প্রাচীনকালে সোনা দিয়ে বাঁধানো হত দাঁত! মিললো তার প্রমাণ



Odd বাংলা ডেস্ক: খননকার্যের মাধ্যমে মিশরীয় সভ্যতা সম্পর্কিত তথ্য উদঘাটনের সময় তৎকালীন মানুষদের মৃতদেহ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, জীবদ্দশাতেই তাদের অধিকাংশের দাঁত ভীষণভাবে ক্ষয়ে গিয়েছিল। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে তাদের নিম্নমানের খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী বলে মনে করা হয়। তাদের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন ও খনিজের অভাব তো ছিলই, উপরন্তু তারা যে রুটি খেতো, তাতে ভুসি, খড় এমনকি পাথর ও ধূলিকণাও মিশে থাকতো। খাবারের সাথে এ ধরণের ধারালো, শক্ত পদার্থ চিবানোর কারণে তাদের দাঁত খুব দ্রুত ক্ষয়ে যেত। এছাড়া মরুভূমির ধূলিময় পরিবেশেরও এক্ষেত্রে কিছুটা ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়।

মিসরীয় দন্তচিকিৎসকগণের লিপিবদ্ধ করা তথ্য থেকে জানা যায় যে, তাদেরকে সেসময় দাঁতের গোড়ায় পুঁজ জমা, দাঁতের পাথর, মাড়ির রোগ, পেরিওডন্টাল লিগামেন্টের প্রদাহ, চোয়ালের হাড়ের সমস্যা, নড়ে যাওয়া দাঁত, মুখের ভেতরের ক্ষত ও ঘা, এমনকি দাঁতের সংক্রমণ থেকে ছড়িয়ে পড়া বিষক্রিয়ার চিকিৎসাও করতে হয়েছে।

মিসরীয় সভ্যতায় প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতিসমূহের সংকলন ‘এবার'স প্যাপাইরাস’-এ সে সময়কার দন্তচিকিৎসার এগারোটি পন্থা তুলে ধরে হয়েছে। যার একটিতে নড়বড়ে দাঁতের চিকিৎসায় ‘ফিলিং’ এর ব্যবহার দেখা যায়। এই ‘ফিলিং’ তৈরিতে ব্যবহার করা হতো বার্লি, মধু আর অ্যান্টিসেপটিক। এরপর তা দিয়ে নড়ে যাওয়া দাঁতে ফিলিং দেওয়া হতো অথবা দাঁতটিকে তার সকেটের হাড়ের সঙ্গে আটকে স্থির করে দেওয়ার চেষ্টা করা হতো। শুধু তা-ই নয়, এরপর রোগীকে ব্যথা ও প্রদাহ কমার জন্যে, দাঁত ও মুখ সুস্থ রাখার জন্যে বিভিন্ন সিরাপ এবং মাউথওয়াশও ব্যবহার করতে হতো। এছাড়াও মধু, গিরিমাটি ও গমের চূর্ণের মিশ্রণ, জিরা, ফল ও ভেষজ উপাদানের মিশ্রণ, কিংবা শুধু কাপড়ের টুকরোকেও ফিলিং হিসেবে ব্যবহার করা হতো।

তৎকালীন চিকিৎসা কেবল ভেষজ ওষুধপথ্য দিয়ে রোগ সারানোতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, দাঁতে জমা হওয়া পুঁজ ড্রিল করে বের করাসহ মাড়ি এবং চোয়ালের নিখুঁত সব অস্ত্রোপচারও করতেন সে সময়কার দন্তচিকিৎসকগণ। খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ সালেই মুখগহ্বরের অস্ত্রোপচারে ফরসেপ, স্কালপেলসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার হতো।

আধুনিককালে দাঁত পড়ে গেলে যেমন ব্রিজ করে দাঁত প্রতিস্থাপন করা হয়, প্রাচীন মিশরে প্রায় সে ধরণের চিকিৎসারও তিনটি নিদর্শন পাওয়া গেছে। পড়ে যাওয়া দাঁতকে ফুটো করে, স্বর্ণ বা রৌপ্যনির্মিত তার দিয়ে সেটিকে পাশের সুস্থ দাঁতের সঙ্গে বেঁধে রাখতে দেখা গেছে এসব নিদর্শনে। এর কোনোটিতে রোগীর নিজের পড়ে যাওয়া দাঁতটিই ব্যবহার করা হয়েছে, আর কোনোটিতে সংগৃহীত দাঁত কাজে লাগানো হয়েছে। তবে এই চিকিৎসা রোগীর জীবদ্দশায়ই করা হয়েছিল, নাকি তার সৎকারের সময় তাকে নিখুঁত করে তোলার জন্যে করা হয়েছিল, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.