আজকের দিনেই ৩০ বছর আগে কাশ্মীর থেকে ব্রাহ্মণ পন্ডিতদের তাড়িয়ে দেওয়া হয়


Odd বাংলা ডেস্ক: ১৯৮৯ সালের সেই সময় কাশ্মীর একান্ত বিক্ষুব্ধ। ১৯৮৮ সালের ৩১ জুলাই জম্মু কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্ট (JKLF) সশস্ত্র অভুথ্যান শুরু করে ভারতের থেকে ‘স্বাধীনতার’ জন্যে। দুটি শক্তিশালী বোমার বিস্ফোরণ ঘটে কাশ্মীরে। নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। অনেক উঁচু পদে অবস্থিত হিন্দু অফিসার দের হত্যা করা হয়। টিক্কা লাল টাপলু, সভাপতি কাশ্মীর ভারতীয় জনতা পার্টি, খুন হন ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯, ৪ নভেম্বর ১৯৮৯ নীলকন্ঠ গাঞ্জু, যিনি বিচারক হিসাবে কাশ্মীরের ‘JKLF এর নেতা’ মকবুল ভাটের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন, তাকে হত্যা করা হয়। এমনকি লাসা কৌল, শ্রীনগর দূরদর্শনের প্রধানের মৃত্যু ঘটে গুপ্তঘাতকের হাতে ১৩ ফেব্রুয়ারী ১৯৯০তে । 

শ্রীনগরে অবস্থিত দুটি সংবাদমাধ্যম আলসাফা এবং শ্রীনগর টাইমস ১৬ এপ্রিল ১৯৯০ , হিজবুল মুজাহিদীন এর একটি চরমপত্র প্রকাশ করে। বিশেষত আলসাফা-এ ১৪ এপ্রিল ১৯৯০ প্রকাশিত একটি চরমপত্রে বলা হয় সমস্ত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের জম্মু ও কাশ্মীর পরিত্যাগ করতে হবে দু’দিনের মধ্যে। জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল নিযুক্ত হয়েছেন দিল্লির জরুরি অবস্থায় যিনি দিল্লির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে সঞ্জয় গান্ধীর সহযোগিতা করছেন সেই গণতন্ত্র প্রেমী জগমোহন! যদিও জগমোহন প্রচুর সৈন্য মোতায়েন করেন কাশ্মীরিদের দমনের জন্যে। কিন্তু তিনি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের নিরাপত্তার কোনো আশ্বাস দেন নি। বরং মার্চ ১৯৯০-এ, দক্ষিণ কাশ্মীরের শহর অনন্তনাগ শহরে ,স্থানীয় বিধায়কের নেতৃত্বে কাশ্মীরি মুসলিমদের একটি প্রতিনিধি দল দেখা করে ভারত সরকারের এক পদস্থ কর্মচারী হাবীবুল্লাহ সাহেবের সঙ্গে। তারা বলেন পণ্ডিতরা কাশ্মীর পরিত্যাগ করে যাচ্ছেন তাদের থামান। হাবীবুল্লাহ তাদের বলেন যদি তারা পণ্ডিতদের নিরাপত্তার আশ্বাস দেন তাহলে অবশ্যই তিনি দূরদর্শনে সম্প্রচারের ব্যবস্থা করবে। এটি রাজ্যপাল জগমোহন কিন্তু সম্প্রচার করেননি। বহু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের তাদের মুসলমান প্রতিবেশীরা থেকে যাবার জন্যে মিনতি করেন কিন্তু পণ্ডিতরা এতটাই ভীত ছিলেন যে তারা কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসেন। পরে জম্মু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ছাত্ররা একটি সার্ভে করে ২০০১ সালে তাতে দেখা যায় যারা এই সার্ভেতে অংশ নিয়েছেন তাদের মাত্র ২% সরাসরি চরমপত্র পেয়েছিলেন কাশ্মীর ত্যাগের। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের অভিযোগে যে মন্দির ধ্বংস হয়েছে বলে বলা হয় তা সরাসরি মিথ্যে বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে কাশ্মীরের মুসলমানদের মধ্যে ও সাম্প্রদায়িক শক্তি রয়েছে। সায়েদ আন্দ্রাবি জামায়াত -এ -তুলবর নেতা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিশ্বাসঘাতক বলেছেন এবং তাদের কাশ্মীর থেকে নিষ্ক্রমণের দাবি জানিয়েছেন। 

আসলে ১৯৮৮-৮৯-৯০ সালের হিংসা এবং রক্তপাত মানুষ কে বিচলিত করেছিল। ভয়ের থমথমে পরিবেশ সৃষ্টি হযেছিলো সেনানী এবং উগ্রবাদীদের মধ্যে সংঘর্ষে। বহু মুসলমান কাশ্মীরি ওই সময়ে কাশ্মীর ছেড়ে ভারতে এবং বিদেশে আশ্রয় নেন। এমনকি মেহবুবা মুফতি যিনি পরে কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন তাকে পণবন্দি করে সন্ত্রাসীরা (সঠিক তথ্য – রাবিয়া, মেহবুবার বোন অপহৃতা হয়েছিলেন – সম্পাদক)। ভারতীয় সেনা বাহিনীর প্রাক্তন মেজর এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও আমার বন্ধু মারুফ রাজা মনে করেন যে এটি পাকিস্তানী মদতপুষ্ট সন্ত্রাসিদের কৌশল ছিল। এতদসত্ত্বেও সব কাশ্মীরি পণ্ডিত কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসেননি। দুটি পন্ডিতপ্রধান গ্রামে, লাইগাঁওয়া এবং বান্দোই (উরির কাছে), এখনো প্রায় ১০০০ পন্ডিত থাকেন। আজও কাশ্মীর উপত্যকায় প্রায় চার হাজার পন্ডিত বসবাস করেন। যদিও তারা সুখেস্বস্তিতে আছেন একথা বলা যাবে না। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনীতি মানুষের সুখ স্বস্তি নষ্ট করে দেয়।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.