২৫ বছর একটা ঘরে বন্দি, অবশেষে কীসে পরিণত হল মেয়েটি, দেখুন...


Odd বাংলা ডেস্ক:  ১৮৪৯ সালের ১ মার্চে ফরাসী এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম নেয় এক ফুটফুটে মেয়ে। নাম রাখা হয় ব্ল্যাঞ্চ মনিয়ের। ম্যাডাম মনিয়েরের দানশীলতার জন্য এলাকায় বেশ নাম-ডাক ছিল মনিয়ের পরিবারের।মেয়ে ব্ল্যাঞ্চ ছাড়াও তার ছিল এক ছেলে। তার নাম মারসেল মনিয়ের। পেশায় উকিল। এক ছেলে-এক মেয়ে নিয়ে সুখের পরিবার মনিয়েরদের।

ছোটবেলায় যত না সুন্দর ছিল ব্ল্যাঞ্চ, বড় হবার পর সে রূপ আরও বেড়ে যায়। মেয়ের রুপ নিয়ে অহংকারের শেষ নেই মায়ের। মেয়ে তখন পূর্ণ যুবতী। ২৫ বছর বয়স। মা তার পছন্দ করা অভিজাত পরিবারের এক পাত্রের সাথে বিয়ে ঠিক করলো ব্ল্যাঞ্চের। কিন্তু ততদিনে ব্ল্যাঞ্চ মন দিয়ে বসে আছে অন্য একজনকে। পেশায় সে সাধারণ একজন উকিল। পরিবারও সাদামাটা একদম।

ব্ল্যাঞ্চ তার পছন্দের মানুষটিকে মায়ের সামনে নিয়ে আসে। কিন্তু পারিবারিকভাবে অভিজাত ও স্বনামধন্য না হওয়ায় তার সাথে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায় মা। তার পছন্দ করা পাত্রকেই বিয়ে কর‍তে হবে ব্ল্যাঞ্চকে- এ কথা জানিয়ে দেয় সে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি না হলে ব্ল্যাঞ্চকে একটি ছোট রুমে আটকে রাখে তার মা।

বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তির একটি মাত্র উপায় বলে দেয় মা সেটি হলো তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি হওয়া। কিন্তু মায়ের মতো মেয়েও তার সিদ্ধান্তে অটল। বিয়ে যদি করতেই হয়, উকিল ছেলেটিকেই করবে!

বছরের পর বছর চলে যায়, ব্ল্যাঞ্চ তার সিদ্ধান্তে থাকে অনড়। মায়ের অহংকারী-জেদী মনও গলে না। ফলে মুক্তিও আর মেলে না। ১৮৮৫ সালে, ব্ল্যাঞ্চের ভালোবাসার মানুষটি মারা যাবার পরও তাকে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়! এদিকে ব্ল্যাঞ্চের মা আর ভাই প্রচার করেন ব্ল্যাঞ্চ হারিয়ে গেছে এবং তার শোকে তারা কাতর!

২৫ বছর পর, ১৯০১ সালে, প্যারিসের এটর্নি জেনারেলের কাছে বেনামে একটি চিঠি পৌঁছে। কে বা কারা চিঠিটি পাঠিয়েছে, কখনোই তা জানা যায়নি। সেখানে লেখা থাকে- মনিয়ের পরিবার বহু বছর ধরে তাদের বাড়িতে আটকে রেখেছে এক ব্যক্তিকে। মনিয়ের পরিবারের সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে প্রথমে না চাইলেও পরে তদন্ত চালাতে নির্দেশ দেন জেনারেল।

বাড়িতে তল্লাসি চালিয়ে কিছুই খুঁজে না পেয়ে যখন ফিরে যাবে সৈন্যরা, তখনই একজন সেনার নাকে আসে বোটকা এক পঁচা গন্ধ। সেই গন্ধ অনুসরণ করে চিলেকোঠায় পৌঁছালে সেখানে একটি অন্ধকার তালাবদ্ধ রুম দেখতে পায় তারা। রুমটিতে কেবলমাত্র একটি বন্ধ ছোট জানালা ছিল, তাও মোটা পর্দা দেওয়া। কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না বাইরে থেকে। সন্দেহ হওয়ায় জানালার কাচ ভেঙে ফেলে এক সেনা। ভাঙা কাচের ভেতর দিয়ে তারা দেখতে পায় রুমের এক কোনায় শেকলাবদ্ধ এক নারী! তাকে দেখে সেনারা দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করলে দেখতে পায় বিভৎস এক দৃশ্য।

ছোট একটি বিছানায় পঁচা খাবার আর কোটি কোটি কীটের মধ্যে শুয়ে আছে মনিয়ের ব্ল্যাঞ্চ। এই ২৫ বছরে বাইরের আলো-বাতাস থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন ছিল সে। চেহারাও বিদঘুটে হয়ে গেছে। তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সে সময় তার ওজন ছিল মাত্র ২২ কেজি! কিন্তু বিগত ২৫বছরের ভয়াবহ স্মৃতি মাথা থেকে কিছুতেই মুছে ফেলতে পারেনি মনিয়ের ব্ল্যাঞ্চ। ফলে, গুরুতর মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তার।

ব্ল্যাঞ্চকে ভর্তি করা হয় ফ্রান্সের এক সাইকিয়াট্রিক হাসপাতালে। ১৯১৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত, জীবনের বাকিটা সময় এখানেই কাটায় সে। ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে চাওয়ার ‘অপরাধে’ এই শাস্তি পেতে হলো তাকে।

আর ব্ল্যাঞ্চের মা আর তার ভাই-এর পরিণাম? ব্ল্যাঞ্চকে উদ্ধারের পর এরেস্ট করা হয় তার মা ও ভাইকে। মা অসুস্থ হয়ে গেলে জামিন পেয়ে বাসায় যায়। কিন্তু ততদিনে সবাই কাহিনী জেনে গেছে।

ব্ল্যাঞ্চ উদ্ধার হওয়ার ১৫দিনের মাথায় বিক্ষুব্ধ জনতা ভিড় করে তাদের বাসার সামনে। আতঙ্কিত হয়ে হার্ট এটাক করে সেদিনই মারা যায় মিসেস মনিয়ের। এভাবেই একজন জেদি মায়ের সংসার ধ্বংস হয়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.