রাজধানীর বুকে কাফে চালাচ্ছেন অ্যাসিড আক্রান্তেরা, সমাজের মুল স্রোতে ফিরে আসার লড়াই এখনও জারি


Odd বাংলা ডেস্ক: দিল্লির বুকে অবস্থিত সপ্তম আশ্চর্য তাজমহল দেখতে অনেকেই ভিড় জমান। কিন্তু তার থেকে মাত্র আধ মাইল দূরে রয়েছে এমন এক আশ্চর্যজনক জায়গা যার কথা জানলে আপনিও চাইবেন অন্তত একবার সেখান থেকে ঘুরে আসতে। আজকের ব্যস্ত জীবনে মনের মানুষের সঙ্গে হোক কিংবা পুরনো বন্ধুদের সঙ্গেই হোক, ক্যাফেটেরিয়াতে নিশ্চিন্তে সময় কাটানোর থেকে ভাল আর কী-ই বা হতে পারে। আর যদি সেই কাফে হয় বিশেষ মানুষদের উদ্যোগে তৈরি, তাহলে কেমন হবে। 

কাফের নাম Sheroes’ Hangout, যা আসলে সমাজের অ্যাসিড আক্রান্তদের দ্বারা পরিচালিত। অ্যাসিড আক্রান্ত ২২ বছরের রূপার কথায়, তাঁদের কাফেতে আসা একদল ভারতীয় পর্যটক তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। জীবনযুদ্ধে ফিরে আসার লড়াইয়ে রূপার সঙ্গে রয়েছেন আরও চারজন অ্যাসিড আক্রান্ত মহিলা। শুরুর দিন থেকেই তাদের কাফেতে যারাই এসেছে, তারা সকলেই ক্যাফেতে সময় কাটানোর বদলে অ্যাসিড আক্রান্তদের জীবনযুদ্ধের গল্প শুনতেই এসেছে। 

২০১৪ সালে এই কাফেটির উদ্বোধন করা হয়, যা আদতে 'স্টপ অ্যাসিড অ্যাটাক'-এর জনগণের তহবিলের একটি অংশ হিসাবে চালু করেছিল। এই কাফেতে আগত সাধারণ মানুষ নিজেদের সাধ্যমত অর্থ দান করতে পারেন, আর সেই অর্থ যায় অ্যাসিড আক্রান্তদের পুনর্বাসনের জন্য। এই কাফের পরিচালনার অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন চঞ্চল কুমারি। ২০১২ সালে তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেয় এক যুবক, কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তার ওপর অ্যাসিড হামলা করা হয়। বর্তমানে তাঁর পাঁচ নম্বর সার্জারির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন। 

রূপা, রীতু সাহানী, গীতা মাহর, এবং নীতু মাহর এবং চঞ্চল কুমারি- এঁরা সকলেই নিজেদের বেশ কয়েক বছর ধরে নিজেদের কার্যত গৃহবন্দি করে রেখেছিল। কাঁচা ঘা, বিকৃত চেহারা আর অসহ্য যন্ত্রণা মনের মধ্যে নিয়ে এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো একটি রেকর্ডে বলা হয়েছে সারা দেশ জুড়ে বছরে প্রায় ১০০০-রও বেশি এইধরণের অপরাধমুলক ঘটনা ঘটে। এমনকী বহু এমন ঘটনাও রয়েছে যা কেবল লজ্জা, ভয় এবং পারিবারিক সম্মানের কথা ভেবে অপ্রকাশিতই থেকে যায়। 

তবে আরও যন্ত্রণার বিষয় হল, অ্যাসিড আক্রান্তের জেরে প্রাণে বেঁচে যাওয়া মানুষের জীবন আরও বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে, যখন তাঁরা তাদের বিকৃত চেহারার জন্য সমাজ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে শুরু করে। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো সমাজের যারা অপরাধী তাদের অপরাধকে খাটো করে না দেখে যাদের ওপর নির্যাতন করা হল তাদেরকেই যদি সমাজ থেকে ব্রাত্য করা হয়, তাহলে কি বিষয়টি আদৌ যুক্তিযুক্ত। ভেবে দেখবেন একবার। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.