টাইফয়েড মেরি, তার ছড়ানো রোগেই নাকি মৃত্যুবরণ করেছিল ৫০০ জন


Odd  বাংলা ডেস্ক: মেরি মেলন, সাধারণ নামের সাধারন একজন রমণী। যিনি কসময় তিনি বিভিন্ন অভিজাত পরিবারের রাঁধুনী হিসেবে যোগদান করেন। সমস্যার সূত্রপাত সেখান থেকেই। ১৯০০ সাল থেকে ১৯০৭ সাল নাগাদ তিনি নিউইয়র্ক ও তার আশপাশের কিছু এলাকায় প্রায় সাতটি পরিবারের রাঁধুনী হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। দু সপ্তাহের মধ্যে সেখানে তার খাবার খেয়ে সদস্যদের শুরু হয় পেট খারাপ, পাতলা পায়খানা, এবং জ্বর। সেখান থেকে তখন তিনি চলে যান ম্যানহাটনে। সেই পরিবারেও শুরু হয় একই উপসর্গ, এইবার একজন মারাও যায়। এইভাবে যতবার তিনি স্থান বদলাতে থাকেন ততবার বিভিন্ন জায়াগায় মরতে থাকে মানুষ।

১৯০৬ সালে অবশেষে উনি অয়েস্টার বে তে চার্লস হেনরী ওয়ারেন নামে এক ধনী ব্যাংকারের বাড়িতে কাজ নেন। সেই পরিবারের এগারোজন বাসিন্দার মাঝে ছয় জনই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়। ১৯০৭ সালে টাইফয়েড গবেষক জর্জ সোপার মত দেন যে সম্ভবত এই আইরিশ রাঁধুনী মেরী মেলন এই রোগের বিস্তারের কারন। কিন্তু মেরী ছিলেন শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু পরহমে তিনি পরিক্ষা করাতে রাজি হননি। অবশেষে নিউইয়র্ক সিটি হেলথ এসোসিয়েশন জোসেফ বেকার নামে একজন ডাক্তারকে পাঠায়, এবং বেকার পুলিশ সহযোগে গিয়ে মেরীকে কাস্টডিতে নিয়ে আসে। পরীক্ষা নিরিক্ষা করে দেখা যায় তার মলের সাথে জীবন্ত টাইফয়েডের জীবানু বের হচ্ছে। আরও পরীক্ষা নিরিক্ষার পর দেখা যায় তার পিত্তথলিতে এই জীবানুগুচ্ছ আছে যেগুলো তার কোন ক্ষতি করছে না কিন্তু সে বাহক হিসেবে ছড়িয়ে দিচ্ছে সবার মাঝে।

তারপর তিনি বেশ কিছুদিন গৃহবন্দী থাকেন। অবশেষে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি কাপড় ধোয়ার কাজে নিযুক্ত হন। কিন্তু তিনি পরে আবার পেশা বদল করে রান্নার কাজে নিযুক্ত হন। তিনি নিজের নাম বদলে রাখেন মেরি ব্রাউন। এর পরবর্তী কয়েক বছর তিনি বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেছেন, এবং প্রত্যেক জায়গাতেই টাইফয়েড মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। অবশেষে ১৯১৫ সালে নিউইয়র্কের এক মহিলা হাসপাতালে হঠাৎ টাইফয়েড মহামারী আকারে দেখা যায়। ২৫ জনের বেশি আক্রান্ত হয়, তার মাঝে দুই জন মারাও যায়। এবারও তিনি কাজ ছেড়ে পালান। কিন্তু এইবার পুলিশ তাকে ধরে ফেলতে সমর্থ হয়। এবং পুনরায় তাকে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড হসপিটালে গৃহবন্দি হিসেবে পাঠানো হয়। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি গৃহবন্দি ছিলেন।

মজার ব্যাপার হলো এই জীবাণু অন্যদের ক্ষতি করলেও টের কোনো ক্ষতিই হতো না। তিনি নিজে মারা গেছেন নিউমোনিয়াতে। মেডিকেলের ভাষায় এই ধরনের বাহককে বলা হয়ে থাকে এসিম্পটোমেটিক কেরিয়ার। এই ধরনের কেরিয়ার টাইফয়েড ছাড়াও এইচ আই ভি, এপস্টিন বার ভাইরাস এই গুলোর ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি আসলেই অপরাধী ছিলেন, তাকে কি আমরা খুনী বলতে পারি?
Blogger দ্বারা পরিচালিত.