'সেনা নয়, সাধারণ মানুষেদেরই মারব'- কেন এই মন্ত্রে দীক্ষিত হল হিজবুল-জইশ জঙ্গিরা?


Odd বাংলা ডেস্ক: জম্মু ও কাশ্মীরে ঘটে চলা হিংসাত্মক ঘটনা নতুন কিছু নয়। জঙ্গি ও সেনার মধ্যেকার সংঘর্ষ বহুদিনের। কিন্তু সম্প্রতি জঙ্গিরা নিজেদের লক্ষ্যবস্তু খানিকটা হলেও বদলেছে। সেনাদের পরিবর্তে তারা এখন বাইরে থেকে আগত শ্রমিকদের ওপর নির্বিচারে হত্যালীলা চালাচ্ছে জঙ্গিরা। এইভাবেই গত ২৯ অক্টোবর কাশ্মীরের কুলগামে মুর্শিদাবাদের ৫জন শ্রমিককে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। শ্রমিকরা সকলেই দক্ষিণ কাশ্মীরের বিস্তীর্ণ উপত্যকায় বাগানে এবং ধানক্ষেতে চাষাবাদ করতেন। এই হত্যালীলা সেদিনই সংঘটিত হয় যেদিন ২৩ সদস্যের একটা প্রতিনিধি দল শ্রীনগরে গিয়েছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে। 

গত ১৪ অক্টোবর থেকে কুলগামে এই শ্রমিক আক্রমণের ঘটনা পর্যান্ত এযাবত কাশ্মীরে ষষ্ঠবার শ্রমিক আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। এই গোটা হামলায় মোট হতাহতের সংখ্যা ১১। গত ১৪  অক্টোবর, শোপিয়ানে রাজস্থান থেকে আসা এক ট্রাক চালক মহম্মদ শরিফকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর পুলওয়ামায় ছত্তিশগড় থেকে আসা এক শ্রমিক শেঠি কুমার সাগরকে হত্যা করা হয়েছিল। ওই একইদিনে শোপিয়ানে পঞ্জাবের ট্রাকচালক চরনজিৎ সিং-কেও হত্যা করা হয়েছিল। ২৩ শে অক্টোবর শোপিয়ান জেলায় রাজস্থানের দুই ট্রাক চালক মোহাম্মদ ইলিয়াস ও জাহিদ নিহত হয়। ২৮ শে অক্টোবর, অনন্তনাগের বিজবেহর এলাকায় জম্মুর কাটরা থেকে আসা ট্রাক চালক নারায়ণ দত্তকেও জঙ্গিরা হত্যা করে।

জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রদানকারী ৩৭০ ধারা বাতিলের পরে উপত্যকায় আসন্ন জনসংখ্যার পরিবর্তনের আশঙ্কা বেড়েছে। আর জম্মু ও কাশ্মীরের জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা, হিজবুল মুজাহিদিন-এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি এই আশঙ্কাকে পুঁজি করেই এইভাবে হুমকি জারি করেছে। আর তার ভিত্তিতেই কাশ্মীরের স্থানীয় অর্থনীতির (পর্যটন, কৃষিকাজ, হস্তশিল্প) ওপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে। 

কাশ্মীরের এই স্থানীয় অর্থনীতির মেরুদণ্ড হল বাইরে থেকে আগত শ্রমিকরা, যারা ভিন রাজ্য থেকে এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এসে স্থানীয় অর্থনীতিকে পোক্ত করে তুলেছিলেন। আর এইসব শ্রমিকরা মূলত, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসেন। এদের বেশিরভাগই এখানে রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, দিনমজুর, এমব্রয়ডার এমনকী সোনার দোকানেও কাজ করেন। তবে কাশ্মীরে জঙ্গিবাদের তিন দশকের ইতিহাসে এ জাতীয় আক্রমণ অস্বাভাবিক কিছু নয়। ২০০২ সালের সবচেয়ে নিন্দনীয় ঘটনাটি ঘটেছিল জম্মুর উপকণ্ঠে কাসিম নগরে, যেখানে ২৯ জন শ্রমিককে গণহত্যা করা হয়েছিল, যাতে গোটা বিশ্ব নিন্দা প্রকাশ করেছিল।

সেই একই প্রবণতী আবারও ফিরে এসেছে বলে মনে কার হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট জম্মু ও কাস্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার পর থেকে, উপত্যকার জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল জঙ্গিদের পোস্টার। স্থানীয় ও অ-স্থানীয়দের জায়গা খালি করে দেওয়ার সতর্কতা জারি কেরছিল জঙ্গিরা। 

একটা সময় ছিল যখন অভিবাসী হিন্দু ও মুসলিমরা কাশ্মীরি মুসলিমদের সঙ্গে সহাবস্থান করত। কাশ্মীরি মুসলিমরাই তাঁদের নিজেদের বাড়িতে ভাড়া থাকতে দিত। তবে সেই পরিবেশে এখন বিরাট পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে অভিবাসীদের উচ্ছেদ করতে চায় সেখানকার স্থানীয়রা। এখন সেখানকার স্থানীয় মানুষদের মনে একটাই ভয় যে, অস্থানীয় অভিবাসীরা এখানে থাকতে থাকতে এখানে পাকাপাকিভাবে আধিপত্য বিস্তার করতে পারে। এবং একদিন কাশ্মীরিদেরই উৎখাত করতে পারে। নিজেদের সন্তান সন্ততির কথা ভেবেই এখন আর অভিবাসীদের খুব একটা ভরসা করতে পারে না স্থানীয় কাশ্মীরিরা।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.