ঠিকঠাক ঘুম আসেনা রাতে? জিভে চর্বি জমাটাও একটা কারন হতে পারে


Odd বাংলা ডেস্ক: শরীরে যেমন চর্বি জমে তেমনি জিহ্বাতেও চর্বি জমতে পারে। আর সেখান থেকে হতে পারে ঘুমের সমস্যা। ‘অবস্ট্রাক্টিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ)’ রোগে ঘুমের মধ্যে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস আটকে যায়, যার ফলাফল হতে পারে প্রাণঘাতি। ওজন কমানো এই রোগের একটি কার্যকর নিরাময়। ‘আমেরিকান জার্নাল অফ রেসপিরাটরি অ্যান্ড ক্রিটিকাল কেয়ার মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় জানানো হয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র উপসর্গগুলো এড়ানো সম্ভব জিহ্বায় চর্বি কমানোর মাধ্যমে। 

 ঘুমের মধ্যে থেমে থেমে শ্বাস নেওয়া হচ্ছে স্লিপ অ্যাপনিয়া’র লক্ষণ। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকা আর সারা রাত ঘুমের পরেও সকালে ক্লান্তি বোধ করলে হতে পারে সেটা ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র লক্ষণ। স্থূল ব্যক্তিদের মুখে ও জিহ্বাতেও চর্বি থাকে। ঘুমের সময় গলা ও চিহ্বার পেশি যখন শিথিল হতে থাকে তখন এই চর্বি শ্বাস-প্রস্বাসে বাধা তৈরি করে। ফলে ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার সমস্যাসহ থেমে নিঃস্বাস পড়ে। অতিরিক্ত ওজনধারী রোগীদের শ্বাসতন্ত্রের উপরিভাগে ওজন কমানোর কারণে কী প্রভাব পড়ে তা জানতে গবেষকরা ব্যবহার করেন ‘ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেইজিং (এমআরআই)। দেখা যায়, জিহ্বায় চর্বির মাত্রা কমানো ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য়ের তীব্রতা কমানোর অন্যতম প্রধান উপায়। গবেষণার অন্যতম গবেষক, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভেনিয়া’র রিচার্ড সোয়াব বলেন, “স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নিয়ে কাজ করে এমন অধিকাংশ চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ কখনই তাদের চিকিৎসায় জিহ্বায় থাকা চর্বি কমানোর কথা বিবেচনায় আনেন না। এখন যেহেতু আমরা জানতে পারলাম যে জিহ্বার চর্বিও একটি ঝুঁকি এবং তা কমাতে পারলে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র ঝুঁকি কমে, আমাদের ধারণা আমরা এই রোগের চিকিৎসার এক নতুন দিক সামনে এনেছি যা আগে বিবেচনার বাইরে ছিল।” ২০১৪ সালে সোয়াবের নেতৃত্বাধীন এক গবেষণায় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ আছে ও নেই এমন কয়েকজন স্থূলকায় রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেই গবেষণায় দেখা যায়, যাদের ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ আছে তাদের জিহ্বা বেশ বড় এবং তাদের জিহ্বায় চর্বির মাত্রা যাদের ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নেই তাদের তুলনায় বেশি। গবেষকদের পরের লক্ষ্য ছিল জিহ্বায় চর্বি কমানো হলে রোগের তীব্রতায় তারতম্য আসে কি-না সেটা পর্যবেক্ষণ করা। 


তারই প্রেক্ষাপটে এবারের গবেষণা, যাতে অংশ নিয়েছেন ৬৭ জন মানুষ যারা মৃদু থেকে তীব্র মাত্রার ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য় ভুগছেন এবং ‘বডি ম্যাস ইনডেক্স’য়ের মাত্রা ৩০-এর বেশি। নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস আর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা ছয় মাসে ওজন কমিয়েছেন গড়ে ১০ শতাংশ। গবেষকদের করা ‘স্লিপ স্টাডি’ অনুযায়ী, গড় হিসেবে ওজন কমানোর পর অংশগ্রহণকারীদের ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য়ের তীব্রতা কমেছে ৩১ শতাংশ। ওজন কমানোর প্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীদের খাদ্যনালী ও পেটের ‘এমআরআই স্ক্যান’ করা হয়। এই তথ্যের পর্যালোচনার মাধ্যমে ওজন কতটুকু কমেছে এবং শ্বাসনালীর ওপরের অংশের গড়নে কী পরিবর্তন এসেছে যার কারণে ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ কমেছে তা নির্ধারণ করেন গবেষকরা। দেখা যায়, জিহ্বায় চর্বির পরিমাণ কমাই ছিল ওজন কমানো আর ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ তীব্রতা কমার মধ্যকার সম্পর্ক। এছাড়াও গবেষকরা আরও দেখেন, ওজন কমার কারণে চোয়ালের ‘টেরিগয়েড’ নামক একটি পেশি, যা চিবানো নিয়ন্ত্রণ করে, তার আকার ছোট হয়েছে এবং শ্বাসনালীর চারপাশের পেশির ঘনত্ব কমেছে। উভয়ই ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’র তীব্রতা কমাতে সহায়ক। তবে জিহ্বার চর্বি কমার উপকারিতার মতো কার্যকর হয়নি। তাই গবেষকদের বিশ্বাস, জিহ্বার চর্বি কমানো ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’য়ের চিকিৎসায় নতুন অধ্যায়ের সুচনা করবে।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.