নিজের দলকে ইচ্ছে করে হারিয়ে ছিলেন ইন্দিরা, কংগ্রেস থেকে করা হয়েছিল বহিষ্কার


Odd বাংলা ডেস্ক: ১১ই জানুয়ারি,১৯৬৬, রাত দু’টো নাগাদ, লালবাহাদুরের রহস্যময় মৃত্যু হল ওই তাসখন্দেই (সেই রহস্যভেদ হয়নি আজ, ঘটনার ৫০ বছর পার হয়ে যাবার পরও!)।

তড়িঘড়ি, গুলজারিলাল নন্দকে কর্মনির্বাহী প্রধানমন্ত্রী করে, স্থায়ী প্রধানের খোঁজ শুরু হল কংগ্রেসে।

তখনও কংগ্রেসে একটা ‘সর্বভারতীয় রূপ’ ছিল। এখনকার মত একেবারে ‘১০, জনপথ রোডমুখী’ ছিলনা। দলের সভাপতি ছিলেন তামিলনাড়ুর কুমারস্বামী কামরাজ, যাঁকে ভারতীয় রাজনীতির ‘বিগ ড্যাডি’ বলা হত। বলতে গেলে, কামরাজই ছিলেন দলের সর্বেসর্বা।

কামরাজ প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করলে হয়তো কংগ্রেস দলটা ভাঙতোই না। কিন্তু, কামরাজ, তাঁর ইংরেজি ও হিন্দি বলার অক্ষমতার দোহাই দিয়ে প্রধানমন্ত্রীত্বর দাবী থেকে সরে দাঁড়ালেন। তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি সমসাময়িক সবার মনে আছে নিশ্চয় – ” No Hindi, no English – How?

অতএব, প্রধানমন্ত্রী হবার দৌড়ে রইলেন মোরারজি এবং ইন্দিরা, আর ‘কিং মেকারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন কামরাজ। মোরারজি ছিলেন নেহেরুর পছন্দের ব্যক্তি ; আর ইন্দিরা, খোদ নেহেরুকন্যা। ‘ডুয়েলটা’ যে জমবে জানাই ছিল।

কামরাজ, ইন্দিরাকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন আর মোরারজিভাইকে, উপপ্রধানমন্ত্রী।

‘প্রধান’ আর ‘উপপ্রধান’য়ে বিস্তর ফারাক! ইন্দিরা ও মোরারজি – কেউই এক নম্বর হবার দাবি থেকে একচুল নড়লেন না। ফলে সাংসদদের ভোটাভুটি করতে হল। তখন ভারতে ১৪টি রাজ্য ছিল। গুজরাত ও উত্তরপ্রদেশের এম পি’রা দেশাইকে ভোট দিলেন। বাকিরা গেলেন ইন্দিরার পক্ষে। ফলাফল : ইন্দিরা ৩৫৫ আর মোরারজি ১৬৯ ভোট। ইন্দিরা গান্ধীই ভারতের প্রধানমন্ত্রী হলেন। ইন্দিরার এই জয়ে, দলের বয়োজ্যেষ্ঠরা সামিল ছিলেন। অথচ, ক্ষমতা হাতে পেয়েই ইন্দিরা, ‘বুড়োদের’ ডানা ছাঁটতে শুরু করে দিলেন। গান্ধী পরিবার অন্য কারো সাথে ক্ষমতা ভাগ করেনা।  এল সাতষট্টির সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনে ইন্দিরার নেতৃত্বে, কংগ্রেস জোর ধাক্কা খেল।

 গুজরাত, মাদ্রাজ, রাজস্থান, ওড়িশা, বাংলা, কেরল ও দিল্লিতে জঘন্য ফলাফল করল দল। অযোগ্যতার বোঝা চাপল ইন্দিরার মাথায়। দলের বয়োজ্যেষ্ঠরাও সেই সুযোগে কোণঠাসা করে দিল নেহেরুকন্যাকে।  এরপর হল রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। কংগ্রেসের প্রার্থী হলেন নীলম সঞ্জীব রেড্ডি। নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ালেন ভি ভি গিরি। ইন্দিরা, ‘বুড়োদের’ জব্দ করতে, তলেতলে, কংগ্রেসের ও বিরোধী দলের বেশ কিছু এম পি ও এম এল এ’র সাথে একটা যোগসাজশ করে কংগ্রেসের প্রার্থীকেই দিলেন হারিয়ে। ভি ভি গিরি হয়ে গেলেন দেশের রাষ্ট্রপতি।  কারোরই বুঝতে অসুবিধা হলনা, কার কারসাজিতে কংগ্রেস প্রার্থীর হার হয়েছে, দলবিরোধী কাজ কার।  অভিযুক্ত ইন্দিরার দোষ প্রমাণিত হতেই, কংগ্রেস সভাপতি, নিজালিংগাপ্পা, কংগ্রেস থেকে ইন্দিরাকে বহিষ্কার করে দিলেন।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.