চন্দ্রপুলি, মোহনবাঁশি, ক্ষীর মুরলি, বাংলার হারিয়ে যাওয়া পিঠার কথা


Odd বাংলা ডেস্ক: ঠাকুরমার ঝুলি না পড়া, নিদেনপক্ষে বিভিন্নভাবে ঠাকুরমার ঝুলির গল্পগুলো না শোনা বাঙালি বিরল প্রজাতির। সেসব গল্পের ঝাঁপি খুলে বসলেই পাবেন ‘কাঁকনমালা-কাঞ্চনমালা’। হাতের কাঁকন দিয়ে কিনে আনা দাসী কাঁকনমালা পাটরানি হয়ে ওঠে তার দুষ্ট বুদ্ধিতে। দুঃখী কাঞ্চনমালার কপালে বেজায় কষ্ট তখন। কিন্তু পাটরানির আভিজাত্য তো আর চলে যায়নি! হারানো সম্মান ফিরে পেতে কাঞ্চনমালাকে নামতে হয়েছিল পিঠা তৈরির এক অদ্ভুত যুদ্ধে। দাসী কাঁকনমালার দুষ্ট বুদ্ধিতে পরাজিত রানি কাঞ্চনমালা পাটরানির আসন ফিরে পেয়েছিলেন চন্দ্রপুলি, মোহনবাঁশি, ক্ষীর মুরলি, চন্দনপাতা—এসব পিঠা বানিয়ে। আর দাসী কাঁকনমালা আস্কে, চাস্কে আর ঘাস্কে পিঠা বানিয়ে বেঘোরে নিজের পৈতৃক প্রাণটা খুইয়েছিলেন জল্লাদের হাতে। গল্পের এই টুইস্টে নিহিত আছে বাঙালির সমৃদ্ধির গল্প। 

চন্দ্রপুলি, মোহনবাঁশি, ক্ষীর মুরলি, চন্দনপাতা আর আস্কে, চাস্কে, ঘাস্কে পিঠা দুই অর্থনৈতিক স্তরের মানুষের পিঠা। স্বাভাবিকভাবে এর আয়োজন দুই রকম। চন্দ্রপুলি, মোহনবাঁশি, ক্ষীর মুরলি, চন্দনপাতা এই পিঠাগুলোর নামেই বোঝা যায় কোনোটা ক্ষীরের তৈরি, কোনোটা দুধে ভেজানো আর কোনোটা কড়া করে গুড়ের মিষ্টিতে বানানো। আস্কে, চাস্কে, ঘাস্কে পিঠা অর্থনৈতিকভাবে নিচু স্তরের মানুষের পিঠা। শুধু চালের আটা ভিজিয়ে তাওয়ায় ভেজে বানানো হয় এই পিঠাগুলো। আর খাওয়ার অনুষঙ্গ? কেন, আপনিও তো খান নিয়মিত। রাস্তার ধারে মরিচভর্তা, সরিষাভর্তা, শুঁটকিভর্তা ইত্যাদি বিভিন্ন ভর্তা দিয়ে রসিয়ে রসিয়ে যে চিতই পিঠা খান, তাই আস্কে পিঠা জনাব। এবার আস্কের ভাই চাস্কে, ঘাস্কের ব্যাপারটা ভাবার চেষ্টা করুন।  পিঠার সঙ্গে জড়িয়ে আছে সুসংহত কৃষি–সংস্কৃতি ও সমৃদ্ধির গল্প। যে অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতি যত সমৃদ্ধ, সে অঞ্চলের পিঠাও তত বৈচিত্র্যময়, বর্ণিল। ধান উঠে গেলে পর এক আয়েশি ভঙ্গিতে গৃহস্থ গিন্নি পিঠা করতে বসেন। ধান উঠে যাওয়ায় গৃহস্থেরও মন থাকে ফুরফুরে। হিম হিম শীতের মেদুর সন্ধ্যাগুলো তখন হয়ে ওঠে বর্ণিল। উঠি উঠি করে না–ওঠা সূর্যের সন্দিগ্ধ সকাল হয়ে ওঠে সুস্বাদু। জীবনের এই সুবিশাল আয়োজনে খাদ্যবিলাসি বাঙালির থালা ভরে উঠবে পিঠায়, এর কোনো বিকল্প নেই।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.