ফিরে দেখা ২০১৯: এক ঝলকে দেখে নিন বছরের সেরা ১০ বাংলা ছবি




Odd বাংলা ডেস্ক: ২০১৯ বাংলা সিনেমায় একটা মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। ২০১৯-এ এমন কিছু বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে, যা কেবল জাতীয় স্তরেই নয় আন্তর্জাতিক স্তরেও সমানভাবে সমাদৃত হয়েছে। তেমনই এক গুচ্ছ সিনোর মধ্যে থেকে Odd বাংলা বেছে নিয়ে এমন ১০টি ছবি যা, মানুষের মনে দাগ কেটে গিয়েছে। 

১) নগরকীর্তন- কৌশিক গাঙ্গুলি পরিচালিত ঋদ্ধি সেন এবং ঋত্বিক চক্রবর্তী অভিনীত এই ছবিতে ফুটে উঠেছে এক রূপান্তরকামীর জীবন সংগ্রামের কাহিনি। শিক্ষক সুভাস দার কাছ থেকে প্রত্যাখাত হয়ে পরিমল বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসে এবং পুঁটি রূপে নিজেকে আবিষ্কার করে। এরপর ডেলিভারি বয় মধুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে সে। এরপর পরিমল শারীরিকভাবে পুঁটি হয়ে ওঠার জন্য অর্থ যোগাড় করে তাঁদের ভালবাসাকে পরিণতি দেওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু সমাজ তাঁর স্বপ্নকে পায়ের নীচে পিষে দেয়। এইসব টানাপোড়েনের মাঝে নিজেকে শেষ করে দেয় পুঁটি।

২) কণ্ঠ-  নন্দিতা রায় এবং শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এই ছবির গল্পটি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এক ব্যক্তির জীবন ও সংগ্রামের কথা বলে। অর্জুন মল্লিক একজন বিখ্যাত রেডিও জকি। তার শ্রোতা তার কণ্ঠের অনুরাগী। তাঁর স্ত্রী পৃথাও একজন কণ্ঠ শিল্পী। হঠাৎ করে জানা যায় যে অর্জুন ল্যারেনজিয়াল ক্যান্সারে আক্রান্ত। তিনি রমিলা নামের একজন বক্তৃতা থেরাপিস্টের সঙ্গে মিলিত হন এবং খাদ্যনালীর দ্বারা কথা বলতে শেখেন। তিনি কথা বলতে পারেন না, কিন্তু নিজের উন্নত করেন। অসামান্য এই গল্প দর্শকদের মনে দাগ কেটে গিয়েছিল। 

৩) মুখার্জি দার বউ- কনীনিকা বন্দোপাধ্যায়, অনুসূয়া মজুমদার অভিনীত নির্ভেজাল পারিবারিক ছবি মুখার্জি দার বউ। প্রত্যেক মেয়ের শ্বশুর বাড়ি আর বাপের বাড়ির ভীড়ে নিজের বাড়ির খোঁজ দিয়েছে এই ছবি। শাশুড়ি-বউমার একে অপরের অভিযোগের তীরগুলি তীক্ষ্ণভাবে এই সমাজকে ফিরিয়ে দিয়েছে এই ছবি। 

৪) পরিণীতা- নতুন রূপে বড় পর্দায় নিজের কামব্যাক করেছেন শুভশ্রী। নিজের স্কুলজীবনের প্রেম বাবাই দা-র আত্মহত্যার নেপথ্যের ঘটনা খুঁজে বের করতে গিয়ে অসম্ভব ভাঙা-গড়ার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে মেহুলের জীবন। অবশেষ তাঁর বাবাই দা-কে যাঁরা মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিল তাদের শাস্তি দেয় মেহুল। মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির বাইরে রাজ চক্রবর্তীর এক অন্য ধারার ছবিতে শুভশ্রীর অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা পরিণীতাকে এক অন্য মাত্রা দিয়েছে।

৫) গোত্র- সমাজে বেঁচে থাকার জন্য জাত-ধর্ম-গোত্র যে মূল্যহীন, বরং মনুষ্যত্ব ও মানবতাই মানুষের সবচেয়ে বড় ধর্ম সেই বার্তাই দিয়েছে নন্দিতা রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত গোত্র, অনুসূয়া মজুমদার ও নাইজেল আকারার অসাধারণ অভিনয় এই ছবির প্রধান ইউএসপি। 

৬) গুমনামী- সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত এবং প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য অভিনীত গুমনামী- এই বছরের বহুল চর্চিত একটি বাংলা ছবি। জীবন-মৃত্যুর ঘূর্ণিঝড়ে নেতাজি কখন বেঁচে ছিলেন, কখন শহিদ হয়েছিলেন, কখন বিদেশে, কখন দেশে তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন-এই সবের কোলাজ হল এই ছবি। ইতিহাসের দলিল এই ছবিতে তিনটি কমিশনের রায় তুলে ধরা হয়েছে। নেতাজীর চরিত্রে প্রসেনজিৎ-এর অভিনয় বিশেষ প্রশংসিত হয়েছে।

৭) মহালয়া- বাঙালির শয়নে-স্বপনে মিশে রয়েছে মহালয়া। বাঙালির কাছে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে মহালয়া একটা আবেগের জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু ১৯৭৬ সালে সেই প্রবাদপ্রতিম বীরেন্দ্রকৃষ্ণকেই বাদ পড়তে হয়েছিল রেডিওর মহালয়া থেকে। সেই বার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র বদলে সম্প্রচারিত হয় ‘দুর্গা দুর্গতিনাশিনী’। মহালয়ার দিন স্তোত্র পাঠের জন্য আমন্ত্রণ পান মহানায়ক উত্তম কুমার। কিন্তু, শ্রোতারা কিন্তু কোনওভাবেই গ্রহণ করেননি মহানায়ককে। এরপর একপ্রকার বাধ্য হয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণকে ফিরিয়ে আনে আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। সেই গল্পই ফুটে উঠেছে পর্দায়। 

৮) বর্ণপরিচয়- সিরিয়াল কিলিং নিয়ে মৈনাক ভৌমিকের ছবি বর্ণপরিচয়। নিজের স্ত্রীয়ের মৃত্যুর বদলা নিতে কীভাবে একে একে খুনের ছক কষবে অর্ক, কীভাবে  রবীন্দ্রনাথ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নৌকাডুবি, পদ্মানদীর মাঝির ছেঁড়া পাতা, রবীন্দ্রসঙ্গীত, লালনগীতি, আশা ভোঁসলে, পঞ্চভূত এসবের মধ্যে যোগসূত্র রয়েছে এই নিয়েই আবর্তীত হয়েছে ছবিক গল্প। 

৯) বিজয়া- বিজয়া ছবিটি কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়েরর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি বিসর্জন এর সিকুয়েল। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়, জয়া এহসান, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় ও আরও অনেকে। ছবিতে, পদ্মা গণেশ মন্ডলের স্ত্রী, বহুদিন পর তার কলকাতায় নাসিরের সাথে দেখা হয়। আবার কি পদ্মা ও নাসির কাছাকাছি আসবে ? তাদের মধ্যে কি আবার সম্পর্ক তৈরী হবে? গণেশ মন্ডল কিভাবে দেখবে পদ্মা ও নাসিরের সম্পর্ক? কি হবে অবশেষে-এই নিয়েই গড়ে উঠেছে ছবির গল্প।

১০) বসু পরিবার: ২০১৯ সালে বক্স অফিসে এই ছবি তেমন কামাল না দেখাতে পারলেও এই ছবির যে স্টার কাস্ট তা মানুষের বেশ পছন্দ হয়েছিল।  জেমস জয়েসের ‘ডাবলিনার্স’ বইয়ের অন্যতম এবং সবচেয়ে লম্বা গল্প ‘দ্য ডেথ’ অবলম্বনে সুমন ঘোষের ‘বসু পরিবার’। ‘দ্য ডেথ’ গল্পের কিছু অংশ, বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, ইংরেজি সাহিত্যের অন্যতম সেরা সৃষ্টি। আয়ারল্যান্ডের প্রেক্ষাপটে এই গল্পটি এমনিতেও অতি সুস্বাদু আইরিশ হুইস্কির মতো— তাল, লয়, মানে স্বাদ, নেশায় সামঞ্জস্যপূর্ণ এক অসাধারণ সৃষ্টি।

সেই গল্পটিকেই বাংলায় ফেললে কেমন হবে, সেটাই চেষ্টা করেছেন সুমন ঘোষ। অবশ্যই আসল গল্পটির থেকে অনেক কিছুই পাল্টাতে হয়েছে তাঁকে। যেমন গল্পটির মূল বিরোধ যেখানে, যা থেকে গল্পের শেষে অবিনশ্বরের উদাসীনতা প্রকাশ পায়, তা এখানে মূল গল্পটি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তবে এই ক্ষয়ে যাওয়া সাবেক পরিবারে যে বাঙালি ৫১ বর্তী পরিবারের গল্প উঠে এসেছে তা প্রশংসার যোগ্য।
 


Blogger দ্বারা পরিচালিত.