রবার্ট ডি নেরো ও কেনেডি তাঁর বন্ধু, ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক সম্পর্কে যা জানেন না


Odd বাংলা ডেস্ক: দেখতে খুবই সাধারণ। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা লোকটা আদতে কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদীর থেকেও অনেক বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন। বিদেশে নিজের মাস্টার্স ডিগ্রি করেছিলেন। নিজের বুটিক করেছিলেন একসময়। সেই নবীন পট্টনায়কের তৈরি জামা পরে এক সময় বিটলস পারফর্মেন্স করেছে। কিন্তু বাবা বিজু পট্টনায়কের মৃত্যুর পর তাঁর মধ্যে এলো এক বিশেষ পরিবর্তন। যে নবীন জিন্স ছাড়া আর কিছু পরতেন না। তিনিই পাঞ্জাবি পরতে শুরু করলেন। আর কোনোদিন তাঁকে প্যান্ট-জামা পরতে দেখা গেল না। 
২০০০-এর এপ্রিল-মে থেকে প্রায় দু’বছর নবীনকে ওড়িয়া শিখিয়েছেন রাজকিশোর। সকাল আটটার মধ্যে চলে যেতেন নবীন নিবাসে। প্রায় প্রতিদিন। কোনও দিন দু’ঘণ্টা, কোনও দিন তিন ঘণ্টা চলত পড়ানোর পালা। “শুধু ভাষা শিক্ষা নয়, আমার কাছ থেকে রাজ্যের সংস্কৃতি, ভূগোল, সামাজিক পরিস্থিতি—যাবতীয় বিষয়ে খুঁটিনাটি খোঁজখবর নিতেন।” এক প্রায় অচেনা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিজেকে তখন তৈরি করছেন নবীন।

কিন্তু ভাষাজ্ঞানটা দু’বছরেও মোটেই পোক্ত হয়নি। “ইংরাজিতে ওড়িয়া উচ্চারণ বোঝাতাম ওঁকে। তার হ্যাপা বিস্তর। ইংরাজিতে ‘অ’ নেই। এডব্লিউই লিখে বোঝাতে হত। কোনও একটা শব্দ বললেই বলতেন, দাঁড়ান দাঁড়ান, আগে মাথায় বসিয়ে নিই,” বললেন রাজকিশোর। কিন্তু এত করেও ওড়িয়া অক্ষর বিশেষ চিনে উঠতে পারেননি নবীন। অন্তত সেই দু’বছরে। “এখন কী পারেন, কতটা পারেন বলতে পারব না, আমি যত দিন ছিলাম, তত দিন ওড়িয়া কিছুটা বুঝতে পারলেও বলা বা পড়াটা একেবারেই রপ্ত করতে পারেননি নবীন।”

তবে বোঝার ক্ষমতা দিয়েই মাঝেমধ্যে অপ্রস্তুতে ফেলে দিতেন দলের নেতাদের। এক দিন নবীনের সামনেই নেতারা ওড়িয়ায় বলাবলি করছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কোনও লাভ হয় না। যা বলি উনি তো কিছুই বোঝেন না। নবীন আচমকা বলে উঠলেন, “মু জানুচি” (আমি বুঝি)। “নেতাদের অবস্থা যদি তখন দেখতেন,” হো হো করে হেসে ওঠেন রাজকিশোর। 

নবীনকে দিয়ে প্রথম ওড়িয়ার ভাষণ দেওয়ান রাজকিশোরই। এই রাজকিশোর মিশ্রই নবীনকে ওড়িয়া শিখিয়েছেন। “প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী পারাদ্বীপে এলেন। আমি নবীনকে জোর করে বললাম, আপনি ওড়িয়ায় বক্তৃতা দিন। রোমান হরফে লিখে দিলাম বক্তৃতা। উনি বেশ কয়েক বার মহড়া দিয়ে নিয়ে তার পর সভায় পড়লেন। সবাই তো অবাক।” সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। 

কিন্তু নবীনের মতো সংস্কৃতিমনস্ক, অন্য ভাষায় যথেষ্ট দখল থাকা এক জন মানুষ ওড়িয়াটা শিখে উঠতে পারলেন না কেন? রাজকিশোর বলছেন, “দেখুন, ভাষাশিক্ষার সব চেয়ে উপযুক্ত সময় হল ৭ থেকে ১২ বছর। সেই সময়টায় যে কেউ একাধিক ভাষা দ্রুত শিখে ফেলতে পারে। বয়স বেড়ে গেলে সেই ক্ষমতাটা বেশির ভাগ লোকেরই হারিয়ে যায়।” তখন দরকার কঠোর পরিশ্রম, বারবার অভ্যাসে রপ্ত করার চেষ্টা। কাজের চাপেই হোক, বা অন্য কারণে, ওড়িয়া শেখার ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন নবীন। “আমারও আর উৎসাহ ছিল না। এক দিন ওঁকে বললাম, এ ভাবে চলে কোনও লাভ নেই। যাওয়া বন্ধ করে দিলাম নবীন নিবাসে।” 

দু’বছরের শিক্ষকতার দক্ষিণা? 'টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না,' বললেন রাজকিশোর। নবীনও সেটা জানতেন। তাই কখনও কিছু বলেননি। দুই মেয়ের বিয়েতে এসেছেন, এমনকি, রাজকিশোর পড়ানো ছেড়ে দেওয়ার পরেও। উপহার দিয়েছেন গীতা। তার পর আর যোগাযোগ নেই দীর্ঘদিন। 

ছাত্র হিসেবে ব্যবহার কেমন ছিল নবীনের? হাজার হোক মুখ্যমন্ত্রী বলে কথা! রাজকিশোর বলেন, 'একটা উদাহরণ দিই, তা হলে বুঝতে পারবেন। এক বার পড়ানোর সময় উনি সিগারেট ধরালেন। আমি বললাম, ছাত্র শিক্ষকের সামনে ধূমপান করবে, এটা ভারতীয় সংস্কৃতির রীতিবিরুদ্ধ। তক্ষনই নিভিয়ে ফেললেন। তার পর থেকে আর কোনও দিন আমার সামনে সিগারেট খাননি।'
Blogger দ্বারা পরিচালিত.