান কার্তবীর্জের প্রাসাদে।

কুঠারের আঘাতে তাকে হত্যা করে উদ্ধার করে আনেন কামধেনুর বাছুরকে। এরপর একদিন পরশুরামের অনুপস্থিতির সুযোগে কার্তবীর্জের পুত্ররা আশ্রম আক্রমণ করে। ধ্যানমগ্ন জমদগ্নিকে নির্মম ভাবে হত্যা করে তারা ফিরে যান। আশ্রমে ফিরে পিতার মৃতদেহের সামনে বিলাপরত মাকে দেখে পরশুরাম শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়লেন। মায়ের মুখে শুনলেন কার্তবীর্জের পুত্ররা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কারিগর।

ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে কুঠার হাতে উঠে দাঁড়ালেন পরশুরাম। প্রতিজ্ঞা করলেন তিনি পৃথিবীকে ক্ষত্রিয় শুন্য করে ছাড়বেন। প্রথমেই তিনি আক্রমণ করলেন কার্তবীর্জের পুত্রদের। কুঠারের আঘাতে একে একে নিশ্চিহ্ন করলেন কার্তবীর্জের বংশধরদের। তবুও তার ক্রোধ প্রসমিত হলো না। মহাভারত অনুযায়ী এরপর তিনি ২১ বার পৃথিবীকে ক্ষত্রিয় শুন্য করেন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.