নিজের ব্রেন টিউমার, তবুও ভ্যান চালিয়ে অসুস্থ স্বামীকে বাঁচিয়ে রেখেছেন


Odd বাংলা দেশ: বর্তমান দিনে যখন আমরা মনে এই ধারনা বেঁধে নিয়েছি যে ‘আপনি বাঁচলে বাপের নাম’। সেখানে নিজের প্রিয়তম তো অনেক দুরের কথা, বাবা-মায়ের বিপদে তাদেরকেও দূরে ঠেলে দিয়ে থাকি আমরা। কিন্তু এই মহিলা এক ব্যাতিক্রমি চরিত্র। স্বামী শয্যাশায়ী, নিজে ব্রেন টিউমারের রুগি, তবুও জীবন যুদ্ধে হেরে যেতে রাজি নন এই মহিলা।


হ্যা ঠিকই শুনছেন, এই মহিলার নাম স্বপ্না দাস। বয়েশ প্রায় আটচল্লিশের কোঠায়, থাকেন দীঘার সৈকত শহরে। পিছাবনির কাছে নিমদাসবাড় গ্রামে জন্ম স্বপ্না অনেক ছোট বয়েসেই হারায় বাবা-মাকে, তারপর জরির কাজ সিখতে পারি দেয় মুম্বাইতে।


দীঘার সৈকত শহরে স্বপ্না এক জনপ্রিয় মুখ হয়ে গেছেন। প্রতিদিন সকালে সে নিজের রিকশা ভ্যানে করে লোহা ভাঙ্গা, টিন ভাঙ্গা, প্লাস্টিক, কাঁচের বোতল, ভাঙ্গা কাঁচ ইত্যাদি সংগ্রহ করে তা বিক্রি করে যে টাকা পান তা দিয়ে পেটের ভাত জোটান এবং স্বামির যত্ন নেন।


প্রতিদিন সকালে স্বপ্না রিকশা চালিয়ে দীঘা এলাকার অবাঞ্ছিত জিনিস জোগার করে তা রেলস্টেশন এর এক গুদামে জমা করে দেন। কিন্তু এখানেই থেমে যায়নি তিনি, তার আরও একটি বিশেষ গুন আছে। প্রায় আটটি আঞ্ছলিক ভাষায় সমান পারদর্শিতায় কথা বলতে পারেন স্বপ্না।


মুম্বাইতে জরির কাজ করার সময় এই ভাষা শিখতে হয় তাকে। পাঞ্জাবী, গুজরাটি, মারাঠি আরও অনেক ভাষা সেখানে শেখেন তিনি। মুম্বাই থেকে বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন তার সমস্ত সম্পত্তি তার আত্মীয়রা নিয়ে নিয়েছে। সমস্ত হারিয়ে তিনি চলে আসেন দীঘা। সেখানে পঞ্চানন জানা অর্থাৎ তার স্বামির সাথে তার আলাপ এবং তার পর তারা বিয়ে করেন। একটা ছোট কন্যা সন্তানও ছিল তাদের, কিন্তু সে তিন বছর বয়েসে মারা যায়।


জানা গেছে বন-দফতরের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন পঞ্চানন। একদিন গাছ কাটতে গিয়ে গাছের একটি ডাল পিঠে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। আর তারপর থেকেই তার এই অবস্থা। তাই সংসার চালানর জন্যে স্বপ্নাকে এবার হাল ধরতে হয়েছে। স্বপ্নাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করায় সে বলে, ‘কি করবো বলুন, কষ্ট হলেও কিছু করার নেই, পেট চালানর জন্যে কাজ তো করতেই হবে।’


স্বপ্নার এই কঠিন লড়াই আবারও প্রমান করে দিলো যে এই নারীদের জন্যেই প্রতিটিদিন নারি দিবস। অদম্য জেদের বশে জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার এই লড়াইয়ে সত্যি স্বপ্না কুর্নিশের যোগ্য।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.