ভগবান কার্তিক কিন্তু অবিবাহিত নন


Odd বাংলা ডেস্ক: জন্মসূত্রে পিতা শিবের বীর্য ও গুণাবলীর যেমন তিনি উত্তরাধিকারী হন, তেমনি মাতা পার্বতীর শৌর্য ও বীর্যের উত্তরাধিকারও তিনি লাভ করেন। তাঁর অপ্রতিরোধ্য পরাক্রম ও দুর্জয় সাহস তাঁকে এনে দেয় দেব-সেনাপতির স্বীকৃতি। রামায়ণ, মহাভারত এবং প্রধান পুরাণগুলিতে কার্ত্তিকের জন্মকথা ও কীর্তি কাহিনি সবিস্তারে বর্ণিত হয়েছে।

দেখা যায় বিভিন্ন পুরাণেই কথিত রয়েছে দেবতা ও অসুরদের প্রচণ্ড সংগ্রাম এবং দেবতাদের পরাজয়ের পটভূমিকায় শিব-পার্বতীর পুত্ররূপে কার্ত্তিকের জন্ম হয়েছিল। আবার কার্ত্তিকের জন্ম-উপাখ্যানটি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, কার্ত্তিকের জন্মের পিছনে ছিল শিব-পার্বতীর কঠোর তপস্যা। সন্তান আসবে পিতা-মাতার সংযম ও তপস্যার সেতুপথে-এটাই প্রাচীন ভারতীয় দাম্পত্য জীবনের মূল দর্শন। কাত্তির্কের স্ত্রীর নাম দেবসেনা। সেকারণেও তিনি ‘দেবসেনাপতি’ আবার দেবসেনাবাহিনীর নায়কত্বের জন্য ও তিনি ‘দেবসেনাপতি’ নামে পরিচিত।

কার্তিকের জন্ম অমাবস্যা তিথিতে। পরবর্তী পাঁচদিনে তাঁর প্রাপ্তবয়স্কতা লাভ। ষষ্ঠদিনে তাঁর দেবসেনাপতিত্বে অভিষেক এবং দেবসেনার আধিপত্য লাভ, যুদ্ধাভিমান ও বিজয়।শুক্লা ষষ্ঠী তিথিতেই দেবসেনার সঙ্গে কার্ত্তিকের বিবাহ। একমতে তাঁর পত্নী ‘দেবসেনা’ হলেন ব্রহ্মার কন্যা। মতান্তরে তিনি আবার ইন্দ্রের কন্যা৷ তারকাসুরকে বধ করেছিলেন কার্তিক। তখন কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ইন্দ্র তাঁর মেয়ে দেবসেনার সঙ্গে বিয়ে দিলেন শিবপুত্রের কারণ তারকাসুর দেবতাদের পরাজিত করে সে স্বর্গলোক অধিকার করেছিল।

বিয়ের পর স্ত্রী দেবসেনার সঙ্গে নিয়ে কৈলাসে বসবাস শুরু করেন কার্তিক। মা, বাবা আর ভাই গণেশের সঙ্গে সুখে দিন কাটছিল। কিন্তু, ভাই গণেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখে পড়তে হল কার্তিককে৷ প্রতিযোগিতার বিষয় – দুই ভায়ের মধ্যে কে আগে সারা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করতে পারবে৷ তা শুনে বাহন ময়ূরে চড়ে সারা পৃথিবী ঘুরতে বেড়িয়ে পড়েন কার্তিক৷ কিন্তু ফিরে এসে দেখলেন তার আগেই বিজয়ীর সম্মান পেয়ে গিয়েছেন গণেশ কারণ তিনি বাবা-মাকেই পৃথিবীজ্ঞানে তাঁদের প্রদক্ষিণ করে এই কাজটি সেরেফেলেছেন। সকলেই প্রশংসা করছেন তাঁর বুদ্ধির।

এরপর একরাশ অভিমান নিয়ে কৈলাস ত্যাগ করে স্ত্রী দেবসেনাকে সঙ্গে নিয়ে কার্তিক চলে আসেন দক্ষিণ ভারতে। সেখানকার উপজাতি তাঁকে বরণ করে নেয় এবং ময়ূরবাহন বা মুরুগন বলে শ্রদ্ধা জানায়৷ এই সময়ে একদিন সেখানকার ক্ষেতে একটি কালো মেয়েকে দেখে আকৃষ্ট হন৷ মেয়েটি হল স্থানীয় উপজাতি রাজার মেয়ে বল্লী৷ তখন কার্তিক বল্লীর মন জয় করতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করে বিফল হলে গণেশ দাদাকেই স্মরণ করেন। ভাইয়ের ডাকে সাড়া দিয়ে গণেশ এক পাগলা হাতির রূপ ধরে এসে বল্লীর পথ আটকালেন৷ তখন ভয় পেয়ে চোখ বন্ধ করে বৃদ্ধরূপী কার্তিকেই জড়িয়ে ধরেন বল্লী। তখন কার্তিক ওই মেয়েটির কাছে প্রতিশ্রুতি আদায় করলেন- হাতিটাকে তাড়াতে পারলে বল্লী তাঁকে বিয়ে করবে৷ এরপর ভয় কাটিয়ে চোখ খুললে বল্লী অবশ্য দেখতে পান সুদর্শন যুবক কার্তিককে৷ তারপরে বিয়ে হয় তাদের৷

বাংলায় কার্তিক পুজো হলেও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কার্তিক অধিক জনপ্রিয়। তামিল ও মালয়ালম ভাষায় কার্তিক মুরুগান বা মায়ূরী কন্দসামী নামে পরিচিত৷ এদিকে কন্নড় ও তেলুগু ভাষায় তিনি সুব্রহ্মণ্যম নামে পরিচিত। তামিল বিশ্বাস অনুযায়ী মুরুগান তামিলদেশের রক্ষাকর্তা। দক্ষিণ ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও মরিশাস – যেখানে যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠীর প্রভাব বিদ্যমান সেখানেই মুরুগানের পূজা প্রচলিত। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাংশে কার্তিকেয়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত কথারাগম (সিংহলি ভাষায় “কথারাগম দেবালয়”) মন্দিরে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.