বৌদ্ধিক বিকাশের জন্য চাই শিক্ষা, তাই বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে পড়াশোনা করেছিলেন ফতিমা
ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়, Odd বাংলা: অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম জগৎজোড়া প্রসিদ্ধ হলেও এগুলি কিন্তু বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় নয়। আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় আল-কারাউইন। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়টি মরোক্কোর ফেজ়-এ অবস্থিত। মরোক্কোর পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে বসবাসকারী অভিবাসী সম্প্রদায়ের ফতিমা আল-ফিহরি-ই সেই মহীয়সী নারী তাঁর দূরদৃষ্টি এবং নিজের বিনিয়োগের জোরেই বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পথ সুগম করেছে।
তিউনেশিয়ায় জন্ম নেওয়া ফতিমার পারিবারিক একটা গৌরব ছিল, কারণ তিনি একটি সুশিক্ষিত পরিবার থেকেই উঠে এসেছিলেন। যদিও তাঁর প্রথম জীবন সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যায় না। তবে জানা যায় যে, নবম শতাব্দীর গোডা়র দি কে ফতিমা তাঁর বাবা এবং বোনকে নিয়ে নিউনেসিয়া ছেড়ে মরোক্কোর ফেজ়-এ চলে আসেন। এরপর তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পরে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি বিশাল পরিমাণ সম্পত্তির অধিকারী হয়েছিলেন। আর এই সম্পত্তিই তিনি কাজে লাগিয়েছেন স্থানীয় মানুষদের সুবিধার জন্য। স্থানীয়দের জন্য তিনি বানিয়েছেন একটি মসজিদ এবং একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ধীরে ধীরে তাঁর তৈরি এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আকার নিল বিশ্ববিদ্যালয়ের। ফতিমার জন্মভূমি তিউনিশিয়ার কায়রাওয়ান, আর সেখান থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ হল ইউনিভার্সিটি অব আল-কারাউইন।
৮৫৯ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় এবং ইউনেসকো এবং গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড দ্বারা স্বীকৃত, এই বিশ্ববিদ্যালয়টিই প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যা শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি প্রদান করত। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পড়াশোনা করতেন যেখানে তাঁরা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে ভাষা, জ্যোতির্বিজ্ঞান-এর মতো বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভ করতেন। এমনকী ফতিমা নিজেও এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করতেন। মধ্যযুগে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিই বৌদ্ধিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, অসংখ্য নামকরা পণ্ডিত ব্যক্তিও এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করেছেন বলে শোনা যায়। এমনকী পোপ সিলভেস্টা ২-ও এই বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়াশোনা করেছেন। পোপ সিলভেস্টা ২ হলেন সেই ব্যক্তি, যিনি আরবি সংখ্যা প্রবর্তন করার জন্য খ্যাতি লাভ করেছেন।
প্রসঙ্গত আল-কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয় আজও চালু রয়েছে। এর অন্যান্য আকর্ষণীয় বিষয়গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল এখানে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থাগার রয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রায় ৪০০০ পাণ্ডুলিপি। সম্প্রতি মহিলা স্থপতি আজিজা চাওউনির হাত ধরে এই গ্রন্থাগারটির পুনর্নিমাণের কাজও করা হয়েছে।
তবে ফতিমার দূরদর্শিতা এবং মানুষের বুদ্ধির বিকাশ তথা বৌদ্ধিক অগ্রগতি নিয়ে তাঁর চিন্তাধারা এবং সাধারণ মানুষের প্রতি তাঁর নিঃস্বার্থ ভালবাসাই তাঁকে বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনে রসদ যুগিয়েছিল, যা আজও সকলের মনে অনুপ্রেরণা যোগায়। বর্তমানে আল-কারাউইন-এর গ্রন্থাগারটি সাধারণ জনগনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে একটি কাঠের বোর্ডে ফতিমা আল-ফিহরির আসল ডিপ্লোমাটি প্রদর্শিত রয়েছে।
Post a Comment