ভগবান রাম কি সত্যিই বাল্য বিবাহ করেছিলেন? সত্যতা জানুন



Odd বাংলা ডেস্ক: শ্রীরাম চন্দ্র এবং মাতা সীতার বিবাহের সময় বয়স নিয়ে একটা শঙ্কা প্রায়শই উঠে। বিবাহের সময় না কি শ্রীরাম এবং মাতা সীতার বয়স যথাক্রমে ১৩ এবং ৬ বছর ছিলো। এবং যা প্রচীনকালে বাল্যকালে বিবাহের সবচেয়ে বড় প্রমাণ বলে অপপ্রচারকারীরা উপস্থাপন করে।
আমাদের এই লেখার উদ্যেশ্য এই শঙ্কার সমাধান করা। বাস্তবে বিবাহের সময় তাদের বয়স কত ছিলো...?

এই শঙ্কার মূল উৎপত্তি হলো  রামায়নের অরণ্যকান্ড ৪৭।৪-১০ মধ্যে সীতা রাবনকে নিজ পরিচয় দেবার সময় বলেছিলো যে, আমার বয়স এই সময়  আঠারো এবং আমার স্বামীর বয়স ২৫। বারো বছর শশুড়ালয়ে থেকে সমস্ত ভোগ কে উপভোগ করে রাম লক্ষণের সাথে বনে এসেছি।  অর্থাৎ বিবাহের সময় সীতার বয়স কেবল ১৮-১২= ৬ এবং শ্রীরামচন্দ্রের বয়স ২৫ -১২ =১৩ বছর ছিলো।
এই শ্লোক কে বিচার করার পূর্বে আমরা রামায়নের মধ্যে থেকে বেশ কিছু শ্লোক সমীক্ষা করে দেখবো

মাতা সীতার স্বয়ংম্বরে বিশ্বামিত্র রাম ও লক্ষণকে নিয়ে জনকপুরীতে উপস্থিত হলে রাজা জনক তাদের দেখে একথা বলেন-
" হে মুনিবর! হস্তি এবং সিংহের সমান চলনশীল,  দেবতার সমান পরাক্রমি তথা অশ্বিনী কুমারের মতো সমান সুন্দর এবং যৌবন কে প্রাপ্ত এই দুই কুমার কে?

গজসিংহগতী বীরৌ মার্ভূল বৃষভৌপমৌ।
যদমপত্রবিশালাক্ষী খঙ্গাতুণীর্ধনুর্ধারী।।
অশ্বিনাবিব রূপেন সমুপস্থিতযৌবনৌ।
যদৃচ্ছেবর্ণা প্রাপ্তৌ দেবলোকদিবামরৌ।।
(বাল্মিকী রামায়নঃ বাল কান্ড ৫০।১৮-১৯)          

এবার আসি আরোপকৃত শ্লোকটির সত্যতা নিয়ে যেখানে রামচন্দ্র ও মাতা সীতার বয়স বিবাহের সময  যথাক্রমে ১৩ ও ৬ বলা হয়েছিলো। রামায়নের কোন কোন সংস্করনে পঞ্চবিংশক স্থলে সপ্তবিংশক পাঠও দেখতে পাওয়া যায়।
শ্রীরামচন্দ্রের বনগমনের সময় কৌশল্যা রাম কে বলেন -

 "দশসপ্ত চ বর্ষাণি তব জাতস্য রাঘব ; অযোধ্যাঃ ২০।৪৫"।
অর্থাৎ তোমার জন্ম (দ্বিজের মাধ্যমে দ্বিতীয় জন্ম) হয়ে ১০+৭ = ১৭ হয়েছে।    

একাদ্দশো ক্ষত্রিয়স্য (রঘুকুলের মান্য পরম্পরা অনুসারে) ক্ষত্রিযের উপনয়ন সংস্কার ১১ বছরে হয়। এই প্রকার রামায়ন অনুসারে রামের বনগমনের সময় ১১+১৭= ২৮ বর্ষ ছিলো।(অশ্বলায়ন গৃহ্যসূত্র ১।১৭।৩)    

অপরদিকে মাতা সীতার বিবাহের সময়  বয়স ৬ বছর ছিলো তা উপরোক্ত বিবরন থেকে অশুদ্ধ প্রমাণিত হয়।  কারন ৬ বছরের কোন বালিকাকে "পতি সংযোগ সুলভ বয়স" হিসেবে ধরা হয় না।এটা ঠিক ১৬ বছর বয়সকেই ধরা হয়ে থাকে। আরো একটা বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, মাতা সীতারা  চার বোন ছিলো এবং সীতা সবার জ্যেষ্ঠ এবং শ্রূতকীর্তি সবার কনিষ্ঠ ছিলো।  এবং চার বোনের বিবাহ একসাথে সম্পন্ন হয়।  একটা সাধারন হিসেব মতে যদি বিবাহের সময় সীতার বয়স ৬ বছর ধরা হয় তবে শ্রুতকীর্তির বিবাহের বয়স আনুমানিক ছিলো ৩-৪ বছর। একটি ৩-৪ বছরের বালিকার বিবাহ কি আদৌ সম্ভবপর হতে পারে? 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.