হিংসা-হানাহানি-দেশভাগ নয়, ২০২০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের যে বিষয়গুলির ওপর নজর দেওয়া বিশেষ প্রয়োজন


Odd বাংলা ডেস্ক: একটা দশক শেষ হয়ে আরও একটা নতুন দশকের সূচনা ঘটল। গত দশকে 'স্থায়িত্ব' ও 'পরিবেশ-বান্ধব'-এর মতো একাধিক শব্দ আমরা শুনে এসেছি, কিন্তু বাস্তবে তা কতখানি রূপায়িত করা গিয়েছে, তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে আগামী দশকে সাধারণ মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য যে বিষয়গুলির ওপর সরকারের বিশেষ জোর দেওয়া উচিত, সেগুলি হল-

১) জলবায়ু পরিবর্তন- জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সারা দেশ জুড়েই বিভিন্ন আন্দোলন শুরু হয়েছে। ২০১৮-২০১৯ সালে কেবল ভারতেই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২,৪০০ মানুষের। যার মধ্যে ছিল একাধিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়, যার মধ্যে ঝড়, বন্যায় বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে মানুষ। ভারতের মৌসম ভবনের তরফে বলা হয়েছে, ১৯০১-'১০ এবং ২০০৯-'১৮ সালের মধ্যে গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সময় থাকতে জলবায়ুর এই পরিবর্তন নিয়ে যদি ভাবনা-চিন্তা না করা হয় তাহলে এই ভারতবর্ষ আর হাতে গোনা দিনই বাসযোগ্য থাকবে।

২) ভূগর্ভস্থ জলের অপ্রতুলতা- গত দশকের শেষ দিকে দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যে ভূগর্ভস্থ জলের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। একাধিক রিপোর্টে এমনও দাবি করা হয়েছে, দিল্লি, হায়দরাবাদ, চেন্নাই এবং বেঙ্গালুরুতে ২০২০ সালের মধ্যে ভূগর্ভস্থ জল আর পাওয়া যাবে না। প্রতি বছর বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে এদেশে প্রায় ২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। আর এই বিষয়টিতে অবিলম্বে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়া উচিত।

৩) খাদ্য নিরাপত্তা- দেশের সকল মানুষেরল মুখে যাতে দু'বেলা দু'মুঠো জোটে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা সবার আগে দরকার। দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রিশান ইন দ্য ওয়ার্ল্ড, ২০১৯-এর রিপোর্ট বলছে ভারতের ১৯৪.৪ মিলিয়ান মানুষ অপুষ্টিতে আক্রান্ত, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪.৫ শতাংশ। পাশাপাশি ১৫-৪৯ বছরের মহিলাদের ৫১.৪ শতাংশই অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতায় ভুগছে। অপুষ্টিজনিত কারণে শিশু বয়সে ডাইরিয়া, নিউমোনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো রোগে শিশুরা খুব সহজেই আক্রান্ত হয়ে পড়ে, যার কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেকখানি বেড়ে যায়।

একদিকে শিশুরা যেমন খাদ্যের অপ্রতুলতায় ভোগেন, তেমনই অন্যদিকে বিপুল পরিমাণ খাবার নষ্ট হওয়ারও নজির রয়েছে। তাই খাদ্য সংরক্ষণ, এবং সকলের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিতেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ হওয়া উচিত।

৪) নারীর সুরক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ণ- ভারতবর্ষে নারীদের সুরক্ষা নিয়ে গত দশকের শেষে দেশজুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। ২০১৯ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো ডেটা ২০১৭ অনুসারে, ২০১৭ সালে মহিলাদের ওপর অপরাধমুলক ঘটনা ঘটেছে ৩,৫৯,৮৪৯টি। ২০১৬ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৩.৩৮ লক্ষ, ২০১৫ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ৩.২ লক্ষ। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে দিনে দিনে মহিলাদের ওপর এই অপরাধপ্রবণাতা ক্রমেই বাড়ছে। 

মহিলাদের ওপর অপরাধমুলক ঘটনার তালিকায় শীর্ষে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে মহারাষ্ট্র এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। মেয়েদের জন্য কেবল মোমবাতি মিছিল আর প্রতিবাদ না করে, সরকারের উচিত এমন আইন প্রবর্তন করা যাতে মহিলাদের ওপর অপরাধপ্রবণতা কমে।

৫) মাদকাশক্তি- ২০১৯ সালে প্রকাশিত মিনিস্ট্রি অব সোশ্যাল জাস্টিস অ্যান্ড এমপাওয়ারমেন্ট-এর রিপোর্ট অনুসারে মাদকাসক্তি এদেশে এক বিরাট আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে মদ্যপানে আসক্তির একটা প্রবণতা বিশেষভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে। ১০ বছর থেকে ৭৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ১৪.৬ শতাংশের মধ্যে মদ্যপানে বিরাট আসক্তি রয়েছে বলে জানিয়েছে ওই রিপোর্ট। সবচেয়ে বেশি মদ্যপানে আসক্ত যেসব রাজ্যগুলি সেগুলি হল- ছত্তিশগড়, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, ত্রিপুরা, অরুণাচলপ্রদেশ এবং গোয়া। 

শুধু তাই নয়, ২.১ শতাংশ মানুষ হিরোইন-এর মতো মাদকে আসক্ত। অন্যদিকে ৮.৬ লক্ষ মানুষ নিজেদের শরীরে ড্রাগ ইনজেক্ট করে। এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি নিক্ষেপ করা বিশেষ প্রয়োজন।

৬) বর্জ্য ব্যপস্থাপনা- সিভিল ডিজিটাল-এর তরফে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ভারতবর্ষ প্রতি বছর ৪২ মিলিয়ন টন বর্জ্য উৎপাদন করে। আর মাথাপিছু বর্জ্যের পরিমাণ প্রতি বছর ১.৩ শতাংশ করে বাড়ছে। দ্রুত শহরায়ণ এবং বাড়তে থাকা জনসংখ্যার কারণে গার্হস্থ্য, রাসায়নিক এবং শিল্প বর্জ্যের পরিমাণও বাড়তে শুরু করেছে, যা আদতে একটা বিরাট সমস্যা সৃষ্টি করছে এবং একাধিক রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি করছে। সরকারের উচিত এইসমস্ত বিষয়ে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.