মেয়ে বড় নিউরোসার্জন, তবুও ক্যাব চালিয়েই নিজের অন্ন সংস্থান করেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ, কেন জানেন!


Odd বাংলা ডেস্ক: রাত বাড়লেই এই শহর যেন খুবই অচেনা হয়ে ওঠে। বিশেষত মেয়েদের কাছে যে শহরের অলিগলিতে চলাচল করা একেবারেই নিরাপদ নয়, তা বহুবারই প্রমাণিত হয়েছে। সারা দেশের পরিস্থিতি বলছে রাতের শহরে মেয়েদের জন্য কতখানি অনিরাপদ। এমনকী পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে ধর্ষণ মতো নক্কারজনক ঘটনার পাশাপাশি আজকের দিনে বেঘোরে প্রাণটাই হারিয়ে ফেলছেন অসহায় নির্যাতিতারা। 

আর এইসব ঘটনাকে একত্রিত করলে রাতের আঁধারে ট্যাক্সি বা অ্যাপ ক্যাবে বাড়ি ফেরাও আজকাল যেন বিভীষিকা! তবে সমস্ত আঁধারের মধ্যে এক টুকরো আলো হয়ে ধরা দিলেন অ্যাপ ক্যাব চালক অশোক সিং। কোনও প্যাসেঞ্জার তাঁর গাড়িতে উঠলে নিজে নিজেই তাঁর সঙ্গে গল্প করতে শুরু করেন তিনি। কথায় কথায় বলেন তাঁর মেয়ে একজন নিউরোসার্জেন। স্বাভাবিকভাবে আজকের দিনে অচেনা কারওর সঙ্গে গল্প করা তো দূর, তাকে ২ মিনিটের জন্য বিশ্বাস করাও খুব কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে এই ক্যাব চালকের কথায় খানিকক্ষণের জন্য হলেও আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ হতে বাধ্য। 

অশোক সিং আদতে বিহারের ছাপড়ায় বাসিন্দা। বয়স ৬০-এর কাছাকাছি। তাঁর কথায় বিহারে তাঁদের সব জমি-বাড়ি, গয়না বিক্রি করে কলকাতা চলে এয়েছিলেন তাঁরা। সেই টাকায় কলকাতায় এসে একটা ট্যাক্সি কেনেন তিনি। প্রথম দিকে ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে টাকা রোজগার করে সেই টাকায় মেয়েকে লেখা পড়া শিখিয়েছেন তিনি। আজ তাঁর বড় মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে ডাক্তারা বানিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর এই যাত্রাপথ খুব একটা সহজ ছিল না, অনেকে তাঁকে বলেছিল মেয়েদের পড়াশোনা শিখিয়ে কী হবে, মেয়ে তো আর বড় হয়ে ডাক্তার হবে না! কিন্তু সেইদিনের ব্যাঙ্গকে সত্যি প্রমাণ করেছেন অশোক সিং, তাঁর বড় মেয়ে ডঃ অদিতি সিং বর্তমানে ভারতের সেরা নিউরোসার্জেনদের মধ্যে অন্যতম, বর্তমানে তিনি দিল্লির AIIMs-এ কর্মরত। শুধু তাই নয়, তাঁর ছেলেও আইআইএম কলকাতায় পড়াশোনা করে। 

কিন্তু এরপরেই স্বাভাবিকভাবে যে প্রশ্নটি এসেছিল তা হল, এত কিছুর পরেও কেন গাড়ি চালান তিনি, তেন ছেলেমেয়েদের কাছ থেকে কোনও সাহায্য নেন না তিনি। অশোক সিং কাজে বিশ্বাসী, তিনি মনে করেন কাজ ছাড়া জীবনে কিছুই নেই। তাঁর অভিধানে অবসর বলে কোনও শব্দ নেই। যতদিন তিনি সচল ততদিনই কাজ করে যেতে চান বলে জানান অশোক সিং। তাঁর কথায়, মাঝে মাঝে দিল্লিতে মেয়ের কাছে গিয়ে থাকেন অবশ্য কিন্তু যে মেয়ের কন্যাদান তিনি করেছেন, তাঁর টাকায় বেঁচে থাকাটা খুবই অসম্মানজনক তাঁর কাছে। তাই এই বয়সে এসেও নিজের অন্নের সংস্থান নিজেই করছেন এই ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.